Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৩৩ জেলার ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

সিপিডির সংলাপ বন্যার স্থায়িত্বের কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

একদিকে করোনা, অন্যদিকে বন্যার স্থায়িত্ব বাড়ার কারণে দেশে দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, চলতি মৌসুমে দুই দফা বন্যার মুখোমুখি হয়েছে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল। এতে ৩৩ জেলার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ দুর্গতিতে পড়েছে; যা বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডেলটা পরিকল্পনা অনুযায়ী সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি। পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। গতকাল বুধবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)‘র উদ্যোগে ‘সা¤প্রতিক বন্যা: ক্ষয়ক্ষতি এবং করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডিরি সিনিয়র রিচার্স অ্যাসোসিয়েট কামরুজ্জামান।

সিপিডি’র সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের উপস্থাপনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান। বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, সিপিডি’র ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
সিপিডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের বন্যা ৩৫ দিনের বেশি সময় ধরে চলমান রযেছে। ফলে পুরো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে যতটুকু পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, ৪২ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ৭৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সমপরিমাণ গবাধিপশু, ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৯ হেক্টর কৃষিজমিও ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ১৬ হাজার ৫৩৭ হেক্টার জমির গাছপালা, ৮১ হাজার ১৭৯টি টিউবওয়েল এবং ৭৩ হাজার ৩৪৩টি ল্যাটিন এবং ১ হাজার ৯০০ এর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এবারের বন্যায় যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এই ত্রাণ কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতা বাড়ানোও প্রয়োজন। ত্রাণ বিতরণের স্থানীয় এনজিওগুলোকে সংযুক্ত করার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতায় সরকার সবধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বন্যায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও হেল্পলাইন খোলা হয়েছে, যাতে করে যেকোনো মানুষ প্রয়োজনে ত্রাণ সহায়তা পেতে পারেন। তিনি বলেন, বন্যায় ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না- এই কথা মোটেও সঠিক না।

ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রতিবছর জুলাই আগস্ট মাসে বন্যা হবে, বর্ষা হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। এটা নিয়ে হইচই করলে চলবে না। এবারের এই পানিকে বন্যা বললে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটা হয়নি। এটা স্বাভাবিক বর্ষা। কারণ বাংলাদেশের ১৬/১৭ শতাংশ এলাকায় সারাবছর পানি থাকে। আর বন্যার সময় আষাঢ, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে তা আরও ১৬/১৭ শতাংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এটাও স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বর্ষা না হলে আমাদের কৃষি জমির উর্বরতা থাকবে না। মৎস উৎপাদন হবে না।

তিনি বলেন, আগস্টের ৩০ তারিখ পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকবে। সেটা যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়ায় তাহলে বিপদজনক হবে। বন্যা নিয়ে আমরা প্রতিবছর একই কথা বলি। কিন্তু এইসব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা নেই। খালের ওপর কালভার্ট বন্ধ করে সেতু বানাতে হবে। সেতুগুলো এমনভাবে বানাতে হবে যাতে সেতুগুলোর নিচ নিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে। রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর এমনভাবে ব্রিজ নির্মাণ করছে তার নিচ দিয়ে নৌকা চলছে না। এগুলো ফৌজদারি অপরাধ। জমির ওপর তিন চার ফুট পানি হবে এটা স্বাভাবিক। গঙ্গা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার কয়েক ফুট নিচে রয়েছে। আর চরের জমিও তো ডুববে এটাই স্বাভাবিক।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এবারের বন্যা স্থায়িত্বের দিক থেকে ১৯৮৮ এবং ২০০৪ সালের বন্যার মতো। এই বন্যায় ৩৩টি জেলার ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে জামালপুর চাঁদপুর, লালমনিরহাট ও সিরাজগঞ্জ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তা যে খাদ্য ও নগদ সহায়তা দিচ্ছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই সরকারি সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে।

প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে অনেক সময় চাল ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। সরকারের সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, বন্যায় কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কী কী জিনিস আমদানি করতে হবে অথবা আমদানি করার প্রয়োজন পড়বে কি না- তার পদক্ষেপ সরকারকে আগে থেকেই নিতে হবে। ডিসেম্বর নাগাদ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সব বিভাগের সমন্বয়ে ডেলটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তত্ত্বাবধায়ক সারকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশিদা কে চৌধুরী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবহাওয়ার সহিষ্ণু ফসল ও কৃষি উৎপাদনে জোর দেন কৃষি উন্নয়ণ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিপিডি

২৭ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ