Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ রূপে বন্যা

রাজধানীতে ঢুকছে পানি : অতি ভারি বর্ষণের আভাস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবার ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশেও আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই ভারি বর্ষণ শুরু হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল থেকে আবার বাড়বে। ফলে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ঢাকা জেলার আশপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। ধরলা, তিস্তা ও ঢাকার আশপাশের নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। গতকাল বালু নদীর ডেমরা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার, তুরাগের মিরপুরে ৮ সেন্টিমিটার, টঙ্গী খালের টঙ্গী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরীর জাগির পয়েন্টে ৯৮ ও শীতলক্ষ্যার নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে বাড়ছে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি।
অন্য জেলাগুলোর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে নাটোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের নদনদীর ৪৩টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৫৫টি পয়েন্টে। এখনো বিপদসীমার উপরে ২৯টি স্টেশনের পানি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার. ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ২০, চিলমারী পয়েন্টে ৪৭ ও ঘাঘট গাইবান্ধা পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ৭৯, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৮৯, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১০০, কাজিপুর পয়েন্টে ৮৪, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭৩, আরিচা পয়েন্টে ৮৬, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১১২, আত্রাই পয়েন্টে ১৮, গুড় নদীর সিংড়া পয়েন্টে ৯১, ধলেশ্বরী নদীর জাগির পয়েন্টে ৯৮, এলাসিন পয়েন্টে ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের জামালপুর পয়েন্টে ১৮, পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১১৯, ভাগ্যক‚ল পয়েন্টে ৭৪, মাওয়া পয়েন্টে ৬৮, সুরেশ্বর পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ৫, তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পয়েন্টে ৩০, মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টে ২৩, আড়িয়াল খাঁ নদীর মাদারীপুর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দীর্ঘ বন্যায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট নিয়ে চরম কষ্টে দিন দিন পার করছে বিভিন্ন জেলার ৪৭ লক্ষাধিক বানভাসি মানুষ। ত্রাণ স্বল্পতায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। খাদ্যের অভাবে দুর্ভোগ বেড়েছে গৃহপালিত পশু-পাখির। ভাঙছে সড়ক-মহাসড়ক, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাট-বাজার। ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধে আবারো ধস নেমেছে। ভেঙে গেছে ৪৫ মিটার নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। অভিযোগ রয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ারও। তবে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা হিসেবে পর্যাপ্ত চাল, নগদ টাকা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাদীপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৪৫ মিটার অংশ ধসে গেছে। এর আগে ওই স্থানে গত শনিবার ৮০ মিটার জায়গা ধসে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।
জামালপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে যমুনা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি । এতে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যার পানির কারনে দুর্ভোগ বেড়েই চলছে বানভাসী মানুষদের। তবে বন্যার্তদের দূর্ভোগ কমাতে ত্রান বিতরন কাযক্রম অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া বাঁধ, ব্রীজ,কালভার্ট ও উচু সড়কে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো খাবার সংকটের পাশাপাশি গরুর খাবার ও মলমুত্র ত্যাগে চরম সংকটে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৯ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪ এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বন্যার কারণে ঘরে বন্দি জীবন কাটছে বানভাসিদের। ক্রমেই ফুরিয়ে যাচ্ছে গবাদি পশুর খাদ্য এনিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। এছাড়াও আসন্ন ঈদের এই সময়টাতে তারা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা এনিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বানভাসি কৃষকরা আমনের বীজতলা নিয়ে বিপাকে রয়েছে।



 

Show all comments
  • সোলায়মান ২৯ জুলাই, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    একে তো করোনা তার ভিতরে আবার বন্যা। আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে হেফাজত করো
    Total Reply(0) Reply
  • রফিকুল ইসলাম ২৯ জুলাই, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
    এখন ভারত চাপে আছে এই চাপটাকে কাজে লাগিয়ে পানি চুক্তি করার মাধ্যমে এবং না পরিস্থিতি ও খড়ার সমাধান করা যেতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • ফজলুল হক ২৯ জুলাই, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 0
    সরকারি ও বেসরকারিভাবে বন্যার্ত মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • মারিয়া ২৯ জুলাই, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 0
    প্রতিবছর বন্যা এরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখান থেকে বাঁচার কোন উপায় বের করা যায় কিনা সেটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • পায়েল ২৯ জুলাই, ২০২০, ১:৫৩ এএম says : 0
    ওরা আমাদেরকে পানিতে মারছে খরায় মারছে তারপরও ওরা আমাদের বন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • মারিয়া ২৯ জুলাই, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
    স্থায়ী বেরিবাধ করা গেলে হয়তো ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াবহ

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ