Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে একঘরে হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২০, ৭:২৩ পিএম

দুই বছর আগে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো। এরপর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে মিত্র দেশগুলোর সাথে দূরত্ব বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটা একঘরে হয়ে পড়েছে, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তা স্পষ্ট হয়ে উঠল।

ইরানের উপর অস্ত্র বিক্রিসহ যাবতীয় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার এক্তিয়ার মানতেই প্রস্তুত নয় প্রায় কোন দেশই। ইরানের উপর জাতিসংঘের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা নতুন করে চালু করতে মরিয়া ট্রাম্প প্রশাসন কোনো দেশের সহযোগিতা পাচ্ছে না। রাশিয়া ও চীন তো বটেই, সেইসঙ্গে ফ্রান্স ও জার্মানিও এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে। এমনকি ট্রাম্পের অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারও ‘সংহতি’ দেখাতে প্রস্তুত নয়।

ইরানকে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সার্বিক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে বাকি দেশগুলো ওয়াশিংটনের যুক্তি মানতে প্রস্তুত নয়। তাছাড়া ইরান সরাসরি চুক্তি লঙ্ঘন করছে, এমন অভিযোগও ধোপে টিকছে না। বরং ওয়াশিংটনের বেপরোয়া আচরণের কারণেই ইরান বাকি দেশগুলির উপর চাপ বাড়াতে কিছু প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরান নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া চালিয়েছে।

এমনই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসন নিরাপত্তা পরিষদে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ বানচাল হয়ে গিয়েছিল। এবার সে দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রচেষ্টাও বাধার মুখে পড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাংবাদিকদের বলেন, ইরানকে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ না বাড়ানো এক মারাত্মক ভুল। ‘একতরফা ও বোকামিতে ভরা’ পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেন।

সম্প্রতি, ন্যাটো মিত্র জার্মানি থেকে সেনা সরানো নিয়ে তাদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি ইইউয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ফলে সমগ্র ইউরোপিয় ইউনিয়নেই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণ যোগ্যতা কমে গেছে। এর আগে, চীনের সাথে বিরোধিতার জেরে করোনা সংকটের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুদান বাতিল করে সারা বিশ্বেই সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন কোণঠাসা অবস্থা সম্পর্কে তীর্যক মন্তব্য করতে ছাড়েনি ইরান। জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাফানচি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের এক স্থায়ী সদস্য শিশুর মতো আচরণ করছে। আন্তর্জাতিক সমাজের অন্যান্য সদস্যরা সে দেশকে উপহাস করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের তিন উচ্চপদস্থ নেতা চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, যে সমস্যা সত্ত্বেও সে দেশ পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে চায়। আমেরিকায় নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে সেই চুক্তি বেঁচে যাবে বলে তারা আশা করছেন। উল্লেখ্য, ইরান চুক্তির সব ধারা আবার মানলে বাইডেন আবার পরমাণু চুক্তিতে অংশ নেবার পক্ষে। সেইসঙ্গে তিনি অবশ্য ইরানের অন্যান্য ‘আপত্তিকর’ কার্যকলাপ কমাতে চাপ সৃষ্টি করতে চান। সূত্র: রয়টার্স, ডিপিএ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ