রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
‘প্রশাসন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা
করলে বিএনপি প্রার্থীই
জয়লাভ করবে’
নজরুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে
আগামী ৭ আগস্ট সারাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ ৮টি পৌরসভার সাথে ঘাটাইল পৌরসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। এটি এই পৌরসভার চতুর্থ নির্বাচন। এ পৌরসভায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। ভোটারদের কাছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে পৌর এলাকা, মাইকে চলছে রেকর্ডিং প্রচারণা। এককথায় প্রচার-প্রচারণায় সরব প্রার্থীরা। কিন্ত এত কিছুর পরও ভোট প্রার্থনায় প্রার্থীরা সরব থাকলেও ভোটাররা অনেকটাই নীরব। তারপরও আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভিআইপি নেতাদের মাঠে উপস্থিতি ভোটারদের নজরে এসেছে। এ অবস্থায় বিএনপি চাইছে হ্যাট্রিক বিজয় আর আওয়ামী লীগ চাইছে জয়ের ধারায় ফিরে আসতে। এককথায় বলতে গেলে ঘাটাইল পৌরসভার নির্বাচন দুই দলেরই মর্যদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ঘাটাইল পৌরসভায় এবার মেয়র পদে তিনজন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৮ জন, ৩টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পৌরসভায় মোট ভোটার ১৯ হাজার ৮ শত ৫৩ জন। এর মধ্যে মহিলা ১০ হাজার একশ’ ৭৭ এবং পুরুষ ৯ হাজার ৬শ’ ৭৬ জন। পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুজ্জামান খান ভিপি শহিদ, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ধলা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলাম। পৌরসভাটি গঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রথমে এ পৌরসভার প্রশাসক হন আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাসান আলী মিয়া। বিএনপির বর্জনের কারণে ১৯৯৮ সালের প্রথম নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি পৌর চেয়ারম্যান হন। পরবর্তী ২০০৪ ও ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হন। বর্তমানে এ পৌরসভার মেয়র পৌর বিএনপির সভাপতি মনজুরুল হক। এবার তিনি নির্বাচন করছেন না। গত নির্বাচনে মাত্র ১৭ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক মেয়র মো. হাসান আলী মিয়াও এবার নির্বাচনী মাঠে নেই। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই প্রার্থীই নতুন মুখ। স্বতন্ত্র প্রার্থী অবশ্য গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পর পর দুইবার এ পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। তাই বিএনপি চাচ্ছে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে হ্যাট্রিক জয় পেতে আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ চাচ্ছে জয়ের ধারায় ফিরে এসে তাদের মজবুত সাংগঠনিক অবস্থার জানান দিতে। সবদিক বিবেচনায় ঘাটাইল পৌরসভা নির্বাচনটি বর্তমানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির জন্য মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। তাই দুই দলই এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি গ্রুপ বিদ্যমান রয়েছে। একপক্ষে আছে পলাতক এমপি রানার অনুসারী অপরপক্ষে আছে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবুর নেতৃত্বে। দুটি গ্রুপ বিদ্যমান থাকলেও মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিলেমিশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভিপি শহীদের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন। জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পথসভা ও উঠান বৈঠক করে ভোট চাইছেন ভিপি শহীদের পক্ষে। এদিকে রানা এমপির অনুসারী রফিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে আপিল করেও তিনি মনোনয়নপত্রের বৈধতা পাননি। পরবর্তীতে হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে তিনিও এখন মাঠে। তবে তার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় ভোটের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে না আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা। এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, পৌরসভার সকল নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভিপি শহিদকে জয়ী করতে কাজ করছেন। সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ও সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মডেল পৌরসভা গড়তে ঘাটাইল পৌরবাসী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। তিনি আরো বলেন, এখানে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তাই এব্যাপারে প্রতিপক্ষের ভয় ও শঙ্কার কোনো কারণ নেই। পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিএনপি রয়েছে ভয় ও শঙ্কার মধ্যে। পেশী শক্তি ব্যবহার, কেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো এবং কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার মতো নানা আশঙ্কা ভর করছে তাদের উপর। গত পৌরসভা নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা শেষে গোলযোগ সৃষ্টি করে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তারই রেশ ধরে সে সময় উপজেলা পরিষদে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয় একপর্যায়ে একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। অবশ্য পরে সে কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে সে নির্বাচনে ১৭ ভোটে বিএনপি প্রার্থীই জয়ী হয়। এসব কারণে এবারও একই রকম শঙ্কা ও ভয় বিরাজ করছে তাদের উপর। দলের মধ্যে কিছুটা মতভেদ থাকলেও এটাকে গ্রুপিং বলতে নারাজ দলের নীতিনির্ধারকরা। নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে সশরীরে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের উপস্থিতি বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবলকে চাঙ্গা করেছে যা ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন কর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ.খ.ম রেজাউল করিম বলেন, দলের মধ্যে কোনো বিবেধ নেই সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার পেশীশক্তির ব্যবহার ঠেকাতে পারলে ও নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে বিএনপির প্রার্থীই জয়লাভ করবে। এদিকে ৯টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৩টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেনÑ ১নং ওয়ার্ড : এ ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী হলেন মো. বিশা মিয়া ও মো. আ. হালিম মিয়া ২নং ওয়ার্ড : এখানেও প্রার্থীর সংখ্যা দুইজন এরা হলেন, বর্তমান কাউন্সিলর মো. হেকমত আলী ও মো. নজরুল ইসলাম। ৩নং ওয়ার্ড : মো. সাইফুল ইসলাম, বর্তমান কাউন্সিলর মো. মনছুর আলী, মো. রফিকুল ইসলাম এবং মো. মাহবুব আলম আকন্দ ৪নং ওয়ার্ড : মো. রফিকুল ইসলাম, দুলাল খান, মো. আবু হায়দার (লিটন সরকার) ও মো. ফজলুর রহমান আকন্দ, এবং মো. আশরাফুল জামান মামুন ৫নং ওয়ার্ড : কাজী জাহাঙ্গীর, মো. মিজানুর রহমান এবং শফিকুর রহমান মনি ৬নং ওয়ার্ড : বর্তমান কাউন্সিলর মো. সোহানুর রহমান (মাজহারুল) ও সাবেক কাউন্সিলর মো. মেছের আলী ৭নং ওয়ার্ড : বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মো. কবীর উদ্দিন, মোছা. হামিদা বেগম জোসনা ও মো. মুক্তার আলী ৮নং ওয়ার্ড : বর্তমান কাউন্সিলর শাহাদৎ হোসেন শামীম সরকার এবং এসএম রকিবুল হাসান মানিক ৯নং ওয়ার্ড : বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম ভূইয়া, সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন খান, মো. আ. জলিল ও মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান খান। সংরক্ষিত তিনটি মহিলা আসনের প্রার্থীরা হলেনÑ ১নং ওয়ার্ড : বর্তমান কাউন্সিলর মোছা. লিজা বেগম ও মোছা. ছালমা বেগম ২নং ওয়ার্ড : মোছা. শিরিনা ইসলাম, মোসা. রাশিদা বেগম ও মোছা. হোসনে আরা ৩নং ওয়ার্ড : মিসেস রওশন আরা রুবি ও মো. ছালমা বেগম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।