Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গোপালগঞ্জে সাড়ে ৬ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ৯:২৮ এএম

বিল বেষ্টিত জেলা গোপালগঞ্জ। ধানের পর এ জেলার অধিবাসীদের ২য় অর্থকারী ফসল মাছ। এ বছরও ধার দেনা করে মৎস্যচাষীরা মাছ চাষ করেন। পুকুরে মাছে উৎপাদন ভাল হয়েছিলো। কিন্তু বন্যার হানায় গোপালগঞ্জের সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছ ভেসে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এতে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্যচাষীরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার ৫ উপজেলার ৬ হাজার ৬ শ’ ৮১ টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ৫ হাজার ৫ শ’ ৭৬ জন মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পুকুরের মোট আয়তন ১ হাজার ৭ শ’ ৩৩ হেক্টর। ভেসে গেছে পুকুরের ৩ হাজার ২ শ’ ১২ টন মাছ। এ ছাড়া পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৬ কোট ৭৯ লাখ টাকার। সর্বমোট এ জেলায় মৎস্য সেক্টরে বন্যায় ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছে।
ওই অফিস সূত্র আরো জানিয়েছে, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৪৯১ টি, টুঙ্গিপাড়ায় ৮৮৮ টি, কাশিয়ানীতে ৮৬৭টি , মুকসুদপুরে ৭৮১টি ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭১৪টি পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে।
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, আমার ইউনিয়নের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস মৎস্য চাষ। তারা নিজের পুঁজি, মহাজন, এনজিও, ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে মাছ চাষ করেন। পুকুরে মাছে উৎপাদন ভাল হয়েছিলো। বন্যায় আমার ইউনিয়নের অন্তত ২ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার ইউনিয়নে মৎস্য সেক্টরে কমপক্ষে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকার প্রনোদনা না দিলে মাছ চাষীরা ঘুঁড়ে দাড়াতে পারবেন না। আমি মৎস্য চাষীদের সহায়তা করার দাবি জানাচ্ছি।
কোটালীপাড়া উপজেলার মাছবাড়ি গ্রামের মৎস্য চাষী দেবদাস সরকার (৬০) বলেন, আমি সব পুঁজি দিয়ে আমার ৬ বিঘার পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম। বন্যায় পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমি সরকারের কাছে সহায়তা চাই।
একই গ্রামের মৎস্য চাষী কমলা সরকার (৪৫)বলেন, ধার দেনা করে জমি কিনে এ বছর ৬ বিঘা জমিতে পুকুর কেটে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে। পানিতে বাড়ি ডুবেছে। সবজি নষ্ট হয়েছে। গরু বাছুর নিয়ে কষ্টে আছি। এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে মানুষ করবো, কিভাবে সংসার চালাবো, কিভাবে ধার দেনা শোধ করবো, সে দুশ্চিন্তায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। এ অবস্থায় সরকার আমাদের পাশে দাড়াবে, এটাই প্রত্যাশা করছি।
একই গ্রামের মৎস্য চাষী উদ্ধব বিশ্বাস ( ৪৬) বলেন, মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে আমি সোয়া বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছিলাম। পুকুরে ১ লাখ টাকার মাছ ছিলো। বন্যা শুরু হলে পুকুরপাড়ে নেট দিয়ে ঘিরে দেই। কিন্তু পানির ¯্রােতে নেট ছিড়ে মাছ বের হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুশিয়ে নিতে আমি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, নি¤œজলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় মৎস্য সেক্টরে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করেছি। এটি মৎস্য অধিদপ্তরের মধ্যেমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীদের প্রনোদনা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুশিয়ে নিতে মৎস্য চাষীকে পুকুরে বেশি বেশি করে খাবার দিতে বলছি। এছাড়া পুকুরে ডাল ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে করে মাছ পুকুরে আশ্রয় নেবে। মৎস্য চাষী কিছুটা হলেও ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন। # মোঃ অহেদুল হক,১৯.০৮.২০২০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যায় ক্ষতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ