বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহাগ্রন্থ আল কোরআন পুরোটাই বরকতপূর্ণ ও ফজিলতময়। তারপরও বিশেষ কিছু সূরা বা আয়াত রয়েছে, যেগুলোর কথা বিশেষভাবে নবী করিম (সা.) বলে গেছেন। তন্মধ্যে সূরা ফাতিহা, সূরা মূলক, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসী, সূরা আল-ক্বাহাফ, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস। এই সূরাগুলো অত্যন্ত ফজিলতময় বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখিত সূরা এবং আয়াতের সংক্ষিপ্ত ফজিলত : ১. সূরা ফাতিহা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূরা ফাতিহা’ কে আল্লাহতাআলা তার ও বান্দার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন, বান্দা যখন নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করে প্রতিটি আয়াতের জবাব আল্লাহতাআলা নিজে দেন। (মুসলিম : ৯০৪; মিশকাত : ৮২৩)।
২. সূরা মূলক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূরা মূলক’ তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষ অবধি এর পাঠককে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (আবু দাউদ : ১৪০০; ইবনু মাজাহ : ৩৭৮৬)।
৩. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ‘সূরা বাকারা’র শেষ ২টি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ওই রাতে অশুভকর সব কিছুর মোকাবেলায় ওই দুইটি আয়াতই যথেষ্ট হবে বা তাহাজ্জুদের নামাজের সওয়াব হবে। (আবু দাউদ : ১৪০০; ইবনু মাজাহ : ৩৭৮৬)।
৪. আয়াতুল কুরসী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত ‘আয়াতুল কুরসী’। যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (বুখারী ৪০০৮)।
৫. সূরা আল-ক্বাহাফ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যাক্তি ‘সূরা আল্-কাহাফ’এর প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করে নেয় সে দাজ্জালের ফিৎনা হতে নিরাপদ থাকবে, শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারেও উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। যে ব্যক্তি জুমআর দিনে ‘সূরা আল-কাহাফ’ পাঠ করবে, তার জন্য মহান আল্লাহ দুই জুমআর মাঝে নূর প্রজ্জ্বলিত করবেন। (বুখারী : ২৩১১)।
৬. সূরা ওয়াক্বিয়াহ। এই সূরা সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি রাতের অংশে ‘সূরা ওয়াক্বিয়াহ’ পাঠ করবে, অভাব তাকে কোনোদিন স্পর্শ করবে না। বিশিষ্ট এক সাহাবীর মৃত্যুর পর তার কন্যাদের খলীফা সাহায্য করতে চাইলে, তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদেরকে তাদের পিতা সূরা ওয়াক্বিয়াহ পাঠ করার আমল শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। অতএব তারা কখনো দারিদ্র্য বা অভাবের শিকার হবে না। তাদেরকে সাহায্য দেয়ার দরকার হবে না। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)।
৭. সূরা ইখলাস সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূরা ইখলাস’ কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ এর প্রতি ভালোবাসা পাঠককে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। সূরা ইখলাস সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ‘সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস’ তিনবার করে পড়ল ওই ব্যক্তিকে যেকোনো (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এটা যথেষ্ট হবে। (তিরমিযী, মুসলিম, আবু দাউদ)।
প্রবন্ধে আলোচ্য আয়াত ও সূরাসমূহের সংক্ষিপ্ত ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও এ সমস্ত আয়াত ও সূরার অনেক ফজিলত রয়েছে। যা এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় করা সম্ভবপর নয়। তাই আসুন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত আমলগুলো আমৃত্যু প্রতিনিয়ত করার চেষ্টা করি। আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ এবং পরকালে মুক্তির জন্য এসব বড় সহায়ক হিসেবে আল্লাহ কবুল করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।