Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানের নতুন বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২০, ৩:১৪ পিএম | আপডেট : ৪:৪৯ পিএম, ২০ জুলাই, ২০২০

আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট বালটিস্তানে পাকিস্তান সরকার একটি মেগা জলবিদ্যুৎ ও জলাধার প্রকল্প সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই দিয়ামির-ভাশা বাঁধ অপরিহার্য বলে জানিয়েছে সরকার। কিন্তু ভারত তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।

ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করে বলেছে, ‘সিন্ধু নদীর ওপর নির্মীয়মান ওই বাঁধটির কারণে কাশ্মীর ও লাদাখের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।’ বিশেষজ্ঞরাও অনেকে মনে করছেন, চীনের অর্থায়নে পাকিস্তান এই প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হলে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ৭০ বছরের পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি থেকেও সরে আসতে পারে।

বস্তুত গিলগিট বালটিস্তানে সিন্ধু নদীর ওপর দিয়ামির-ভাশা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বহু বছরের পুরনো হলেও পাকিস্তান সরকার এতদিন তার বাস্তবায়ন নিয়ে এগোতে পারেনি। অবশেষে গত মে মাসে চীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে এই বাঁধ নির্মাণে ২৬৪ কোটি ডলারের চুক্তি করে ইসলামাবাদ, আর তারপর গত বুধবার গিলগিট বালটিস্তানের চিলাস শহরে গিয়ে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

সেখানে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘দিয়ামির-ভাশা বাঁধ হবে পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম। চীনে যেখানে পাঁচ হাজার বড় বাঁধ আছে, সেখানে এইটা নিয়ে আমাদের হবে মাত্র তিনটে।’ তিনি বলেন, ‘এতদিন আমরা বিদেশ থেকে তেল এনে তা দিয়ে দামী বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি – কিন্তু এখন আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়েই বিদ্যুৎ তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই আক্ষেপের যে ৪০ বছর আগে সিদ্ধান্ত হলেও আজ পর্যন্ত আমরা দিয়ামির-ভাশা ড্যামের নির্মাণ শুরু করতে পারিনি!’

পাকিস্তানের এই ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই প্রকল্প নিয়ে নতুন করে প্রতিবাদ জানায় ভারত। দিল্লির প্রতিবাদের ভিত্তি ছিল দুটো। এক, তারা গিলগিট বালটিস্তানকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে আর দুই, এই বাঁধের কারণে কাশ্মীর ও লাদাখ ভেসে যেতে পারে বলে ভারতের আশঙ্কা। এ বিষয়ে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘আমরা পাকিস্তান সরকারের কাছে এই নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই ড্যামের কারণে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ ভূখন্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের নিচে চলে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া ভারতের যে সব এলাকা পাকিস্তান অবৈধভাবে অধিকার করে রেখেছে, সেখানে তাদের এই ধরনের কোনও প্রকল্প তৈরিরই এক্তিয়ার নেই।’

সিন্ধু নদীর ক্ষেত্রে ভারত হল উজানের দেশ, আর গিলগিট বালটিস্তান ভাঁটিতে। সে ক্ষেত্রে ভাঁটিতে তৈরি একটি বাঁধ উজানে কতটা বিপদের কারণ হতে পারে, সে বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর হিমালয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ও ভূতত্ত্ববিদ মৈত্রেয়ী চৌধুরী বলেন, ‘টোপোগ্রাফির কারণে এখানে ভারতের দিকটা যদি তুলনামূলকভাবে নিচু হয়, আর অন্য দিকটার এলিভেশন বেশি হয় – তাহলে কিন্তু জলাধারের জল উপচে নিচু দিকে চলে আসার সম্ভাবনা থাকেই!’ ভারতে উত্তরাখন্ডের গাড়োয়ালে তেহরি বাঁধ নির্মাণের সময়ও ঠিক একই জিনিস ঘটেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তেহরিতে বাঁধ নির্মাণের ফলে যেটা হয়েছে – বাঁধটা ওখানে অনেক ভাঁটিতে হওয়া সত্ত্বেও নিচু ভ্যালিগুলো কিন্তু অনেকটাই জলের তলায় চলে গেছে। এটা টোপোগ্রাফির কারণেই হয় – যে উপত্যকা বা ভ্যালিগুলো তুলনায় নিচু কিংবা যেখানে বেসিন মতো কিছু আছে সেটা পানির নিচে তলিয়ে যেতেই পারে।’

তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই বিরোধ কূটনৈতিক পথে না-মিটলে ভারত ৭০ বছরের পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি থেকে বেরিয়েও আসতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এই হুমকি দিল্লি আগেও একাধিকবার দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় করা ওই চুক্তি অনুসারে সিন্ধু অববাহিকায় সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলমের জলের ওপর মূল অধিকার পাকিস্তানের – আর বিয়াস, রাভি ও শতদ্রুর ওপর অধিকার ভারতের। মৈত্রেয়ী চৌধুরীর কথায়, ‘দেখুন ১৯৬০ সালে সই হওয়া এই সিন্ধু পানি ভাগাভাগি চুক্তিকে বেশ ভাল চুক্তিই বলতে হবে – কারণ এটা বেশ সফল, এবং এই চুক্তি নিয়ে তেমন বড় কোন বিতর্কও কখনও হয়নি। চুক্তিতে যে নদীগুলো পাকিস্তানের দিকে পড়েছে ওরা তো সেগুলোর সুবিধা নেবেই, ওই নদীগুলোর ওপর পাকিস্তান কিছু বানালে ভারত খুব কিছু সুবিধা করতে পারবে না – যদি না তাতে বিরাট কোনও পরিবেশগত ক্ষতি হয়! তবে আন্ত:সীমান্ত নদীগুলোর ওপর একটা দেশ কতদূর কী তৈরি করতে পারে, তার কিছু বিধিনিষেধ সব সময়ই থাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত দিয়ামার-ভাশা বাঁধের ক্ষেত্রেও বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা অন্য তৃতীয় পক্ষগুলো এর সম্ভাব্য ক্ষতির মাত্রা মূল্যায়ণ করবে, কিংবা হয়তো ইতিমধ্যেই করছে।’ ফলে চুক্তি অনুসারে সিন্ধুর ওপর বাঁধ নির্মাণের অধিকার পাকিস্তানের অবশ্যই আছে। কিন্তু দিয়ামির-ভাশা প্রকল্প সিন্ধু অববাহিকায় বন্যা ডেকে আনবে ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করবে, এই যুক্তি দেখিয়েই ভারত সেটি বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Md. Harun Or Ashid ২০ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৪ পিএম says : 0
    varoter Ak inchi jaygao kew dokhol nite parbena abar akhane pakisthan kivabe tader jayga dokhol korlo?
    Total Reply(0) Reply
  • aqa md fazlul haque ২০ জুলাই, ২০২০, ৮:৫২ পিএম says : 0
    But when they talk about Farakka, they forget what they talked about দিয়ামির-ভাশা dam
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed shaifuddin ২২ জুলাই, ২০২০, ৭:২৯ এএম says : 0
    India always want to make problem for Pakistan. May it good for Pakistan electricity for this not happy India. If India need like this dam which problem for Pakistan India never be wait and thing single minute to make dam.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সুমন আলী ২২ জুলাই, ২০২০, ৯:৩৮ এএম says : 0
    ......... ভারত সরকার মনে করে গোটা পাকিস্তান ওদের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ