পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোরবানির চামড়ার টাকা স্থানীয় মাদরাসার গরিব ছাত্র, এতিম-মিসকিনদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেয়ার রেওয়াজ শত শত বছর ধরে চলে আসছে। সেই গরিবের হক পকেটস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চামড়াখাত শিল্পের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রফতানিকারক কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। গত বছর কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট করে ফকির-মিসকিনদের ঠকিয়েছেন। এবার ঈদের আগেই গরিবদের ঠকাতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার পাঁয়তারা করেছেন। অবশ্য চামড়ার দাম যাতে মানুষ পায় সে লক্ষ্যে এবার সরকার শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, চামড়ার দাম ধরে রাখতে প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া রফতানি করা হবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এবার গরুর চামড়া ঢাকাতে প্রতিবর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এ দাম ছিল যথাক্রমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সে হিসেবে দাম কমেছে ঢাকায় ১০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৮ টাকা। গতকাল রোববার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত জুম প্ল্যাটফর্ম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ, ক্রয় বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুদ, চামড়ায় লবণ লাগানো ও মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল সভায় অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব শরিফা খানম, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব হোসেন প্রমুখ।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর ঢাকাতে গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বরকির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা ধরা হয়েছে। চামড়া নিয়ে যদি কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কাঁচা চামড়া পরিবহনে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এবারও যদি চামড়ার দামে সমস্যা দেখা দিলে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট-বøু লেদার বা আংশিক প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। এজন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি রপ্তানির বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়া নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুদ ও চামড়ায় প্রয়োজনীয় লবণ লাগানো তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি কমপ্রেহেন্সিভ মনিটরিং প্ল্যান গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় যৌথ সমন্বয় কমিটি, কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও মনিটরিং কমিটি, কন্ট্রোলরুম, ঢাকা ও নাটোর জেলার জন্য বিশেষ মনিটরিং টিম, বিভাগীয় ও জেলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন দপ্তর/সংস্থার সমন্বয়ে মনিটরিং টিম এবং সব জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সমন্বয়ে মনিটরিং টিম কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আশাবাদী গত বছরের মতো এ বছর চামড়া নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।
কিন্তু বসে নেই অসাধু ব্যবসায়ীরা। তার গত বছরের মতো সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়ার ক্রয় করতে ফন্দিফিকির করছেন। সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়া, কাঁচা চামড়া কিনতে নগদ টাকার সংকট, তীব্র গরমে সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকালে চামড়া নষ্ট হওয়ার অজুহাত তুলে কাঁচা চামড়ার দাম অর্ধেক কমিয়ে নির্ধারণ করতে চান ট্যানারি মালিকরা। প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম গত বছরের চেযে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমিয়ে তিন স্তরে দাম নির্ধারনে শলাপরামর্শ করছে।
ট্যানারি মালিক ও আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম কমানোর বিষয়ে দেশের ও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া খাতের দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। তারা এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও ঢাকার বাইরে উত্তরাঞ্চলের জন্য ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে চট্টগ্রামের জন্য ১৫ থেকে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করবেন। অন্যদিকে সারাদেশে খাসির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা, বকরির চামড়া ৭ থেকে ১০ টাকা এবং মহিষের চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা ধরার প্রস্তাব দেন।
সূত্র জানায়, চামড়াখাত শিল্পের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, রফতানিকারদের চামড়ার মূল্য অনেক কমিয়েছে সরকার। তারপরও তারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার মূল্য পকেটে পুরতে তৎপর। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে প্রতিবছরই কাঁচা চামড়ার দাম কমাচ্ছে সরকার। ২০১৪ সালের ৭৫ টাকা বর্গফুটের চামড়া ২০১৯ সালে নেমে এসেছে ৪৫ টাকায়। এ বছর তা ৩৫ টাকা করা হয়েছে। তাতেও নাখোশ চামড়া ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, গতবারের থেকে এবার ৩৩ শতাংশ দাম কমিয়ে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৩০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু করোনার কারণে স্থানীয়সহ বৈশ্বিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা না থাকলে চামড়া কিনে কী করব।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, সারা পৃথিবীতে ক্রেতারাই চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। দাম নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হলো ট্যানারি মালিকরা যদি বকেয়া টাকাটা দেয় তাহলে আমরা চামড়া কিনতে পারব। বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ। যার মধ্যে গরু-মহিষ প্রায় সাড়ে ৪২ লাখ। সারা বছরের মোট চামড়ার অর্ধেকই আসে কোরবানির পশু থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।