পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিপদসীমার ওপরে প্রধান নদ-নদীর পানি : ভেঙে গেছে রৌমারী শহর রক্ষা বাঁধ
বৃষ্টি আর ভারতের ঢলে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, সুরমা, মেঘনাসহ দেশের প্রায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক স্থানে এসব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে ২০টি জেলার গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ভেসে গেছে অনেক মৎস্য খামার। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় দেশের ১৮ জেলা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত জেলাগুলোর ৯২টি উপজেলা ও ৫৩৫টি ইউনিয়নে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ জন। বন্যায় জামালপুরে চারজন এবং লালমনিরহাট, সুনামগগঞ্জ, সিলেট ও টাঙ্গাইলে একজন করে মোট ৮ জন মারা গেছেন। পানিবন্দি ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৬টি পরিবার। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা অববাহিকা এলাকায় পানি বাড়বে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী দু’দিনের মধ্যে নতুন করে আরও ৫-৬টি জেলায় বন্যা বিস্তৃত হতে পারে। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই থেকে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে উজানে ভারতের অরুনাচল, আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। অন্যদিকে আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিúাতের ফলে মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কুশিয়ারা ও আপার মেঘনায়, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভোগাই, কংস, ধনু, মগড়া, খোয়াই এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৩টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। একই সাথে নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও রংপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ধরলার পানি কিছুটা কমলেও দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। গতকাল বিকেলে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭৩ সেসিন্টমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৯৯ এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৬০ ইউনিয়নের ৫২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে গত বুধবার রাতে বন্যার পানির তোড়ে রৌমারী শহর রক্ষা বাঁধের ২০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। সেই সাথে নতুন করে ১০টি গ্রামসহ রৌমারী উপজেলা পরিষদ ও রৌমারী বাজার প্লাবিত হচ্ছে। গত বুধবার সকালে চিলমারীর মাছাবন্ধা গ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে রাকু মিয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত দু’দফা বন্যায় ১০ শিশু, ১ যুবক ও ২ বৃদ্ধসহ ১৩ জন পানিতে ডুবে মারা গেলো।
জেলার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়ক, রৌমারী-তুরাসড়ক, সোনাহাট-মাদারগঞ্জ সড়ক, ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট সড়ক ও ভিতরবন্দ-মন্নেয়ারপাড় সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও বন্যা কবলিতদের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বন্যার শিকার পরিবারগুলো চুলা জ্বালিয়ে রান্না করতে পারছে না। পশু খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানিরও (সুপেয়) সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ফসলি জমিগুলো তলিয়ে থাকায় আমন ধানের চারাগুলো নষ্ট হচ্ছে। সরকারি হিসাবে দু’টি উপজেলায় ছয় হাজার ২৭০টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৪৭টি পরিবার।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, ভারী বর্ষণ ও ভারতের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে ৪ শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামার। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির রবি শস্য, বীজতলা এবং আমন ক্ষেত।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, দ্বিতীয় দফায় অতিবর্ষণ ও ভারত থেকে আসা ঢলের কারণে টাঙ্গাইলের যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীসহ অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভ‚ঞাপুর, গোপালপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার ১৫১টি গ্রাম নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে। যমুনার পানি গতকাল যোকারচর পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ধলেশ্বরীর পানি এলাসিন পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নাগরপুরে একটি স্কুল নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। আরও ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাগরপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা, মাইধাইল, নিশ্চিন্তপুর, কাঠালতলি গ্রামে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শদ জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মাওয়া এবং ভাগ্যকুল পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লৌহজং উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১২শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, সপ্তাহকাল মেঘনার পানি হঠাৎ ফুলে ফেঁপে উঠে। পরিস্থিতিতে বাজার এলাকার মদিনা মসজিদ ট্রলার ঘাটে পানি উপরে উঠে যায় এবং ঘাটে ভিড়ানো ব্যবসায়ীদের মালামালের ট্রলারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখান দিয়ে মেঘনার তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। হরিসভা রাস্তার মোড় থেকে বাতাসা পট্টি এলাকা পর্যন্ত ভাঙন মোকাবেলায় ব্যবস্থা না নিলে পুরাণ বাজারের অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এখন বন্যা কবলিত। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬ হেক্টর জমির পাট, আমন বীজতলা, আউশ ধান ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৭ উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের বসত বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা এসব পরিবারে কাজ না থাকায় খাবার সঙ্কট রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, ভারতের ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে কাজিপুরের ওয়াপদা বাঁধ চুঁয়ে অনেক স্থানে পানি আসছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, তেকানি ও শুভগাছা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানি ওঠায় বন্ধ হয়ে গেছে নিশ্চিন্তপুর, মনসুর নগর ও নাটুয়ারপাড়া ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতাল। বন্ধ হয়ে গেছে চরাঞ্চলের ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, আত্রাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তিন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি কিছুটা কমলেও গতকাল বিপদসীমার প্রায় ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে বাঁধ ভেঙে যাবার ফলে আত্রাই-সিংড়া এবং আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে আত্রাই-সিংড়া এবং আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
রাজশাহীর বাগমারা থেকে মো. আলতাফ হোসেন জানান, উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে বন্যা। পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত হয়েছে গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, আউচপাড়া, সোনাডাঙ্গা, গনিপুর শুভডাঙ্গা, কাচারী কোয়ালীপাড়া, শ্রীপুর, তাহেরপুর পৌরসভার কিছু অংশ, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা, বাসুপাড়া, দ্বীপপুর, যোগীপাড়া, গোয়ালকান্দি, হামিরকুৎসাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।