Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় নন্দীগ্রামে বাড়ছে অপরাধ

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় দিন দিন বেড়েই চলেছে আইনবিরোধী কর্মকা-। ব্যাপকভাবে বাড়ছে বাল্যবিয়ের প্রবণতা, জুয়া ও মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন, ইভটিজিং, হোটেলে নোংরা পরিবেশে খাদ্যসামগ্রী তৈরি ও পরিবেশন, লাইসেন্সবিহীন সমিতি গড়ে অটোভ্যান-রিকশায় অবৈধভাবে টোল আদায়, শিশুদের দিয়ে হোটেলে কাজ করানোসহ আইনবিরোধী কর্মকা- দিন দিন ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ আইনবিরোধী কর্মকা- কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। সূত্র মতে, উপজেলাজুড়ে বেড়েই চলেছে বাল্যবিয়ের প্রবণতা। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ গৃহবধূরা রাস্তায় বের হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। রাস্তাঘাটে বখাটে ছেলেদের অত্যাচারে স্কুল ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ছে। গত ১৪ জুলাই উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কুচমা গ্রামের মাহাবুবর রহমানের স্কুল পড়–য়া কন্যাকে (১৩) দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে ক্ষান্ত না হয়ে পার্শ্ববর্তী নিনগ্রামের আব্দুল মান্নানের বখাটে ছেলে শামীম রেজা (২৪) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই স্কুলছাত্রীর অশ্লীল ছবি ছড়ানোর হুমকি দেয়। ওই ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। উপজেলা ও পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। বারবার পুলিশ প্রশাসন জুয়াড়–দের গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদ- প্রদান করলেও বেড়েই চলেছে জুয়ার রাজত্ব। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে প্রতিটি জুয়ার আসরের চলাচলের রাস্তার প্রায় ২ কিলোমিটারজুড়ে পাহারাদার রাখা হয়। প্রশাসনের আনাগোনা পেলেই খবর পেয়ে যায় জুয়াড়–রা। পৌর এলাকায় মাদকের প্রবণতা কমলেও উপজেলার বুড়ইল, ভাটগ্রাম, কুন্দারহাট, নিনগ্রাম, কুচমা, সিংজানী, বীজরুল, বীরপলী, বাংলাবাজার, মুরাদপুর, ভাগবজর, চাতরাগাড়ি বাজার, সোনাকানিয়া বাজার, ধুন্দার, রনবাঘা, ওমরপুর, কদমা, গুছইন, দোহারসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত। পুলিশ প্রশাসন গত তিন মাসে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানার ওসি হাসান শামীম ইকবাল নন্দীগ্রাম থানায় যোগদানের পর পৌর শহর এলাকার মাদকের স্বর্গরাজ্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। থানার সেকেন্ড অফিসার মনিরুল ইসলাম, এসআই শাহিন কাদির, এসআই ইনামুল ইসলাম উপজেলা ও পৌর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করাসহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও মাদকের আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে উপজেলাজুড়েই ইয়াবা ট্যাবলেট ও হেরোইন ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। নারীরাও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কিশোর থেকে শুরু করে যুবকেরা মাদকের ভয়াবহ ছোবলের শিকার হচ্ছে। ধীরে ধীরে আগামীর দেশ গড়ার ভবিষ্যৎ ধংসের দ্বারপ্রান্তে। মাদকের ছোবলে এলাকায় চুরি-ছিনতাইসহ ছোট-বড় অপরাধ ঘটে চলেছে। পৌর শহরের ওমরপুরে সপ্তাহের প্রত্যেক শুক্রবার জেলার বৃহত্তম হাট বসে। সেখানে খোলামেলাভাবে শতাধিক হোটেল বসে ফুটপাথে। খাবারের সাথে ধুলাবালি ও হোটেলের আশপাশে নোংরা পরিবেশ। নজর দেয়ার মতো যেন কেউ নেই। এছাড়া হোটেল-রেস্তেরাঁয়, চা-স্টল, ছোট-বড় কারখানায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। অল্পস্বল্প মজুরিতে কঠোর পরিশ্রমের দিকে শিশুদের এগিয়ে দেয়া হচ্ছে। যে বয়সে তাদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ গড়ার কথা, সে বয়সে তাদের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করানো হচ্ছে। শিশুশ্রম নিরোধ আইনের কোনো কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। অভিজ্ঞরা বলছেন, যুবসমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ আবশ্যক। শত শত মাদক সেবনকারীকে রেখে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করুন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোরতা, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম ও ইভটিজিং প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী। উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা অভিমত দিয়েছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। অপরাধী যেই হোক, প্রশাসন তাদের ছাড় দিয়ে কথা বলছে না। মাদকের আগ্রাসন ও বাল্যবিয়ে রুখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি অপরাধের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী চক্র। এদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোসা: শরীফুন্নেসা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে আইনবিরোধী সব কর্মকা- গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়া আমি যোগদানের পর থেকে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় নন্দীগ্রামে বাড়ছে অপরাধ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ