Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারত নয়, বাংলাদেশই ভারতের সব সমস্যায় পাশে আছে

প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কামরুল হাসান দর্পণ
বাংলাদেশের সব সমস্যায় ভারত সব সময় পাশে থাকবে। এমন একটি কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ জোর দিয়ে একাধিকবার বলেছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভারত সফরকালের  বৈঠকেও এ কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত বাংলাদেশের সব সমস্যায় পাশে থাকবে বা আছে কীভাবে? বাংলাদেশের সব সমস্যা বলতে ভারত কী বোঝাতে চাচ্ছে? এখন ভারত যদি মনে করে, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশের সব সমস্যা, তাহলে কি তা যুক্তিযুক্ত হবে? সাধারণ মানুষ তো জানে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার কোনো কোনোটি বাংলাদেশের পরিবেশগত অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। যেমন পানির ন্যায্য প্রাপ্তি। এটি এমনই এক সমস্যা যা দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন-মরণের সাথে জড়িত। এ ছাড়া সীমান্তে গুলি ও নির্যাতন করে বাংলাদেশি হত্যা করা, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল বৈষম্য, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে তো ভারতের কোনো সহযোগিতাই পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে সব সমস্যা সমাধানের কথা বলছে কী করে? এ ধরনের বক্তব্য কি বাংলাদেশের মানুষের সাথে এক ধরনের তামাশা নয়? এই যে সুন্দরবনের ঘাতকস্বরূপ রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক বিরোধিতা করছে এবং এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন ধ্বংস করে দেবে, এ সমস্যার ক্ষেত্রে তো ভারত কোনো টুঁ শব্দ করছে না। সে যদি বাংলাদেশের প্রতি এতই দরদী হয়ে থাকে, তাহলে তো পরামর্শ দিতে পারে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হোক। কারণ বাংলাদেশের সরকার তো তার বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে প্রায় সব কথাই রক্ষা করে চলেছে। সে যা চেয়েছে, যেভাবে চেয়েছে তার সবই দিয়েছে। কাজেই ভারত যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরিয়ে অন্য জায়গায় করার পরামর্শ দেয়, সরকার গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের জীবন-মরণের সাথে জড়িয়ে থাকা এই সমস্যা সমাধানে তো ভারত সহায়তা করতে পারে। কই, সে তো তা করছে না! অথচ বাংলাদেশের জনগণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে সে চুক্তি করে বসে আছে। বাংলাদেশের মানুষ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে যে প্রবল বিরোধিতা এবং আকুল আবেদন জানাচ্ছে, তার কোনো মূল্যই তো ভারত ও বাংলাদেশের সরকার দিচ্ছে না। কিছু দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজন এবং শোবিজের অনেক তারকা প্রতিবাদ করে একটি কথা একই সুরে বলে যাচ্ছেন এবং অন্যদেরও অনুরোধ করছেন কথাটি সবার সাথে শেয়ার করতে। তারা তা করছেনও। কথাটি এরকম, ‘আমি, একজন জন্মগতভাবে বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন মালিক। আমি বাংলাদেশ, ভারত এবং জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষের নিকট রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স¤পর্কে আমার উদ্বেগের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি। এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গরান বনভূমি সুন্দরবনের সংকটজনক দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহনের পাশাপাশি কয়লা পোড়া ছাই ও ক্ষতিকর গ্যাস-বর্জ্য বনটির পরিবেশকে বিপন্ন করবে। আমাদের অবশ্যই বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু সুন্দরবন তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অনুগ্রহ করে রামপাল বিদ্যু কেন্দ্রটি বাতিল করুন।’ উল্লিখিত কথাগুলো হুবহু বা আরও কিছু কথা যোগ করে প্রত্যেকেই তার নিজ নাম ব্যবহার করে প্রতিবাদ করছে। অনেকে কথার শেষ দিকে যুক্ত করে বলছে, সুন্দরবনের বিনিময়ে বিদ্যুৎ চাই না। কেউ বলছে, সুন্দরবন না থাকলে বিদ্যুতেরও প্রয়োজন নেই। এমন একটি জটিল সমস্যা সমাধানে ভারত তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের পাশে কি দাঁড়াবে?
দুই.
এবার বন্যা প্রসঙ্গে আসি। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই বন্যা এবং বন্যার্ত লাখ লাখ মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো বক্তব্য নেই। সরকারের তরফ থেকে যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা নামকাওয়াস্তে ছাড়া কিছুই নয়। এখনো জোরেশোরে ত্রাণতৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে একই কথা, জঙ্গিবাদ আর জঙ্গিবাদ। এ নিয়ে একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে ঘায়েল করার তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। ওদিকে যে লাখ লাখ মানুষ, ফসল, ভিটেমাটি, গবাদিপশু ভেসে যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই বললেই চলে। বন্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা এবং সংবাদ পরিবেশন করা যেন কেবল পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ার দায়িত্ব। দায়িত্ব তো বটেই, তবে তাদের এই দায়িত্ববোধ সরকার ও বিরোধী দলের টনক খুব কমই নড়াতে পারছে। এবারের বন্যা যে সাধারণ কোনো বন্যা নয়, এ বিষয়টি বারবার তুলে ধরা সত্ত্বেও তাদের বোধোদয় হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, সর্বশেষ ’৯৪ সালে এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। অর্থাৎ বন্যায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু ভাসানো নয়, নদ-নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে জনপদের পর জনপদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষকে গৃহহারা, ফসলহারা করে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। তাদের পথে বসিয়ে দিচ্ছে। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে যেটুকু চিত্র তুলে ধরা হয়, তা তাদের আয়ত্তে যতটুকু কুলাচ্ছে ততটুকুই জানা যাচ্ছে। এর বাইরে যে আরও ভয়াবহ চিত্র রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সংবাদকর্মীদের পৌঁছানো সম্ভব নয়। সেখানেও লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। কেউ ঘরের চালে, কেউ নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। কেউ উঁচু জায়গার সন্ধানে ছুটছে। উঁচু জায়গা পাওয়াও দায় হয়ে পড়েছে। সবই তলিয়ে গেছে। যারা কোনো রকমে একটু জায়গা পেয়েছে, সব হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে তাদেরকে দিন কাটাতে হচ্ছে। একদিকে ক্ষুধার জ্বালা, আরেক দিকে দুশ্চিন্তা। যে বাড়িঘর অতি যতেœ গড়ে তুলেছিল এবং ফসল ফলিয়ে ছিল, সবই ভেসে গেছে। একদিন না একদিন বন্যা চলে যাবে, ফিরে গিয়ে কিছু না পাওয়ার বেদনা তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তখন কী অবস্থা হবে! এসব ভাগ্যবিড়ম্বিত অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর কি কেউ নেই? জনপ্রতিনিধিরা কোথায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায়, আমাদের সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ কোথায়? এসবের কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না। কেবল শুনছি, সরকার ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারাও বলছেন, কোনো সমস্যা নেই। ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। তাদের এ কথার সাথে বাস্তব চিত্রের খুব একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় যে খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে আশার কোনো চিত্র নাই। কেবলই বন্যার্ত মানুষের হাহাকার। যে মানুষের জন্য সরকার, সেই মানুষ যে ভেসে যাচ্ছে, তা নিয়ে যেন কোনো উদ্বেগ নেই। অথচ কয়েক বছর আগেও দেখা গেছে, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা স্পিড বোট ও জলযানে ত্রাণ নিয়ে দুর্গম এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। সামাজিক সংগঠনগুলো বা পাড়া-মহল্লার যুবকরা উদ্যোগী হয়ে চিরা-মুড়ি, চাল-ডাল, কাপড়-চোপড়, ওষুধ, খাবার স্যালাইন সংগ্রহ করে দুর্গত এলাকায় ছুটে যাচ্ছে। বন্যার্তদের সহায়তায় শিল্পীরা কনসার্ট আয়োজন করে অর্জিত অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে। এখন এসব উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। মানুষের প্রতি মানুষের মায়া-মমতা যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। তবে আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই যেন এই, সময় থাকতে কোনো কিছু করি না। কারো পাশে দাঁড়াই না। যখন সময় শেষ বা কেউ চলে যায়, তখন অহাহা করে উঠি। দেখা যাবে, এই বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই বন্যার্তদের দুর্দশার চরম সীমায় গিয়ে হয়তো কেউ কেউ দাঁড়াচ্ছে। আর সরকার এদিকে কতটা মনোযোগ দিতে পারবে, তা নিয়েও সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। কারণ সরকারকে জঙ্গিবাদ নামক মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা ও রাজনীতি করতেই বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার বিষয়টি যেন গৌণ হয়ে পড়েছে। অথচ সরকারের উচিত মন্ত্রী-এমপিদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া। দুর্গত এলাকায় গিয়ে ব্যাপক ত্রাণকার্যক্রম চালানো। দুঃখের বিষয়, আমরা এখন পর্যন্ত তা দেখতে পাচ্ছি না।
তিন.
এই ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়ার মূল কারণ যে ভারত, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন প্রবাদ বাক্য হয়ে গেছে, ভারত শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে মারে, আর বর্ষায় ডুবিয়ে মারে। সুদীর্ঘকাল ধরেই ভারত এ কাজটি করে আসছে। গত শুষ্ক মৌসুমে আমরা দেখেছি, পানির অভাবে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো কীভাবে শুকিয়ে মরে পড়ে আছে। প্রমত্তা পদ্মার চরে মানুষ চলাচল করছে। তিস্তা নদীতে হাঁটু পানি। সেই পানি দিয়ে মানুষ হেঁটে তিস্তা পার হচ্ছে। এই নদীতে সর্বকালের সর্বনি¤œ পানি প্রবাহিত হয়েছে। এ কাজটি করেছে ভারত। পুরো পানি প্রত্যাহার করে তিস্তাকে মরা নদীতে পরিণত করেছে। অথচ এ নিয়ে যে চুক্তিটি হওয়ার কথা তা আজো হয়নি। অন্যদিকে গঙ্গা চুক্তি হওয়ার মাধ্যমে যে পানি বাংলাদেশের পাওয়ার কথা, তাও সে দিচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর বেশিরভাগের পানি ভারত বাঁধ, গ্রোয়েন ইত্যাদি দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। একের পর এক নতুন নতুন বাঁধ নির্মাণ করছে। অর্থাৎ নদ-নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণের সব চাবিকাঠি ভারতের হাতে। সে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে শুষ্ক মৌসুমে ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার করছে, আর বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যায় চুবিয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের আচরণ কি পাশে দাঁড়ানো? এভাবে চুবিয়ে-শুকিয়ে মারা কোন ধরনের বন্ধুত্ব? অথচ কী দরদ নিয়েই না বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সব সমস্যায় পাশে থাকব! এক হাতে মারার চাবিকাঠি অন্য হাত বন্ধুত্বের জন্য বাড়িয়ে দেয়া কোন ধরনের সহায়তা বা বন্ধুত্ব? এমন বন্ধুত্ব কি বিশ্বে দেখা যায়? আমাদের সরকার এমনই বন্ধুত্বের পরিচয় দিচ্ছে যে তাতে এ কথা মনে হওয়া স্বাভাবিক, বন্ধুই তো মারছে। বন্ধু মারতেই পারে! শুধু পানিই নয়, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশের মানুষকে গুলি ও নির্যাতন করে মারছে, এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ দূরে থাক কোনো ধরনের বক্তব্য পর্যন্ত পাওয়া যায় না। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা যদি বলা হয়, তবে দেখা যাবে, সেখানে আকাশ আর পাতাল ব্যবধান। বন্যার পানির ¯্রােতের মতো ভারতীয় পণ্যে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারত চুইয়ে পড়া পানির মতোই বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ দিচ্ছে। এমন ভারসাম্যহীন বাণিজ্য বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, জানা নাই। বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারতের আর কী পাওয়ার থাকতে পারে? এ প্রশ্ন যদি করা হয় তবে উত্তর হবে, দাদাগিরি ছাড়া আর কিছু পাওয়ার নেই। কারণ ভারতের সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল, ট্রানজিটের নামে করিডোর, বন্দর ব্যবহার। বাংলাদেশ তা দিয়ে দিয়েছে। এমনকি ভারত থেকে করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশের বুক চিরে যে পণ্য আনা-নেয়া করবে তার মাশুলও ভারত যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই নির্ধারণ করা হয়েছে। টনপ্রতি মাত্র ১৯২ টাকা। অথচ মেঘনা-গোমতি, বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অন্যান্য সেতুর ওপর দিয়ে বাংলাদেশের পরিবহন যাতায়াতের ক্ষেত্রে টোল দিতে হয় গড়ে তিন থেকে চার গুণ। রামপালে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে, তার নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ খরচ বাংলাদেশের ওপর বর্তালেও উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভাগ হবে সমানে সমান। আহা! বন্ধুত্বের কী অসাধারণ নিদর্শন!
চার.
বাংলাদেশের সমস্যায় ভারত কেবল প্রতিশ্রুতিই দেয়। অর্থাৎ সবই ভবিষ্যতের কথা। ‘করব’র মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রতিশ্রুতি আর দৃশ্যমান হয় না। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ তা দেখে আসছে। আর যা বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়, তার বাস্তবায়ন দেখতে বাংলাদেশকে অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হয়। যেমন, এক সীমান্ত চুক্তি সেই কবে ১৯৭৪ সালে হয়েছিল, তা বাস্তব রূপ লাভ করতে ৪৩ বছর লেগে গেছে। এ নিয়ে আমাদের সরকারের সে কী আনন্দ! আর ভারতও এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন এই নাও দিলাম। অনেকটা শিশির বলে সাগরকে, এই নাও এক ফোঁটা দিলামÑ এমন। যাই হোক, তিস্তা চুক্তির জন্য আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে! ভারত আমাদের পাশে আছে বা থাকবে, এ ধরনের মুখরোচক কথাবার্তা সরকারের কাছে গুরুত্ববহ ও আনন্দজনক হতে পারে, তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তা অসার ছাড়া কিছু নয়। তারা বরং বলতে পারে, ভারত আমাদের সব সমস্যায় পাশে থাকবে কি, আমাদের সরকারই তো ভারতের সব সমস্যা পাশে থেকে সমাধান করে দিয়েছে এবং আরও কোনো আবদার থাকলে তাও পূরণ করতে রাজি আছে। বাংলাদেশ পানির অভাবে শুকিয়ে এবং বন্যায় ডুবে মরলেও বাংলাদেশের সরকার যে কিছু বলবে না, তা এক প্রকার নিশিচত। ভারত এটা জানে বলেই বলতে পারছে, বাংলাদেশের সব সমস্যায় পাশে থাকবে। তাও আবার এমন সময় বলছে, যখন সে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। বন্যার পানির সুইসটি বন্ধ করে দিয়ে যদি এ কথা বলত, কিংবা বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান করে দেবে বলত, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও বিশ্বাস জন্মাত। শুধু জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে সব সমস্যার সমাধানে পাশে থাকার কথায় বাংলাদেশের মানুষ অন্য কিছুও ভাবতে পারে।  কারণ, তারা বিশ্বাস করে, জঙ্গি হামলার হুমকি মোকাবিলার জন্য সরকার ও তারাই যথেষ্ট।

[email protected]



 

Show all comments
  • Laboni ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:১০ পিএম says : 0
    onek sundhor kotha bolesen.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ