পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ভাঙনরোধে নেয়া হচ্ছে না যথাযথ পদক্ষেপ
আবারও বন্যার কবলে পড়ছে দেশ। চলতি মাসের শেষে আসতে পারে সেই বন্যা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন আভাস দিয়েছে। এতে করে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মনে নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দেশের ৩৩ জেলার চলমান বন্যার পানি নামতে না নামতেই আবারও পানি বাড়ছে। এতে বন্যার্তরা চেখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলেও তারা এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
বন্যার পানি বাড়লেই তীব্র হয় নদীভাঙন। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। যমুনা, তিস্তা ধলেশ্বরীসহ আরও অনেক নদী ভাঙছে। নদীভাঙনের ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকে এখন সর্বহারা। তাদের পুনর্বাসনে সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া নদীভাঙন রোধেও কোনো কোনো স্থানে বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলা ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তাই চতুর্থ দফা বন্যার কথা শুনে নদী তীরের মানুষের দুশ্চিন্তায় চোখের ঘুম চলে গেছে।
প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে লাখ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেতের ফসল, ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট প্লাবনভ‚মির প্রায় ৫ শতাংশ প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের শিকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৪৮৯টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৯৪টি উপজেলায় নদীভাঙন ঘটছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এর সঙ্গে আরও ৫৬টি উপজেলার সন্ধান পেয়েছেন যেখানে নদীভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে প্রায় ১০০টি উপজেলায় নদীভাঙন ও বন্যার দুর্ভোগ প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি উপজেলা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
প্রবল স্রোতে পদ্মা নদীতে তীব্রভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ১৮ আগস্ট রাতে শিবচর উপজেলার কাজীসুরা ২৬ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম-সাইক্লোন সেন্টারটি পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর আগে পদ্মার ভাঙনে শিবচরে কয়েকদিনের ব্যবধানে দুটি স্কুল বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৮ জুলাই উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নে চরাঞ্চলের বাতিঘর খ্যাত এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এরপর ২৩ জুলাই কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের একটি তিনতলা বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম-সাইক্লোন সেন্টার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তীব্র স্রোতে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ-রুটের শিমুলিয়া প্রান্তের চার নম্বর ফেরিঘাট ভেঙে যায়। দুই নম্বর ঘাটেও ভাঙন দেখা দেয়।
এ ছাড়া ১৮ জুলাই চাঁদপুরে ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তিনতলা বিশিষ্ট সদ্য নির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল-কাম-সাইক্লোন সেন্টারটি। মাত্র দুই মাস আগে দৃষ্টিনন্দন এ ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এ ছাড়া চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের হাইমচর উপজেলার মহজমপুর ও চরভাঙা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পানির তোড়ে ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় বাঁধের অভ্যন্তরের ঘরবাড়ি আবাদি জমি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরান বাজার হরিসভা এলাকায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২৫ মিটার এলাকায় আবারও ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছু এলাকা মেঘনায় তলিয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে পুরো এলাকা। শরিয়তপুরে জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ৭০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছে। আর কুন্ডের চর ইউনিয়নের সিডার চর এলাকায় ভাঙনে ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এখনও প্রবল স্রোতের কারণে বিভিন্ন স্থানে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া শরীয়তপুরের আরও ১৪টি স্থানে ভাঙন রয়েছে। এসব স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শিবচরের বন্দরখোলা এলাকার আবুল কাসেম জানান, পানি বাড়ার সাথে সাথে গত কয়েকদিন ধরে পদ্মায় ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। আমাদের জমি-জমা, ঘর-বাড়ি সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শত শত পরিবার ঠিকানাহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পানি বাড়া অব্যাহত থাকলে ভাঙন বাড়বে এবং আরও অনেকে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হবে। তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত নদীভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ ছাড়া যারা সব হারিয়ে রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছে তাদের পুনর্বাসনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর, জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ, টাঙ্গাইলের এলাসিন এবং মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা পয়েন্টে পানি আগামী তিন দিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া, পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানিও বাড়তে পারে। ফলে এর ধারাবাহিকতায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকুল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বাড়তে পারে। গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি আগে বাড়তে পারে। দেশে কয়েকদিনের ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বাড়ছে নদী-খাল-বিলের পানি। দেশের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও কিছু অঞ্চলে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় এমন বৃষ্টিপাত বন্যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আসন্ন বন্যাও মোকাবিলা করার জন্য সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে গুটিয়ে না ফেলে আবারও প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যেসব বাঁধ ভেঙে গেছে, নতুন করে পানি বাড়ার আগেই যদি তা মেরামত করা সম্ভব হয়, জরুরিভিত্তিতে সেসব বাঁধ নির্মাণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বন্যার্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষের জানমাল রক্ষায় যে কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় পুনর্বাসনের কাজে নেমে পড়ার জন্যও বলা হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আগে থেকে প্রস্তুত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ও নদী বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদীভাঙন রোধ করতে হলে প্রতিটি নদী সম্পর্কে সঠিক সমীক্ষা থাকতে হবে। পদ্মার মতো ভয়ঙ্কর আগ্রাসী নদীর ভাঙন ঠেকাতে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা যমুনা বা ব্রহ্মপুত্রের জন্য প্রয়োজন হবে না। আবার তিস্তার জন্য অন্য রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য কোন নদীর গতি কেমন, মাটির ধরন কেমনÑ এসব বিষয় সামগ্রিক সমীক্ষা থাকতে হবে। তারপর ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। নয়তো প্রতিবারের মতো নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে, আর এ প্রকল্পের টাকাও পানিতে ভেসে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।