Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার পানি বাড়ছে

নদী ভাঙনে নি:স্ব হচ্ছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২০, ১১:১২ পিএম

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত তিন চারদিন দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। সেই সাথে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়ছে পদ্মা ও যমুনার পানি। এ ছাড়া সাগর উত্তাল এবং অমাবশ্যার অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে বন্যার পানিও সাগরে নামতে পারছে না। এতে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় প্লাবিত ৩৩ জেলার পানি নামতে না নামতেই আবারও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। এতে ভিটেমাটি সব হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। আড়িয়াল খা নদীর ভাঙ্গনে মাদারীপুরে সদর উপজেলার শির খাড়া ইউনিয়নের ঘুনসী গ্রামটি এখন বিলীন হওয়ার পথে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে পদ্মার ভাঙনও অব্যাহত আছে।
বন্যা প‚র্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। এটা আগামী ২৪ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া গঙ্গা-পদ্মার পানি বাড়ছে। যা আগামী ২৪ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়তে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি।
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, বন্যার পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুরে শিবচর ও মাদারীপুর সদর উপজেলার আরো বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে হুহু করে আবারো পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বাড়ায় শিবচরের পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁর গত ২৪ ঘন্টায় বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিটিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার বন্দরখোলা চরজানাজাত কাঠালবাড়ী সন্নাসীরচর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ওইসব এলাকার প্রায় আট হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে আড়িয়াল খা ও কুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখারা ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার শির খাড়া ইউনিয়নের ঘুনসী গ্রামটি আড়িয়াল খা নদীর ভাঙ্গনে এখন বিলীন হওয়ার পথে। আবার পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে এক হাজার ৫০ জন, চরজানাজাতে ১৮শ’ ৭০ জন, বন্দরখোলা ইউনিয়নে ২৭শ’ জন, মাদবরেরচরে নয়শ’ এবং সন্ন্যাসীরচরে ১৬শ’সহ মোট আট হাজার ১২০ জন পানিবন্দি হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে আবার বাড়ছে। যেকোনো সময় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। পানি বাড়তে থাকায় জেলাটিতে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙনও তীব্র রূপ নিচ্ছে।
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, উজানের ঢল ও অমাবস্যার প্রভাবে জোয়ারে চাঁদপুর শহরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পদ্মা-ঘেনার পানি এখনো বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, টাঙ্গাইলে চলমান বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পৌরসভাও রয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় পৌনে ৩শ’ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের সীমান্ত নদ-নদীর পানি আবার বাড়ছে। সিলেটের ছয়টি উপজেলা হয়ে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদী। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী বরাক মোহনা কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখ। নদীটির পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় চারটি স্থানে। সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্ট থেকে বিয়ানীবাজারের শেওলা, মৌলভীবাজারের শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পর্যন্ত চারটি পয়েন্টে পানি পরিমাপ করা হয়। ১৯ আগস্ট কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি কমছিল। গতকাল সকাল থেকে দুটো পয়েন্টে পানি বাড়ছে। অমলসিদ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৫৪ মিটার থেকে পানি বেড়ে ১৩ দশমিক ০১ মিটার দিয়ে কুশিয়ারার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। উৎসমুখে পানি বাড়ায় শেওলা পয়েন্টে ১০ দশমিক ৪৪ মিটার থেকে পানি বেড়ে ১০ দশমিক ৪৭ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবাহিত দীর্ঘতম নদী সুরমার উৎসমুখ হিসেবে পরিচিত কানাইঘাট পয়েন্টেও পানি বাড়ছে। শুক্রবার ১০ দশমিক ২১ মিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সকালে ১০ দশমিক ৪৫ মিটার থেকে বেড়ে দুপুরে ১০ দশমিক ৫৫ মিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সুরমা নদীর সিলেট শহর পয়েন্টে একই সময় পানি বেড়ে ৮ দশমিক ৫৬ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা সিলেটের সীমান্ত নদ-নদী হিসেবে পরিচিত সারী, লোভা ও ধলাই নদের পানিও বাড়ছে। লোভা নদীর পানি কানাইঘাটের লোভাছড়া পয়েন্টে ১১ দশমিক ৩৫ মিটার থেকে বেড়ে আজ দুপুরে ১১ দশমিক ৭০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সমেয় সারী নদীর জৈন্তাপুর উপজেলার সারীঘাট পয়েন্টে পানি ৯ দশমিক ০৫ মিটার থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের বৃষ্টি প্রবণ চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা একটি পাহাড়ি ঝরণার উৎসমুখ হচ্ছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদ। সেখানেও পানি বাড়া ও কমার চিত্র দেখা দিয়েছে। ধলাই নদের ইসলামপুর পয়েন্টে পানি বেড়ে গতকাল ৯ দশমিক ০৪ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ