পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৯১২ সালে হলান্ডের হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানি নির্মিত ‘রয়াল মেল স্টিমার টাইটানিক’ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গেছে। সেই জাহাজ ডুবি নিয়ে ১৯৯৭ সালে হলিউডে নির্মিত ‘টাইটানিক’ সিনেমা সারাবিশ্বের দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দেয়। টাইটানিক জাহাজডুবি দৃশ্যের মতোই গত ২৩ জুলাই টিভি পর্দায় বিশালাকৃতির স্কুলঘর ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। চোখের সামনে কয়েক মিনিটেই পানিতে তলিয়ে যায় তিনতলা বিশালাকৃতির ভবন। কিন্তু তা দেখে মানুষের অবস্থা ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম/তুমি চলে গেলে/আমার বলার কিছু ছিল না’।
বলছি মাদারীপুর জেলার শিবচরের এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ধীরে ধীরে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার কথা। ২০০৯ সালে নির্মিত বিদ্যালয়টির ডুবে যাওয়ার সচিত্র খবর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
একই দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চবিদ্যালয়।
প্রশ্ন হচ্ছে এ দায় কার? শুধু প্রকৃতির উপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানো যাবে? যাদের অদূরদর্শিতা-অবহেলা-গাফিলতিতে রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে তাদের কারো বিরুদ্ধে কখনো কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?
মাদারীপুর-চাঁদপুরের এই দুটি স্থাপনা শুধু নয়, গত কয়েক বছরে নদীর গর্ভে চলে গেছে দেশের অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, ব্রিজ-কালভার্ট। বাদ যায়নি সরকারি অফিস ভবনও। পেশাগত কারণে আমি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলাসহ অর্ধশত নদ-নদীর শত শত মাইল নৌকা ও পায়ে হেঁটে ঘুরেছি।
চলার পথে অসংখ্য বাঁধ ও চরাঞ্চলে গিয়েছি। দেখেছি যত্রত্রত লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি সরকারি অফিস-আদালতও নির্মাণ করা হয়েছে নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। দু’বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে অথচ সে স্থাপনা নদীতে ভেসে গেছে এমন চিত্র দেখেছি। দেখেই বোঝা যায় দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা না করেই ওইসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী কে? কেন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ভবন ভেঙ্গে যাওয়ার দৃশ্য নীরবে দেখতে হচ্ছে? বাংলাদেশের নদ-নদী ভাঙ্গন কী নতুন কিছু? নদ-নদীর ভাঙ্গাগড়া খেলা নিয়ে মানুষের অভিজ্ঞতা কী কম?
জনসংখ্যার কারণেই বাড়িঘর নির্মাণে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। গরীব মানুষ নদীর তীরে ঘর তোলে। সে ঘর ভেঙ্গে যায়; আবার নতুন করে বসতি গড়ে। কিন্তু কোটি কোটি টাকার সরকারি স্থাপনা? কোথাও বসতবাড়ি হলেই সেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে স্কুল-কলেজ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারের।
কিন্তু সেগুলো কী পরিকল্পনা মাফিক নির্মাণ করা হয়? নদ-নদীর আশপাশের ভবন, স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন প্রশাসনিক অফিস, থানা, ইউএনও অফিস, মিলনায়তন, মসজিদ নির্মাণের আগে স্থানীয় প্রশাসন কী পরিকল্পনা করে নির্মাণ করেন না? মাদারীপুর ও চাঁদপুরের ওই স্কুল দুটি নদীতে তালিয়ে যাওয়ায় সরকারের কোনো হাত নেই। কিন্তু এ ধরণের ঘটনায় সরকারের ভাবমর্যাদা যে ক্ষুন্ন হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
‘নবাব সিরাজ উদ দৌল্লা’ সিনেমায় আব্দুল আলীমের ‘একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে/এইতো নদীর খেলা’ গানটি কে শোনেননি? ভৌগলিক কারণেই নদীমার্তৃক বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যা, নদীভাঙ্গন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা বন্যা-খরা-ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সুনাম তাই বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
কিন্তু মাঠ প্রশাসনে কর্মরতদের স্বেচ্ছাচারিতা, অবহেলা, দুর্নীতির জন্য নদ-নদী ভাঙ্গনে দেশের বিপুল অর্থ-সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণে শত শত কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ পরের বছর সেই বাঁধ নতুন করে সংস্কার করতে হয়। মাঠ প্রশাসনে কর্মরতদের ‘কিছু কামানোর ধান্দা’ থেকে যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণের জন্যই সরকারের বদনাম হচ্ছে।
দেশে বন্যা যত বাড়ে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে নদ-নদী ভাঙন। বিপর্যস্ত হয় মানুষের জীবন। কেউ বাস্তুচ্যুত হয়, কেউ উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন শহর-নগরে আশ্রয় নেয়। দেশের যে সব এলাকা বন্যা ও ভাঙনপ্রবণ, সেখানে পাকা ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস নির্মাণের আগে ‘দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা’ করা উচিত।
আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে নদীগর্ভে পড়তে পারে এমন জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হয় কেন? তাছাড়া স্থাপনা নির্মাণে স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা এবং সয়েল টেস্ট, ফাউন্ডেশন, ডিজাইন, ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রীর মান উন্নত হওয়া অপরিহার্য। যারা এসব দায়িত্বে থাকেন সেই মাঠ প্রশাসনের খামখেয়ালি কতদিন চলবে?
নদ-নদীর ধারে কেন, খোদ নদীগর্ভেও ভবন তৈরি করা যেতে পারে। তবে সে স্থাপনা নির্মাণের আগে সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার নদ-নদীর গতিপ্রকৃতি দেখে বোঝা যায় আগামী কয়েক বছরে পাড় ভেঙ্গে কতদূর যেতে পারে।
তারপরও অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ভেঙ্গে গেলে অযথাই সরকারকে বদনামের ভাগিদার হতে হয়। বন্ধ করা হোক নদীর আশপাশে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। সেই সঙ্গে যাদের অবহেলা ও গাফিলতিতে সরকারি স্থাপনা ভেঙ্গে যাচ্ছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।