Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপদে ধৈর্যধারণ একটি মহৎগুণ

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা একটি মহৎগুণ। আল্লাহপাকের কাছে এ গুণ অত্যন্ত প্রিয়। যারা ধৈর্যশীল, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন: যারা ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। (সুরা আল ইমরান : ১৪৬)। মানুষ ব্যক্তিগতভাবে, দেশ-জাতিগতভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিপদাপদে পতিত হতে পারে এবং হয়ও। ঝড়-বৃষ্টি, বান-বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টি-খরা, ভূমিধস, ভূমিকম্প, বজ্রপাত ইত্যাদির শিকার হয় মানুষ। অন্যদিকে বিভিন্ন রোগব্যাধি, মারি-মহামারির কবলে পড়তে হয়। সংঘাত-সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধেরও সম্মুখীন হয়। এ সবই তাদের জন্য বিপদ এবং অস্তিত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ।

মাটি, পানি, আকাশ, বাতাস -সব দিক দিয়েই মানুষের ওপর বিপদাপদ আপতিত হতে পারে। বিপদাপদ মানুষের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহপাক তা দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। বিপদাপদ যে মানুষের কৃতকৃর্মের ফল, তাও তিনি জানিয়েছেন। বলেছেন: তোমাদের যে বিপদ ঘটে, তা তোমাদেরই কর্মের ফল। (সুরা শুরা: ৩০)। বিপদ এলে আল্লাহতায়ালা সবাইকে ধৈর্যধারণ করতে বলেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন: তিনি ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা: ১৫৩)।

করোনা মহামারি বিশ্ববাসীর জন্য একটা ভয়ঙ্কর বিপদ। ভাইরাসজনিত মহামারি এর আগেও দেখা দিয়েছে কিন্তু করোনার মতো নয়। করোনার কারণে বিশ্বে প্রায় এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে অসহায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর না হচ্ছে। আগে আর কোনো মহামারিতে মানুষ এতটা নিরুপায় ও বিপন্নবোধ করেনি। এ মুহূর্তে সতর্ক ও সাবধান থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার বিকল্প নেই। আর বিপদ যত বড়ই হোক, ধৈর্যধারণ করতে হবে, আল্লাহর সাহায্যের প্রতীক্ষা করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, যাতে এই বালা ও মুসিবত থেকে তিনি আমাদের দূরে রাখেন, সুরক্ষা দান করেন।

যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহ ধৈর্যধারণ করার তাকিদ দিয়েছেন। এর মধ্যেই সফলকাম হওয়ার চাবিকাঠি নিহিত আছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন: হে বিশ্ববাসীগণ, ধৈর্যধারণ করো, ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো, সর্বদা প্রস্তুত থাকো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে সফলকাম হতে পার। (সুরা আল ইমরান: ২০০)। সুরা লুকমানে পুত্রের উদ্দেশ্যে মহাত্মা লুকমান যে সব উপদেশ প্রদান করেছেন, তার একটি হলো: তোমার ওপর কোনো বিপদ আপতিত হলে তুমি তাতে ধৈর্যধারণ করো। এটা অত্যন্ত মহৎ কাজ। আল্লাহ তায়ালার কাছে ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে অশেষ পুরস্কার।

তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই বলে: আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। ধৈর্যশীলদের অশেষ পুরস্কার দেয়া হবে। (সুরা জুমার: ১০)। হাদিসে কুদসিতে আছে: নিশ্চয়ই যখন কোনো বান্দা পীড়িত হয় তখন আল্লাহ তার ফেরেশতাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেন, ‘আমি আমার বান্দাকে আমার জিন্দানসমূহের একটিতে বন্দি করেছি। অতঃপর আমি যদি তার প্রাণ হরণ করি, আমি তাকে ক্ষমা করব। আর যদি সুস্থতা দান করি, তবে সে এমন অবস্থায় উঠে বসবে যেন তার কোনো গুনাহ নেই।’

কারা ধৈর্যশীল? আল্লাহ বলেছেন: তারাই, যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই আর নিশ্চিতভাবে আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোনো মুসলিম ব্যক্তি মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট পেলে, কোনো শোক বা দুঃখ পেলে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে যদি ধৈর্যধারণ করে, তাহলে আল্লাহ তার প্রতিদানে সকল গুনাহ মাফ করে দেন।

এমনকি যদি সামান্য একটি কাঁটাও পায়ে বিঁধে, তাও তার গুনাহ মাফের কারণ হয়। (বুখারী, মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন: যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যের শক্তি প্রদান করবেন। আর ধৈর্য থেকে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই দান করা হয়নি। (বুখারী, মুসলিম)।

আল্লাহপাক ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তার সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। যারা ধৈর্যশীল ও আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেহেশত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: (জান্নাত তাদের জন্য) কত ভালো পুরস্কার সৎকর্মশীলদের জন্য, যারা ধৈর্যধারণ করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। (সুরা আনকাবুত: ৫৮-৫৯)।

এই করোনাকালে, এই বন্যাদুর্যোগকালে আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্যধারণ করার শক্তি বৃদ্ধি করুন, ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন, তার কাছে এই প্রার্থনাই জানাই।



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ২৮ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত পুরো বিশ্ব। সব মানুষই চরম বিপদসঙ্কুল অবস্থা অতিবাহিত করছে। এ বিপদে ধৈর্যধারণ করা একজন মানুষের জন্য বীরত্বপূর্ণ কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ২৮ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    বিপদে ধৈর্যধারণে রয়েছে অনেক ফজিলত ও উপকারিতা। যার চূড়ান্ত নেয়ামত হলো মহান আল্লাহর সঙ্গে দিদার লাভ করা।
    Total Reply(0) Reply
  • দর্শন ই ইসলাম ২৮ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বলেছেন, মুমিন নারী-পুরুষের ওপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে। কখনও সরাসরি তার ওপর বিপদ আসে। কখনও তার সন্তান মৃত্যুবরণ করে। আবর কখনও তার ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যায়। সে এ সব মুসিবতে ধৈর্যধারণ করার ফলে তার অন্তর পরিষ্কার হতে থাকে এবং পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হতে থাকে। অবশেষে সে নিষ্পাপ আমলনামা নিয়ে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মিলিত হয়।' (তিরমিজি)
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ২৮ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    ধৈর্যধারণ করা এ কারণে বীরত্বপূর্ণ কাজ যে, যারা এ গুণের অধিকারী হয় তাদের জীবনে অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যারা এর বাইরে গিয়ে রুক্ষ ও বদমেজাজি হয়, যাদের ভাষা হয় কর্কশ, তারা জীবনে সফল হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ২৮ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    ধৈর্য একটি মহৎগুণ। মানুষের মেজাজের ভারসাম্যতা রক্ষা করা, আত্মসংযম অবলম্বন করা, বিপদে ভেঙে না পড়ে অটল-অবিচল থাকা, ত্বরিতগতিতে ফল লাভের আশা না করার নামই ধৈর্য।
    Total Reply(0) Reply
  • anwarul haque ৩১ জুলাই, ২০২০, ৩:২২ পিএম says : 0
    ধর্য্য ধারণ করতে করতে যদি জীবনটাই শেষ হয়ে যায় তবে এটার নাম আল্লাহর গজব নয় কী??? ]
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন