মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নাগোরনো কারাবাখ নামে বিতর্কিত একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুসলিম আজারবাইজান এবং খ্রিস্টান সংখ্যাগুরু আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত ১০ জুলাই থেকে আর্মেনিয়ার উত্তর-পশ্চিমের তাভুশ সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যরা ট্যাংক ও কামানের মত ভারী অস্ত্র নিয়ে লড়াই করছে।
আজারবাইজানের সরকারি হিসাবেই একজন মেজর জেনারেল র্যাঙ্কের কর্মকর্তাসহ তাদের ১১ জন সৈন্য মারা গেছে। আর্মেনিয়াও স্বীকার করেছে, তাদের একজন মেজর এবং একজন ক্যাপ্টেনসহ তাদের চারজন সৈন্য মারা গেছে, যদিও আলজেরিয়া আর্মেনিয়ার পক্ষে মৃতের সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করেছে। এছাড়া উভয়পক্ষেই বেসামরিক লোকজনও মারা যাচ্ছে।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল ভাজিফ দারগিয়াখিলকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার গণমাধ্যম ‘প্রাভদা’ লিখেছে, আজারবাইজানের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো স্থাপনায় হামলা হলে আর্মেনিয়ার মেটসামোর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে।
ওই মুখপাত্র বলেন, ‘আর্মেনিয়া যেন মনে রাখে যে, আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আমাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিশেষ করে মিনগেচভিক জলাধারে আঘাত করলে, আর্মেনিয়াকে তার ভয়াবহ দুর্ভোগের স্বীকার হতে হবে।’
এদিকে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে হাজার হাজার মানুষ সহিংস বিক্ষোভ করে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় পতাকা নিয়ে মানুষজন ‘নাগোরনো কারাবাখ আজারবাইজানের‘ এবং ‘দ্রুত সৈন্য পাঠাও’ স্লোগান দিচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতির পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকেই মাথা ঠাণ্ডা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন’ এবং তিনি দুই দেশের মধ্যে দ্রুত শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, আজারবাইজানকে রক্ষায় আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করব।
উল্লেখ্য, নাগোরনো কারাবাখ নামে বিতর্কিত একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এই দুই দেশই এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, তখনও নাগোরনো কারাবাখ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। ওই সময় অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকলেও সেখানকার জনসংখ্যার সিংহভাগই জাতিগতভাবে আর্মেনিয়।
সোভিয়েত আমলে নাগোরনো কারাবাখ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর ১৯৮৮ সালে আজারবাইজান নাগোরনো কারাবাখের আঞ্চলিক সরকারকে উৎখাত করে।
ওই ঘটনার পরপরই সেখানকার জাতিগত আর্মেনিয়রা কার্যত বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। নাগোরনো কারাবাখের আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক গণভোট আর্মেনিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু হয়ে যায় ওই এলাকার আজেরি এবং আর্মেনিয়দের মধ্যে জাতিগত সংঘাত।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর ১৯৯২ সালের শীতে জাতিগত ওই সংঘাত স্বাধীন আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে পুরাদস্তুর যুদ্ধের রূপ নেয়। রক্তক্ষয়ী ওই যুদ্ধে আজারবাইজান থেকে প্রায় আড়াই লাখের মত আর্মেনিয় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে নাগোরনো কারাবাখ ছাড়তে হয়েছিল প্রায় লাখখানেক আজেরিকে।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৯৯৪ সালের মে মাসে যুদ্ধবিরতি হলেও আর্মেনিয়া নাগোরনো কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে জাতিগত আর্মেনিয়দের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। নাগোরনো কারাবাখ আজারবাইজানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অংশ হলেও এটির নিয়ন্ত্রণ আর্মেনিয়ার হাতে যা আজেরিরা কখনই মেনে নেয়নি।
ফলে যুদ্ধবিরতি মাঝপথেই ভেঙ্গে পড়ে এবং ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে চারদিনের রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ হয় যা রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের হস্তক্ষেপে থামে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চার বছর পর আবারও একটি যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।