বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আরবি মাসজিদ শব্দটি স্থানবাচক বিশেষ্য। শব্দটির ধাতুগত অর্থ- কাউকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে স্বীয় মস্তক অবনত করা। মাসজিদ শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ সিজদা করার স্থান- অর্থাৎ উপাসনালয়। অন্যান্য সেমেটিক ভাষায়ও এর সদৃশ শব্দ পাওয়া যায়। যথা: আরামীয় ও নাবাতীয় ভাষায় মাসজিদ অর্থ- এবাদতখানা ও পবিত্র স্তম্ভ। ইথিয়পীয় ভাষায় মেসজাদ অর্থ মন্দির, গীর্জা। বস্তুত হজরত আদম (আ.) হতে শুরু করে শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তাফা (সা.) পর্যন্ত নবী ও রাসুলগণের এবং তাদের উম্মতগণের পরম ও চরম পবিত্র ইবাদতের স্থান হলো মাসজিদ। কোরআনুল কারিম গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করলে দেখা যায় যে, এতে মাসজিদ শব্দটি এক বচনে মাসজিদুন ও মাসজিদিন আকারে বিশবার ব্যবহৃত হয়েছে। আর এক বচনে মাসজিদান রূপে এসেছে দুইবার। মোটকথা, তিনটি রূপে এক বচনে মসজিদ শব্দটি আল কোরআনে ২২ বার এসেছে। যথা: ২নং সুরা বাকারাহ-এর ১৪৪, ১৪৯, ১৫০, ১৯১, ১৯৬ ও ২১৭ নং আয়াতে। ৫ নং সুরা মায়েদাহ-এর ২ নং আয়াতে। ৭ নং সুরা আ’রাফ-এর ২৯ ও ৩১ নং আয়াতে। ৯ নং সুরা আনফাল-এর ৩৪ নং আয়াতে। ৯ নং সুরা তাওবাহ-এর ৭, ১৯, ২৮ ও ১০৮ নং আয়াতে। ১৭ নং সুরা আল আসরা-এর ১ ও ৭ নং আয়াতে। ২২ নং সুরা হাজ্জ-এর ২৫ নং আয়াতে। ৪৮ নং সুরা ফাতহ-এর ২৫ ও ২৭ নং আয়াতে। তবে, লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ১৭ নং সুরা আল আসরা-এর ১নং আয়াতে মসজিদ শব্দটি ২ বার এসেছে। আর এক বচনে মসজিদের রূপে ৯ নং সুরা তাওবাহ-এর ১০৭ নং আয়াতে এবং ১৭ নং সুরা কাহ্ফ-এর ২১ নং আয়াতে মোট ২ বার এসেছে। মসজিদ শব্দটির বহুবচন মাসাজিদ শব্দটি আল কোরআনে ছয়বার এসেছে। যথা: ২ নং সুরা বাকারাহ-এর ১১৪ ও ১৮৭ নং আয়াতে। ৯ নং সুরা তাওবাহ-এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে। ২২ নং সুরা হাজ্জ-এর ৪০ নং আয়াতে। ৭২ নং সুরা জ্বিন-এর ১৮ নং আয়াতে। সুতরাং এক বচন ও বহুবচনে মাসজিদ-শব্দটির ব্যবহার আল কোরআনে মোট ২৮ বার লক্ষ করা যায়। এই ২৮ সংখ্যাটির একক (২+৮)=১০। আর ১০-এর একক (১+০)=১ অর্থাৎ এক আল্লাহ। এ জন্যই মাসজিদকে আল্লাহর ঘর বলা হয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মাসজিদসমূহকে ‘নিজের’ বলে ঘোষণা করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই মাসজিদসমূহ আল্লাহর (এবাদতের) জন্য। এতে আল্লাহর সাথে অন্য কারো আরাধনা তোমরা করো না। (সুরা জ্বিন : আয়াত ১৮)।
আর যারা মাসজিদ নির্মাণ করে আবাদ করে তাদের স্বরূপ আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে: অবশ্যই ওই সকল লোক আল্লাহর মাসজিদসমূহ নির্মাণ ও আবাদ করে, যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং কেয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। (সুরা তাওবাহ : আয়াত ১৮)। আর যারা মাসজিদ বিদ্বেষী, যারা মাসজিদে নামাজ আদায় ও জিকির আজকারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, মাসজিদ ধ্বংস করে ও মাসজিদ বিরান করার অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের স্বরূপ তুলে ধরে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: তারাই হচ্ছে কাফের শ্রেণিভুক্ত যারা তোমাদের মাসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা প্রদান করে। (সুরা ফাতহ : আয়াত ২৫)। এই একই নির্দেশনা সুরা হজ্জের ২৫ নং আয়াতেও ধ্বনিত হয়েছে। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহর পথে বাধা প্রদান করা, আল্লাহর সাথে কুফুরি করা ও মাসজিদুল হারামকে ধ্বংস করাই তাদের একান্ত কামনা। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২১৭)।
সুতরাং উল্লিখিত আয়াত সমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হলো- মাসজিদ নির্মাণ করা ও আবাদ করা। আর অবিশ্বাসী কাফেরদের স্বভাব হলো- মাসজিদে বিঘ্ন সৃষ্টি করা ও মাসজিদ ধ্বংস করা। এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহপাক মুমিনগণকে আশ্বস্ত করে এই শুভ সংবাদ, প্রদান করেছেন যে, অবিশ্বাসী কাফেরদের আচরণে তোমরা দুঃখ করো না। আমি তোমাদের মাসজিদ নির্মাণ ও আবাদের সুযোগ করে দেব। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: অবশ্যই আল্লাহ স্বীয় রাসুলের স্বপ্নকে সত্য প্রতিপন্ন করে দেখাবেন, আল্লাহর ইচ্ছায় অবশ্যই তোমরা নিরাপদে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করবে, তোমাদের কেউ মাথা মুন্ডন করে কেউবা মাথায় চুল কেটে। কোনো শঙ্কা থাকবে না। আল্লাহ যা জানেন, তোমরা তা জান না। সুতরাং, অচিরেই তিনি আসন্ন বিজয় প্রদান করবেন। (সুরা ফাতহ : আয়াত ২৮)। এই আয়াতে কারিমায় স্পষ্টত বলে দেয়া হয়েছে যে, অচিরেই তোমরা মাসজিদ নির্মাণ ও আবাদ করার মাধ্যমে নিঃশঙ্কচিত্তে মাসজিদে আরাধনা করবে। দীর্ঘ ৮৬ বছর পর তুরস্কের আয়া সুফিয়া মাসজিদে নামাজ আদায়ের ঘটনা সেই কাক্সিক্ষত বিজয়ের পথিকৃৎ হয়ে থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আর আমরা এ কথাও বিশ্বাস করি যে, অতি শীঘ্রই আল্লাহপাক বিশ্বের সকল মসজিদ আবাদের ব্যবস্থা করবেন। ইনশাআল্লাহ। এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।