পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
পতন কাটিয়ে একের পর এক বড় উত্থান দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। টানা উত্থানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। সূচকের এমন উল্লম্ফনের সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে লেনদেনও। বাড়তে বাড়তে ডিএসইর লেনদেন এক হাজার ১৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় দুই মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে শেয়ারবাজার। তবে ঈদের আগে শেষ সপ্তাহ থেকে টানা উত্থান প্রবণতা দেখা দেয়। রোববার (১৬ আগস্ট) মূল্য সূচক বাড়ার মাধ্যমে শেষ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ১৪ কার্যদিবসেই ঊর্ধ্বমুখী থাকল শেয়ারবাজার। এতেই এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে এসেছে সূচকটি।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় শেয়ারবাজারে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিএসইসি একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে। যার ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। এরই সুফল দেখা যাচ্ছে বাজারে। বিশেষ কর গত বৃহস্পতিবার ‘জেড’ গ্রুপের কোম্পানির বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি অনিয়ম করায় বিবিএস ক্যাবলস’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এবং বিনিয়োকারীদের রক্ষায় যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দরকার বিএসইসি থেকে নেয়া হবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব বাস্তবায়ন করা হবে।
জেড গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার কমিশন সভা করে বিএসইসি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে- জেড গ্রুপের কোম্পানির উদ্যোক্তা ও বর্তমান পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ার বিক্রয়, হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং প্লেজ বন্ধ থাকবে। দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে জেড গ্রুপে থাকা কোম্পানিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে। ব্যর্থ হলে বর্তমান পরিচালক ও স্পন্সররা অন্যকোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো কোম্পানির পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না এবং কমিশন এ ক্ষেত্রে বিশেষ নিরীক্ষক ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে বোর্ড পুনর্গঠন করবে। এছাড়া পরপর দুই বছরের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হলে কোম্পানি ‘জেড’ গ্রুপে চলে যাবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সিদ্ধান্ত আসার পর রোববার লেনদেনের শুরুতেই মূল্য সূচক বড় উত্থানের আভাস দেয়। দিনের শেষ পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত থাকে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৯ আগস্টের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসল। পাশাপাশি শেষ ১৫ কার্যদিবসে ডিএসই’র প্রধান সূচকটি বাড়ল ৭৮৮ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৬৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১০৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
শেয়ারবাজারের এই উত্থান প্রবণতা সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সম্প্রতি বিএসইসি বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এটাই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে টনিক হিসেবে কাজ করেছে। গত বৃহস্পতিবার জেড গ্রুপের কোম্পানির বিষয়ে বিএসইসি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণ নিয়েও ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। সব মিলিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিএসইসি’র নেয়া পদক্ষেপগুলো বাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, মূল্য সূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেশ বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে বাজারে ক্রেতা সৃষ্টি হয়েছে। রোববার এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। এটা খুব ভালো লক্ষণ। তবে দুর্বল কোম্পানির বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে মূল্য সূচকের এমন উত্থানের দিনে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ডিএসইতে ৩০১ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর আগে গত ২৮ জুন ইউনিলিভার বহুজাতিক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন কিনে নেয়ায় ডিএসইতে ২ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনেরই ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ দিনের লেনদেন বাদ দিলে এদিন ডিএসইতে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৯৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৯৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।