বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দিরের ভূমিপূজা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এ জন্য সুচিন্ততভাবে ৫ আগস্টকে বেছে নেয়া হয়। ২০১৯ সালের এই দিনে জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখন্ডিত করা হয়। বিভক্ত জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নেয়া হয়। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা, যা কিনা জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল, প্রত্যাহার করা হয়।
রাম মন্দিরের ভূমিপূজা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে এই তারিখটি নির্ধারণ করার মধ্যে একটা বার্তা আছে বৈকি! ভারতে মুসলমানদের অস্তিত্ব, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এখন আর মোটেই নিরাপদ নয়; সেটাই আরো স্পষ্ট হয়েছে এ ঘটনায়। ভারত এখন ধর্ম নিরপেক্ষ ও উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়; তা কার্যত হিন্দুদের জাতীয় রাষ্ট্র। ওইদিন নরেন্দ্র মোদি যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে এ সত্যই প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেছেন: রাম সবার মাঝেই বিরাজমান। সারাদেশ আজ রামময়। সর্বত্র রামধ্বনি। এই মন্দির হবে ভারতীয় সংস্কৃতির আধুনিকতম প্রতীক। রাষ্ট্রীয় ভাবনার প্রতিফলন হবে এর মধ্য দিয়ে। বিজেপির নব্য ভারতে হিন্দু ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের যে স্থান নেই, অতঃপর তা কি আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে?
প্রায় পাঁচশ বছর আগে (১৫২৮-২৯) অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়। ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের অন্যতম সেনাপতি মীর বাকী এটি নির্মাণ করেন। সেই থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এখানে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগি হয়েছে। ওই বছর উগ্র হিন্দুরা মসজিদের মধ্যে মূর্তি স্থাপন করলে মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়। উগ্র হিন্দুরা দাবি করে, বাবরি মসজিদের স্থানটি রামের জন্মভূমি। সেখানে মন্দির ছিল এবং সে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তাদের কথিত দাবির পক্ষে ঐতিহাসিক ও প্রত্মতাত্তি¡ক কোনো সাবুদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরও তারা দাবি থেকে সরে আসেনি। অবশেষে ১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠন একজোট হয়ে বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
বাবরি মসজিদকে মনে করা হতো, ভারতে মুসলিম ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। সেই নিদর্শন অত্যন্ত নৃশংসভাবে মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাম মন্দিরের ভূমিপূজা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দুদের ইতিহাস সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নতুন ধারা ও নিদর্শন সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছে। এ জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি বিতর্কিত রায়কে। ওই রায়ে বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। রায় সম্পর্কে ভারতেরই অনেক বিচারপতি ও বিদ্বৎজন বলেছেন: ইতিহাস পুনঃনির্মাণ আদালতের কাজ নয়। এ মুহূর্তে ভারতীয় মুসলিমসহ বিশ্ব মুসলিমের ধৈর্য অবলম্বন ও অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই। ইস্তাম্বুলের আয়া সুফিয়া ৮৬ বছর পর মসজিদের মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। আল্লাহপাকের ইচ্ছাতেই সেটি হয়েছে। তিনি চাইলে কী না হতে পারে! ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’ মুসলিম শরীয়া আইনের বরাতে এক টুইটে বলেছে: বাবরি মসজিদ ছিল, চিরকাল থাকবে। মসজিদের ভেতরে মূর্তি স্থাপন করে পূজা করলে কিংবা নামাজ বন্ধ করে দেয়া হলেও সেটা মসজিদই থাকবে।
মসজিদ আল্লাহর ঘর। তাঁর ইবাদতের জন্য তা নির্মিত। আল্লাহর বান্দারা এই ঘরের নির্মাতা, আবাদকারী ও আল্লাহর প্রতিবেশী। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে: নিশ্চয়ই আল্লাহ কেয়ামতের দিন উচ্চস্বরে ডাকতে থাকবেন, ‘আমার প্রতিবেশীরা কোথায়? আমার প্রতিবেশীরা কোথায়? ’তখন ফেরেশতাগণ আরজ করবে, ‘হে আমাদের প্রভূ, আপনার প্রতিবেশী হওয়া কার পক্ষে সম্ভব?’ তখন তিনি বলবেন, ‘মসজিদসমূহ আবাদকারীগণ কোথায়?’ মসজিদ ও তা আবাদ করা মুসলিমদের জন্য কতটা অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ, এ হাদিস থেকে তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়।
এহেন আল্লাহর ঘরে যেতে যারা বাধা দেয়, ধ্বংস করার চেষ্টা করে বা ধ্বংস করে তাদের মর্মান্তিক পরিণতি নির্ধারিত হয়ে আছে। আল্লাহপাক বলেছেন: যে আল্লাহর মসজিদে তার নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় ও ধ্বংসের চেষ্টা করে তার চেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী আর কে হতে পারে? ভয় না করে তাদের সেখানে ঢোকা উচিত নয়। পৃথিবীতে তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা ও পরকালে কঠিন শাস্তি। (সুরা বাকারা: ১১৪)। বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ ভারতসহ বিশ্বের তাবৎ মুসলমানের জন্য একটি বিরাট আঘাত। তারা যারপরনাই উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।