পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে পুঁজিবাজারে ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ঈদের আগ থেকে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ফিরতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে সবাই খুশি। বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মতে, নতুন কমিশনাররা বিনিয়োগকারীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে নিয়ম-কানুন মেনে করপোরেট গভর্ন্যান্সে জোর দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং অর্থ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় বাজারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরেছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, বাজার অনেক নেমে গিয়েছেলো সেখান থেকে কিছুটা উঠেছে। বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশা দেখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় থেমে যাওয়া অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো গতিশীল হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। শঙ্কা কাটতে শুরু করেছে ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি দীর্ঘদিন পর ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। যদিও বিশ্ব অর্থনীতিতে চলছে মন্দাভাব। এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ না বাড়লে দেশে সার্বিক বিনিয়োগ বাড়বে না। তাই মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে যেকোনো মূল্যে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসা এবং বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। একই সঙ্গে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হলে দেশের অর্থনীতির সবগুলো সূচক সচল হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
দীর্ঘদিন থেকে বিনিয়োগকারীদের দাবি ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের। তবে অনেক পরে হলেও পরিবর্তন হয়েছে। গত ১৪ মে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়। আর তার স্থলাভিষিক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডীন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। করোনা মহামারির মধ্যে যোগদান করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং গতিশীলতা আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন। তার গতিশীল নেতৃত্বে ও নানামুখী পদক্ষেপে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় পরিণত হচ্ছে পুঁজিবাজার। মহামারি প্রকোপ চললেও আতঙ্ক দূরে ঠেলে ইতোমধ্যে স্বাভাবিক হয়েছে দেশের জনজীবন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। দেখা মিলছে বড় উত্থানের। একই সঙ্গে গতি বাড়ছে লেনদেনেও।
দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একাধিকবার বিনিয়োগকারীদের আস্থা রাখতে বলেছেন। অবশেষে তার প্রতিফলন দেখছে বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান পেয়েছি এবং একটা টিমও পেয়েছি। আমি মনে করি পুঁজিবাজার আগের যে অবস্থা ছিল সেটা থেকে বেরিয়ে আসবে। ধীরে ধীরে অর্থমন্ত্রীর কথা প্রতিফলন দেখাচ্ছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
এদিকে করোনার প্রভাবে বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে এর প্রভাব নেই পুঁজিবাজারে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ চিত্র উঠে এসেছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ভালো বাজার নির্ভর করবে অর্থনীতির ওপর। অর্থনীতি ভালো হলে বাজারও ভালো হবে। পাশাপাশি আইপিও’র মাধ্যমে বিএসইসি যদি ভালো শেয়ারের যোগান দিতে পারে তবে বাজার টেকসই হবে। প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, সার্বিক অর্থনীতি ভালো হলে পুঁজিবাজারে আশার আলো দেখা দিতে পারে। তবে বেশি আশা করা ঠিক হবে না। বর্তমান বিএসইসি টিম উপযুক্ত মার্কেট হিসেবে গড়ে তুলবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। তবে বাজারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরেছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে প্রতিদিনই বাজারে টার্নওভার বাড়ছে। গত রোববার ১৩শ’ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার হয়েছে। গতকাল বাজার কিছুটা সংশোধন হলেও টার্নওভার ছিল ১৪শ’ কোটি টাকার বেশি। আগামী দু’একদিনেই টার্নওভার ১৫শ’ কোটিতে যাবে। ধারাবাহিকভাবে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ কোটি টাকা টার্নওভার হলে স্থিতিশীল বাজার হিসেবে ধরে নিবো। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইনডেক্স ৫শ’ ক্রস করবে। বিদেশিরা আসার সময় হয়ে গেছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতোদিন যে আস্থার ফাটল ছিল, তা ফিরছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সবাই বাজারে ফিরছে বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত।
সূত্র মতে, স¤প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে খারাপ আইপিও তালিকাভুক্ত হবে না বলেও বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো যেন কয়েক ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারে সে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এর মাধ্যমে একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরির কথা বলেছেন। এছাড়া শৃঙ্খলা ফেরাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২২টি কোম্পানির ৬১ পরিচালককে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ নিয়ে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্বের মতো নির্ধারিত সময়ে কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের (পিএসই) সকল কার্যক্রম এবং এজিএম ও ইজিএম করার নির্দেশ দিয়েছে। এসব পদক্ষেপে কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা বাড়ছে।
এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে গতকাল পুঁজিবাজারে মূল্য সূচকের বড় উত্থানের মাধ্যমে লেনদেন শুরু হলেও শেষ পর্যায়ে তা বড় পতনে রূপ নিয়েছে। লেনদেন শুরু হতেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক প্রায় একশ’ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েছিল, তবে ভোজবাজির মতো বাজারের সেই চিত্র উল্টে লেনদেন শেষে সূচকটির পতন হয়েছে প্রায় একশ’ পয়েন্ট।
ঈদের আগের শেষ সপ্তাহ থেকেই একের পর এক বড় উত্থান হওয়া শেয়ারবাজারে গতকাল লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮১ পয়েন্ট বেড়ে যায়, যা লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ পয়েন্ট।
মূল্য সূচকের এমন উল্লম্ফনের মাধ্যমে লেনদেন শুরু হলেও আধাঘণ্টার মধ্যে সূচক নিম্নমুখী হতে থাকে। বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে দরপতন হতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় রীতিমতো ধসে পড়ে মূল্য সূচক।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৭৪ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৭৮৫ পয়েন্টে নেমেছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৬১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬ পয়েন্টে দাড়িয়েছে।
এমন বড় পতনের বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, সূচকের এমন বড় পতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ কয়েক দিন ধরেই একের পর এক বড় উত্থান হচ্ছে। যখন একের পর এক বড় উত্থান হবে, তখন যে কোনো মুহ‚র্তে বড় পতন হবে এটাই নিয়ম।
তিনি বলেন, টানা উত্থানের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশ বেড়ে গেছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নেয়ার জন্য বিক্রির চাপ বাড়ান। বড় ধরনের বিক্রির চাপ আসায় কিছুটা দরপতন হয়েছে। তবে আশার কথা সূচকের বড় পতন হলেও লেনদেন ১৪শ’ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। তার মানে বিনিয়োগকারীরা বর্তমান দামে শেয়ার কিনতে আগ্রহী এবং বাজার তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠেছে।
এদিকে মূল্য সূচকের বড় পতনের সঙ্গে দরপতনের খাতায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১১৮ প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২২৮টির এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অথচ লেনদেনের শুরুতে প্রায় তিনশ প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়ে যায়। বিপরীতে দাম কমে ৫০টির।
ভোজবাজির মতো মূল্য সূচক উল্টে গেলেও এদিন ডিএসইতে লেনদেনের গতি বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪০৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ৩৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৫৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এর আগে গত ২৮ জুন ইউনিলিভার বহুজাতিক কোম্পানি গø্যাক্সোস্মিথক্লাইন কেনায় ডিএসইতে দুই হাজার ৫৪৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে গø্যাক্সোস্মিথক্লাইনেরই দুই হাজার ২২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ দিনের লেনদেন বাদ দিলে গতকাল ডিএসইতে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮৩ পয়েন্ট। বাজারে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৯০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৭৪টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মামুন-উর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে সে সব এলাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল সে সব এলাকায় আমাদের সেবা পৌছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে ডিজিটাল আউটলেট সেবা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মামুন-উর রশীদ বলেন, একটাই লক্ষ্য পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।