বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কিয়ামতের দিন বান্দার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন- আল্লাহর ক্ষমা। আল্লাহ যদি মাফ করে দেন, বান্দার আর কোনো চিন্তা নেই।
তো বিশেষ কী আমল করলে বান্দা কাল কিয়ামতের কঠিন মুহূর্তে রাব্বে কারীমের ক্ষমা লাভ করতে পারে? কত আমলের কথাই তো আমরা জানি, কত আমলই তো আমরা করি; যাতে ক্ষমা পাই রাব্বে কারীমের! কিন্তু কোন্ আমলটি সবচেয়ে উত্তম, যার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের আশা প্রবল? হাঁ, একটি অতি কার্যকর আমল আছে, যার মাধ্যমে আশা করা যায়- বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। আরবিতে একটি কথা আছে- ‘আলজাযাউ মিন জিনসিল আমাল’, অর্থাৎ ‘কর্ম যা, প্রতিদানও তার মাধ্যমে’। সুতরাং ক্ষমা করাই ক্ষমা লাভের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও কার্যকরী উপায়। আমি যদি মানুষকে ক্ষমা করে দিই, তো আশা করা যায়- এর প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
কোরআনে কারীমে আল্লাহ তাঁর ক্ষমার প্রতি ধাবিত হওয়ার আহ্বান করেছেন; সেখানে ক্ষমা লাভকারীদের যে গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে তার অন্যতম প্রধান হলো, মানুষকে ক্ষমা করে দেয়া। ইরশাদ হয়েছে- তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য; যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং ‘মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল’। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩-১৩৪)।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- তোমরা (অন্যের প্রতি) দয়া করো, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। তোমরা (অন্যকে) ক্ষমা করো, তোমাদেরকে ক্ষমা করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭০৪১)।
যে সূরার সুপারিশে ক্ষমা লাভ হয় : সূরা মুলক। ঊনত্রিশ নাম্বার পারার প্রথম সূরা। সূরা নাম্বার ৬৭। জীবনের উদ্দেশ্য, আল্লাহর কুদরত ও নিআমতের স্মরণ, আখেরাতে জাহান্নামীদের অবস্থা ও তাদের আক্ষেপ ইত্যাদি বিষয় রয়েছে এ সূরাটিতে। অনেক ফযীলত সম্বলিত সূরা এটি। এ সূরাকে বলা হয়, ‘মানেআ’-বাধাদানকারী, প্রতিবন্ধক। এ সূরাটি আমলকারীর জন্য কবরের আযাব থেকে প্রতিবন্ধক হবে। সুপারিশ করে বান্দাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরাটি তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। জাবের রা. বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) আলিফ লাম মীম তানযীল আসসাজদা (সূরা সাজদাহ) ও তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক (সূরা মুলক)- এ দুই সূরা তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৬৫৯)।
অন্যান্য ফজিলতের সাথে সাথে এ সূরার একটি বিশেষ ফজিলত হলো, এ সূরার আমলের মাধ্যমে ক্ষমা লাভ হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেছেন- কোরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, তা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে ফলে আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সূরাটি হলো, তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক -সূরা মুলক। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮৯১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।