Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশি পশুতেই কোরবানি

বন্যা মোকাবিলায় মহাপরিকল্পনা সারাদেশে প্রস্তুত ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার গরু ও ছাগল

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

কোরবানির জন্য সারাদেশে প্রস্তত ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার গরু ও ছাগল। শুধু কোরবানি নয়, সারা বছরের গোশতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে দেশে উৎপাদিত গরু ও ছাগলেই। উপরন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এবার ২৬ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকার গোশত ও গোশতজাত পণ্য রফতানি করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন পশু সম্পদে সমৃদ্ধ। আর এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে মূলত; গ্রামে ব্যাপকহারে পশু পালন বেড়ে যাওয়ায়। 

দৈনিক ইনকিলাবকে এমনই তথ্য জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার। তিনি বলেন, করোনার কারণে এবারই প্রথম কোরবানির পশুহাটে জনসমাগম এড়াতে অনলাইন বেচাকেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে মিটিং করে বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তাদের অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনার সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে চালু হয়েছে অনলাইন পশুহাট।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাটে বেচাকেনা কমবেশি শুরু হয়েছে। ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে হাটগুলো। করোনায় খামারি, কৃষক ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জেলায় জেলায় কার্যক্রম চলছে ডিজিটাল হাটের। ঈদুল আজহার আর মাত্র বাকি ৬ দিন। ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ই-কমাস প্লাটফর্মে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, নোয়াখালি, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, বগুড়া ও খুলনাসহ বিভিন্নস্থানে কোরবানির পশু বেচাকেনা চলছে। এতে ঝামেলা কম হচ্ছে ক্রেতাদের। বিক্রেতারাও মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। বর্তমান ব্যবস্থাপনায় এড়াতে পারছেন দালালদের যন্ত্রণা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও আমাদের ব্যুরো অফিস মাধ্যমে জানা গেছে, সরকারি উদ্যোগে প্রায় সবখানেই একাধিক ডিজিটাল হাট চালু হয়েছে। সবার ক্ষেত্রে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে মাঠচিত্র হচ্ছে, কোরবানির হাটে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি গরু ও ছাগল উঠেছে। খামারি ছাড়াও কৃষকরা বাড়ি বাড়ি লালন পালন করা প্রচুর গরু ও ছাগল তুলেছেন হাটে। খামারি ও কৃষকদের অনেকেই আশঙ্কা করেছেন করোনার কারণে বহু গরু ও ছাগল এবার অবিক্রিত থাকবে।
সীমান্ত সূত্র জানায়, ভারতের গরু ব্যবসায়ীরা এবারও সীমান্তপথে কোরবানিকে সামনে রেখে বাংলাদেশে গরু পাচারের পাঁয়তারা করছে। বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করছে এপারের ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কেউই তাদের আহŸানে সাড়া দিচ্ছে না। কারণ কোরবানির পশুহাটে পর্যাপ্ত দেশি গরু ও ছাগল উঠেছে। দামও তুলনামূলকভাবে কম। দেশি গরুর গোশতের স্বাদও ভালো। গোশতের আঁশ মোটা নয়। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশি পশুতেই কোরবানি হবে। সূত্র আরো জানায়, সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি এবং চাহিদা না থাকায় ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা মোটেও সুবিধা করতে পারছে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, সারাদেশে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৪শ’ ১৬টি গরু ও ছাগলের খামার ছাড়াও গ্রাম-বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ লালন পালন করা হয়ে থাকে। এর সংখ্যা প্রায় অর্ধ কোটি। এই সেক্টরটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত করার ক্ষেত্রে সেক্টরটি বিরাট সহায়ক ভ‚মিকা রাখে। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় অর্ধকোটি কৃষক পরিবার গরু পালন করছেন। ফলে এই খাতে দ্রæত সফলতা এসেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা যশোরের উপ পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলাম মোল্যা জানান, একসময় কোরবানির পশুর জন্য ভারত ও মায়ানমারের মুখাপেক্ষী থাকতে হতো। এখন দেশ কোরবানির পশুতে সারপ্লাস। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষক ও খামারিদের যৌথ উদ্যোগ পাল্টে দিয়েছে চিত্র। যশোর অঞ্চলের বড় পশুরহাট বারীনগরে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর গরু কিন্তু ক্রেতা একেবারেই কম। তবে বিক্রেতাদের আশাবাদ, হাটের শেষ দিকে বেচাকেনা আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, আগে অনেক খামারে মোটাতাজাকরণে ‘স্টেরয়েড’ ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট ব্যবহার করা হতো। তাতে গরুর চামড়ার নীচে পানি জমে ফুলে যেত। এখন ইউএমএস পদ্ধতি অর্থাৎ ইউরিয়া ও চিটা গুড় পানিতে গুলিয়ে বিছালী বা খাবারে ছিটিয়ে দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। সুষম খাবার এবং নিয়মিত কৃমিনাশকের ব্যবস্থাসহ পশুপালনের ক্ষেত্রে খামারিদের সচেতনতা আগের চেয়ে বর্তমানে অনেকাংশে বেড়েছে।
কুষ্টিয়ার আসমত উল্লাহ, পাবনার হাবিবুর রহমান ও যশোরের জসিম উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানালেন, গরু লালন পালন করে তারা গত কয়েকবছর বেশ লাভবান হয়েছেন। কোরবানির পশু বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোন ঝামেলাও হয়নি। আগে ভারতীয় গরুতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানি

৯ জুলাই, ২০২২
৯ জুলাই, ২০২২
৮ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ