পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি ফের বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহৎ এই অববাহিকায় উভয় নদ-নদীর সবক’টি পয়েন্টে বাড়ছে পানি। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনায় পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থানে (মাত্র দুই সেন্টিমিটার নিচে) প্রবাহিত হয়। যমুনা নদের অপর ৫টি স্থানে গতকাল সর্বোচ্চ ১২ থেকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বেড়েছে। এর ফলে স্থানভেদে বিপদসীমার ১৫ থেকে ৩৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত নিচে পৌঁছে গেছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে প্রধান নদ-নদীসমূহের পানিপ্রবাহের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে এটি জানা যায়। এছাড়া মৌসুমী বায়ু আরও সক্রিয় হলে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এতে করে উজান থেকে অর্থাৎ ভারত থেকে ঢলের পানি গড়াবে ভাটিতে বাংলাদেশের নদ-নদীতে। ভারতের ঢলে চলমান ভয়াবহ বন্যা চলতি আগস্ট ও আসছে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি বৃদ্ধিতে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে পদ্মার তীব্র ভাঙনে গৃহহারা হচ্ছে অনেক মানুষ। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলসহ আরও অনেক স্থাপনা। খুলনা এলাকায় উপক‚লের বেড়িবাঁধ ভাঙছে। সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। টাঙ্গাইলে ভাঙছে যমুনা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ। কুড়িগ্রামে ভাঙছে ধরলা নদী।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদেও বাড়ছে পানি। গতকাল কুড়িগ্রাম জেলার নুনখাওয়া পয়েন্টে আরও ৯ সেন্টিমিটার এবং চিলমারীতে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় স্থানে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার যথাক্রমে ৮০ এবং ৪৪ সেন্টিমিটার নিচে।
অন্যতম প্রধান অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতে পানির সমতল গত দু’তিন দিনে কখনও হ্রাস কখনও বৃদ্ধি, আবার কখনও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত গঙ্গায় পানি কিছুটা বেড়ে আবার স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মায় গোয়ালন্দ ও সুরেশ^রে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়ালন্দে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার ভাটিতে সুরেশ^রে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। ভাগ্যকুল ও মাওয়া পয়েন্টে পানি কিছুটা হ্রাসের দিকে রয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় বৃহত্তর সিলেটের নদ-নদীসমূহে গতকাল সকাল পর্যন্ত পানি কিছুটা বাড়লেও বিকেল থেকে সামান্য হ্রাস-বৃদ্ধি অথবা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় গুর, আত্রাই, ধলেশ^রী নদীগুলোর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিপদসীমার যথাক্রমে ৭, ২ ও ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বাংলাদেশ এবং ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পৃথক পূর্বাভাসে জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মৌসুমী বায়ু আরও সক্রিয় হলে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এতে করে উজান থেকে অর্থাৎ ভারত থেকে ঢলের পানি গড়াবে ভাটিতে বাংলাদেশের নদ-নদীতে। ভারতের ঢলে চলতি আগস্ট ও আসছে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চলমান ভয়াবহ বন্যা।
তাছাড়া ভারত নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে কিংবা ঢল-বান সামাল দিতে গিয়ে অনেকগুলো বাঁধ-ব্যারেজ একযোগে খুলে দিলে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বন্যার চাপ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। এর ফলে নদীভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও বন্যার আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গতকাল দেশের নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫১টিতে পানি বৃদ্ধি, ৪৬টিতে হ্রাস পায়। অপরিবর্তিত থাকে ৪টিতে। ৪টি নদ-নদী ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যা পূর্বাভাসে সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার অধিকাংশ নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, প্রতিবছর আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসে খুলনাঞ্চলের উপক‚লীয় নদ-নদীতে জোয়ারের পানি ফুঁসে ওঠে। গত ১৫ দিনে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। আর বৃহত্তর খুলনার উপক‚লীয়াঞ্চলের নড়বড়ে বেড়িবাঁধগুলো প্রতিদিন নতুন নতুন করে ভাঙছে। এ পর্যন্ত শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার একর জমির আমনের চারা। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ।
কয়রার সংবাদদাতা মোস্তফা শফিক জানান, আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রার ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো এখনও অরক্ষিত রয়েছে। এসব এলাকায় এখনও বাঁধ আটকানো যায়নি। প্রায় অর্ধশত গ্রামের মানুষ পানির নিচে রয়েছে। বর্ষাকালে এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত নেই। মানবেতর জীবন যাপন করা এই জনপদের মানুষকে দেখার যেন কেউ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, দাকোপে পশুর নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহের মাত্রা দুই দশমিক ৪৪ মিটার। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আমফানের সময়ে তা উঠেছিল তিন দশমিক ৩৭ মিটারে। আর গত কয়েকদিন ধরেই পানি প্রবাহের মাত্রা তিন দশমিক ৬৩ মিটার। শ্রাবনের এই সময়ে খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ বড় নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী অমাবশ্যার জোয়ারে পানির এমন চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। ফলে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ আবারও ভেঙে বা উপচে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, জেলার নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলায় বন্যায় বানভাসিদের নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছ। বিশেষ করে দুর্গম চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা চরমে পৌছেছে। সিরাজগঞ্জ জেলায় চতুর্থ দফা বন্যায় যমুনা নদীর ভাঙনে এ অঞ্চলের মানুষকে রিক্ত, নিঃস্ব, সর্বশান্ত করে ফেলেছে। দরিদ্র বন্যার্ত মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখা শুরু করেছে। তাদের ঘরে খাবার নেই, নেই ওষুধপত্র কিংবা চিকিৎসার খরচ এবং গোখাদ্য সঙ্কটও সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি সঙ্কটেও ভুগছেন তারা। থেমে থেমে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব লোক মহাসঙ্কটে পড়েছে।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও বংশাই নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার প্রধান তিনটি নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনও তীব্র হচ্ছে। এসব নদী তীরের মানুষ ৩য় দফায় ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, তিন দফা বন্যায় জামালপুরে আউশ ধান, পাট, আখ ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি বন্যায় ১৪০ কোটি টাকা মূল্যের ফসল ক্ষতি হওয়ায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বন্যায় জেলার ১৫ হাজার ৪৯২ হেক্টর জমির ১৪০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোলা থেকে মো. জহিরুল হক জানান, নদী ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার। এ জেলায় নদীনালা ভাঙনের কারণে উন্নয়নের সুফলগুলো বেশিরভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সদর উপজেলার ভেদুরিয়া, বোরহানউদ্দিন, মনপুরা, লালমোহনসহ ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙছে নদী। তেতুলিয়া নদীর তীরবর্তী ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট হইতে চর চটকিমারা খেয়া ঘাট পর্যন্ত প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙনের কবলে। নদীর ভাঙনের ফলে নদী সংলগ্ন রাস্তা, মসজিদ, বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীনের পথে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।