বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহপাকের বিধান ও সাজানো নিয়ম অনুসারে গোটা বছরে সাধারণত : দুইবার সূর্য গ্রহণের ঘটনা ঘটে। এই নিয়ম অনুসারে বর্তমান ২০২০ সালের প্রথম সূর্য গ্রহণটি সংঘটিত হয়েছে গত ২১শে জুন তারিখে। আর এ বছরের দ্বিতীয় সূর্য গ্রহণটি সংঘটিত হবে অগামী ১৪ই ডিসেম্বর। এই দুটি সূর্য গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়টি হলো ৫ মাস ২৩ দিন।
বর্তমানে সারা বিশে^র বুকে করোনা ভাইরাসের তান্ডব চলছে। ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল রাষ্ট্রেই করোনা দিন দিন থাবা বিস্তার করছে। তাই ৫ মাস ২৩ দিন সময়ের মধ্যে বর্তমান দুনিয়ার পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এককভাবে অথবা জোট বদ্ধ হয়েও যদি প্রচেষ্টা চালায় কিংবা নিজেদের হনুর হেকমত ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে তবুও করোনাভাইরাসের আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে কিংবা উৎখাত করতে সক্ষম হবে বলে মনে হয় না। কারণ, (করোনাভাইরাস এসেছে আকাশ হতে আল্লাহ পাকের নির্দেশে।
২০১৯ সালের দ্বিতীয় সূর্য গ্রহণ হয় ২রা জুলাই-এ। তারপরই করোনার অভ্যুদয় ঘটে এই পৃথিবীতে। কেননা, আল্লাহপাক যখন কোনও বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন তার কোনো রদবদল হয় না। তাই, করোনার ক্ষেত্রেও ফলাফলের তারতম্য কল্পনা করা বাতুলতামাত্র। এর জন্য সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদেরকে সবিনয় অনুরোধ করছি, আপনারা আল কোরআনের সূরা তুর-এর ৪৪ হতে ৪৬ নং আয়াতের অর্থ ও মর্ম পাঠ করুন; সূরা বাণী ইসরাঈলের ৮৮ হতে ৯৩ নং পর্যন্ত আয়াতের অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করুন; সূরা শোয়ারা-এর ১৮৪ নং আয়াত হতে ১৮৭ নং আয়াত পর্যন্ত বিবৃত তত্ত¡ ও গুঢ় মর্ম সম্পর্কে অবগত হোন; সূরা রূম-এর ৪৬ নং আয়াত হতে ৪৮ নং আয়াত পর্যন্ত বর্ণিত দিক নির্দেশনার প্রতি গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন; এবং সূরা সাবা-এর ৯ নং আয়াতের মর্মের প্রতি লক্ষ্য করুন; তাহলে মূল বিষয়টি উপলদ্ধি করা সহজ হবে বলেই আমরা মনে করি।
আর আমরা জানি এবং মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে, আল কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব। কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আর কোনো কিতাব নাযিল হবে না। মোট কথা, কিয়ামত পর্যন্ত আল কোরআনই সত্য বিধান হিসেবে বলবৎ থাকবে। এই কিতাবের নির্দেশাবলীর বাস্তবায়ন ঘটবেই। আল্লাহপাকের মর্জি মোতাবেক আল কোরআনই কেয়ামত পর্যন্ত সকল বিধান প্রদান করবে।
সকল অশক্তি পরাশক্তিওয়ালারা আল কোরআনের একটি যের, একটি যবর, একটি নোকতারও পরিবর্তন করতে পারবে না। বরং অতি নিকটতম ভবিষ্যতে তারা নিজেরাই হাতাহাতি ও গুতাগুতি করে। যেমন ধ্বংস হয়ে যাবে, তেমনি পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা’ কল্পনা করতেও বুক কেঁপে উঠে।
কেন এমনটি হবে, কি জন্য হবে? এর পথ নির্দেশনা মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে বহু পূর্বেই দুনিয়ার মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন। চলমান দুনিয়ার মানুষ বস্তুভিত্তিক বিজ্ঞান নিয়ে মাতাল হয়ে পড়েছে। বস্তুহীন আসল বিজ্ঞান আল কোরআনের বিজ্ঞানের প্রতি দৃষ্টিপাতই করছে না। অথচ বস্তুভিত্তিক ইজ্ঞান-বিজ্ঞান অতিশয় তুচ্ছ জিনিস মাত্র। বস্তুহীন বিজ্ঞানের সাগর আল কোরআনের এক ফোটা বিজ্ঞানের ধাক্কায় বস্তুময় বিজ্ঞানের সাজানো বাগান যে কোনো মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
এ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে যারা মনে করেন তাদেরকে সবিনয়ে বলছি, আপনারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি, পারমাণবিক অস্ত্র, এন্টম-ফেস্টমযোগে করোনাভাইরাসকে উচ্ছেদ করে দিন। দুনিয়াজোড়া মানবমন্ডলী অজানা অচেনা শক্তির নিগূঢ় হতে মুক্তি লাভ করবে, এবং অসহায় অবস্থায় মৃত্যুর হীমশীতল পরশ হতে রক্ষা পাবে। একই সাথে আপনারাও এই মজাদার দুনিয়ার স্বাদ-আহল্লাদ প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন। এটা কি চাট্টি খানি কথা?
মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্ব মানব মন্ডলীকে খেতাব করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন : হে মানবমন্ডলী? কিসে তোমায় তোমার দয়ালু প্রতিপালককে ভুলিয়ে দিয়েছে? যিনি তোমাকে সৃৃষ্টি করেছেন, তোমাকে আকৃতি দান করেছেন, তোমার দৈহিক সামঞ্জস্য বিধান করেছেন, তার ইচ্ছা মাফিক তোমার আকৃতি গড়েছেন। (সূরা ইনফিতাব : আয়াত ৬-৮)।
এই আয়াতে কারীমায় উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর আল্লাহপাক আল কোরআনের বিভিন্ন সূরায় অতি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। দুনিয়াবাসীদেরকে যে সকল বিষয়াদি আল্লাহ বিমুখ ও মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে, তা-হলো (ক) দুনিয়ার জীবনের মায়া (খ) আল্লাহপাকের নিদর্শনাবলির প্রতি কৃষ্টতা প্রদর্শন করা (গ) লোভ-লালসার বশবর্তী হওয়া (ঘ) আল কোরআনের বিধানাবলির প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা (ঙ) প্রতারক ও প্রবঞ্চকদের খপ্পরে নিজেদেরকে সোপর্দ করা (চ) পৃথিবীবাসীদের ওপর নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার বলবৎ করা ইত্যাদি। (সূরা জাসিয়া : আয়াত ৩৬; সূরা হাদীদ : আয়াত ১৪); সূরা আনয়াম : আয়াত ৭০, ১৩০; সূরা আ’রাফ : আয়াত ৫১; (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ২৪)।
এতে স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে, উল্লিখিত ছয়টি কারণ দুনিয়ার মানুষকে পেয়ে বসেছে। তাই, একদল নৈকট্যপ্রাপ্ত আহলে দিল বান্দাহ্র অন্তরে এই প্রভঞ্জন উত্থিত হয়েছে যে, ২০১৯ সালের ২রা জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সূর্য গ্রহণের পর আল্লাহপাকের কাহ্হারিয়াতের দরিয়ায় তুফান উঠেছে। তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, দুনিয়াজোড়া গজিয়ে ওঠা আল্লাহবিমুখ সমস্ত জঞ্জাল সাফ করতে হবে এবং দুনিয়ার সর্বত্র আল কোরআনের বিধান কার্যকর করতে হবে। দুনিয়ার বুকে আল কোরআনের বিধান ছাড়া আর কোনও বিধানের অস্তিত্ব রাখা হবে না।
তাই, দেখা যায় যে, ২০১৯ সালের ২রা জুলাইয়ের পর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সর্ব প্রথম পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানব বসতিপূর্ণ দেশ চীন থেকে আস্তে আস্তে গোটা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে করোনাভাইরাসের এই নিষ্পেষণে পৃথিবীর মানুষ কতদিন নিষ্পেষিত হতে থাকবে, তা বলা না গেলেও এতটুকু আঁচ করা যায় যে, এর ধাক্কা আরও জোরেশোরে লাগবে-এতে মোটেও সন্দেহ নেই। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল্্ বালাগ!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।