মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বজুড়ে এখনো আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে করোনাভাইরাস। এই মহামারির ফলে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে মানুষের জীবন, সমাজ ও অর্থনীতিতে। এর আগেও যুগে যুগে আঘাত হেনেছে মহামারি। তবে প্রথম কবে মহামারির শুরু হয়েছিল, সেই তথ্য এতদিন নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। কিন্তু এবার প্যালিওজিনোমিক্সের গবেষণা থেকে জানা গেল, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, প্রস্তর যুগেই প্রথম দেখা দিয়েছিল মহামারি। সে সময়কার এক পাটি দাঁতের জীবাশ্মের ডিএনএ বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে সেই ব্যাক্টিরিয়ার অস্তিত্ব।
মহামারির প্রচীনতম লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মেরও ৪৩০ বছর আগে আথেন্সে দেখা দিয়েছিল প্লেগ। মনে করা হয়, ৫ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিলেন তাতে। আধুনিক গবেষণা বলছে, সংক্রামক ব্যাধির ইতিহাস আরও পুরনো। পাঁচ হাজার বছর আগে প্রস্তর যুগে, এমনকি তারও আগে, মহামারির শিকার হত মানুষ। এর ফলে জীবনযাত্রায় সে যুগেও বিশাল পরিবর্তন হত। এখন যা করে চলেছে কোভিড-১৯। এর পরে আবার ১৬৫ খ্রিস্টাব্দে সেই প্লেগই ৫০ লাখ মানুষের জীবন শেষ করে দিয়েছিল।
এবার জানা গেল, মানবসভ্যতায় প্রথম মহামারী দেখা দিয়েছিল সেই প্রস্তর যুগে! আর তার ফলে মানবসভ্যতায় অনেক পরিবর্তন এসেছিল। প্রাচীন মানুষের দাঁতের ভিতরে পাওয়া ডিএনএ-র নমুনা পরীক্ষা করে জানা গেছে এই সব তথ্য। বিজ্ঞানের এই নতুন শাখাটিকে বলা হচ্ছে ‘প্যালিয়োজেনোমিক্স’। জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক মারিয়া স্পাইরোর মতে, করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করতে যে ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, ঠিক সেই রকম সরঞ্জাম দিয়েই কাজ করেন ‘প্যালিয়োজেনোমিক্স’ বিশেষজ্ঞেরা। প্রাচীন মানুষের কঙ্কালের দাঁতের ভিতর থেকে ডিএনএ বার করে আনার নতুন পদ্ধতি খুঁজে বার করেছেন তারা। ‘শটগান সিকোয়েন্সিং’ নামে বিশেষ পদ্ধতিতে সমস্ত জিনগত তথ্য বার করে, এবং তা বিশ্লেষণ করেই জানা যাচ্ছে ‘প্যাথোজেন’ বা জীবাণুর ইতিকথা। এই ভাবে আরও প্রসারিত হচ্ছে রোগের তথ্যভাণ্ডার। আর আজকের দিনে নতুন নতুন গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে তাকে।
ইতিমধ্যেই এই তথ্য ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে জীবাণু সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্য। যেমন, প্রস্তর যুগে যে ধরনের মহামারি (অনেকের মতে প্লেগ) ছড়িয়েছিল, তার থেকে পরবর্তী সময়ের মহামারির জীবাণুর জিনগত পার্থক্য রয়েছে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস হামলা চালাত ৭০০০ বছর আগেও। আমেরিকায় প্রতি বছর সালমোনেলা ব্যাক্টিরিয়ায় আক্রান্ত হন অনেকে। এখন দেখা যাচ্ছে, ৬৫০০ বছর আগেও এই ব্যাক্টিরিয়ায় অসুস্থ হতেন মানুষ। এমন আরও খোঁজ মিলছে সেই যুগের দাঁতের কল্যাণে।
ইউরোপজুড়ে 'ব্ল্যাক ডেথ'-এর আতঙ্ক ছড়ানো প্লেগের জীবাণু আর প্রস্তুর যুগের প্লেগের জীবাণু চরিত্রগত ভাবে অবশ্য কিছুটা আলাদা। প্লেগের জীবাণু খুব সহজে র্যাট ফ্লি-র মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ‘ব্ল্যাক ডেথ’ মহামারীর রূপ নিতে বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু প্রস্তর যুগে প্লেগের ব্যাক্টিরিয়া এমন পতঙ্গবাহিত ছিল না। গবেষকদের বিশ্বাস, মানুষ ও পশুর সহাবস্থানের কারণেই প্রস্তর যুগের প্লেগ সহজে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্লেগ বিষয়ক গবেষক সিমোন রাসমুসেনের কথায়, ‘এটাই সম্ভবত মানবসভ্যতার প্রথম মহামারী। প্রস্তর যুগে বিশাল বিশাল বসতি তৈরি করে প্রায় হাজার দশেক মানুষ একসঙ্গে থাকতেন। পশুর সঙ্গে তাদের সহাবস্থান ছিল, পরিচ্ছন্নতার বালাই ছিল না। সেখান থেকে প্লেগ ছড়ানো খুব সহজ।’
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্রিশ্চিয়ান ক্রিশ্চিয়ানসেনের মতে, প্যালিওজিনোমিক্সের এই গবেষণাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, প্রস্তর যুগে কী ভাবে জনবিন্যাসই পুরো বদলে গিয়েছিল। ক্রিশ্চিয়ানের কথায়, ‘এই মহামারীর কারণেই মাত্র কয়েকশো বছরে বসতির পর বসতি উজাড় হয়ে গিয়েছিল, আর ইউরেশিয়া থেকে উদ্বাস্তুদের দল এসে সেই এলাকা দখল করেছিল।’ এর আগে গবেষকদের অনুমান ছিল, মহামারীই প্রস্তর যুগের জনবিন্যাস বদলের কারণ। এখন তার প্রমাণও পাওয়া গেল। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।