বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গ্রামের ছেলে আব্দুল আলিম। সাগর-মহাসাগর জয় করে চলেছেন একের পর এক। দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ ও তার ভেতরের যাত্রীসহ মালামাল সফলতার সঙ্গে উদ্ধার করে বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন। মহাসাগরে দুর্ঘটনার কবলে পড়া জাহাজ উদ্ধার কাজের জন্য তার কদর বেড়েছে। এভাবে প্রায় ১৫টি দেশে উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাঙ্গালপাড়া শ্বাষকান্দর এলাকার আবেদ আলির ছেলে আব্দুল আলীম। ১৯৮০ সালের ২৫ জুন জন্ম এই মেধাবী সাগর জয়ীর। বাড়ির পাশে মোহাম্মাদিয়া শাহ সিকান্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর সৈয়দপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন।
১৯৯৭ সালে সৈয়দপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নৌবাহিনীর খুলনা তিতুমীর ঘাটিতে যোগদান করেন। সেখানে দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি শেষে ২০১২ সালে অবসর নেন তিনি। দেশে মূল্যায়ন না পাওয়ায় চলে যান সিংগাপুরে।
সিংঙ্গাপুর সরকার তার আগের সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন করেন। এরপর সিংঙ্গাপুর থেকে ডাইভারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন আব্দুল আলীম। বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপরই ১২০ ফিট পানির নিচে একটি জাহাজ ডুবে যায়। সেখানে পানির নিচে গিয়ে জাহাজটিকে কেটে কেটে তোলা হয়। এর নেতৃত্ব দেন আলিম। মূলত এ কাজের মাধ্যমে উদ্ধার কাজের চাকরি জীবন শুরু তার। পেশাগত প্রয়োজনে এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট ও সম্মাননা স্বীকৃতি অর্জন করেছেন তিনি।
এরপর ইরানী শিপ এমভি শাহারাজ প্রায় ৩৫০০ কন্টেইনার নিয়ে চীন যাচ্ছিল। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার কাছে পৌঁছালে পানির নিচে কোরালে পাথরে লেগে আটকে যায়। এ সময় জাহাজটিকে কোনোভাবেই সামনে টানা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে উদ্ধারের জন্য সিঙ্গাপুরের সাহায্য চাওয়া হয়। ৩ দিন পর বাংলাদেশি আব্দুল আলিমের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী সিঙ্গাপুর টিম উদ্ধার কাজে নেমে যায়। সেখানে সফলতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করেন। এরপর মালদ্বীপে ও ইন্দোনেশিয়ায় কাজ করেছেন। তার কাজের ধরন হচ্ছে শিপ স্যালভেস।
এরফল স্বরূপ বর্তমানে হংকং, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিংগাপুর, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় জাহাজ উদ্ধার করে চলেছেন।
উদ্ধারে ব্যাপক পরিচিতি তার। তবে দেশে কেউ চেনেন না তাকে। জানলে হয়তো দেশের নৌ-দুর্ঘটনাগুলোতে ডাক পেতেন তিনি। দেশে একাধিক নৌবন্দরের কারণে তার ডাইভার পেশাটি শিল্প হিসেবে গ্রহণ করলে এখান থেকেও ব্যাপক রেমিট্যান্স আসতো। আয় হতো কোটি কোটি ডলার। তবে দেশে বেসরকারিভাবে এর প্রচারণা না থাকায় ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষিত জনবল নেই। তাই গণ্ডির মধ্য থেকে দুর্ঘটনায় নৌ-বাহিনীর সাহায্য নিতে হয়। সরকার ইচ্ছে করলে ফায়ার সার্ভিসের মতো একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে। যারা নৌ দুর্ঘটনায়, জাহাজ উদ্ধার, জাহাজ ফিটনেসে ব্যবহার হতে পারে।
এর আগে, চাকরি জীবনে তার ব্যাপক সফলতা রয়েছে উদ্ধার কাজে। বাংলাদেশে মিতালী-৩ লঞ্চ ২০০৩ সালে যাত্রাবাড়ীতে ডুবে যায়। শত লোক নিখোঁজ হয়। নৌবাহিনীতে থাকা অবস্থায় আলিম এ উদ্ধারকারী দলে ছিল। এ দুর্ঘটনায় মরদেহ উদ্ধার করা হয় ১৩০ জনের। ২০০৪ সালে বরযাত্রীবাহী নৌকা ডুবে যায়। সেখানেও আলিমের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজ চালায়। ২০০৯ সালে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে ডুবে যায়। সেখানেও আব্দুল আলিম উদ্ধার কাজ চালায়।
জানা যায়, সমুদ্রে ৫ বছর পরপর জাহাজের ফিটনেস পরীক্ষা হয়। একটি জাহাজকে ডকিং করলে টাকা ও সময় বেশি লাগে। তলদেশে ফিটনেস পরীক্ষায় ডুবরি ব্যবহার করে ফিটনেস দিতে পারে। চার্জ বড় জাহাজ ১৫ হাজার ডলার আর ছোট জাহাজ ৮ হাজার ডলার। এছাড়া একটি বড় জাহাজের উদ্ধারে ব্যায় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮০ কোটি টাকার উপরে। তাই ডাইভার শিল্পটির বিকাশ ঘটিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার রয়েছে উজ্বল সম্ভাবনা।
এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত মোঃ আলিমের কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এখানে প্রায়ই নৌ ও জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে। দেশে নৌদুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ বা লঞ্চ উদ্ধার করার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তবে এজন্য সরকারি উদ্যোগে একটি প্রতিষ্ঠান করা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হবে। সে সাথে এ বিষয়ে আরও জনবল তৈরি করতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হলে বিশ্বমানের শিল্প হিসেবে দাঁড়াবে আমাদের এ প্রতিষ্ঠান। যা বাংলাদেশকে নতুন আরেকটি পরিচিত এনে দিবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এজন্য তিনি সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।