মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনাভাইরাস নিয়ে খাবি খাচ্ছে এবং ক্রমশ আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, বেইজিং মার্কিন দুর্বলতা কাজে লাগাতে শুরু করেছে। ইরানের সাথে চুক্তির খসড়াটি দেখায় যে, বেশিরভাগ দেশ থেকে ভিন্নমত সম্পন্ন চীন মনে করে যে, সে যুক্তরাষ্ট্রকে অবজ্ঞা করার মতো অবস্থানে রয়েছে এবং মার্কিন শাস্তি প্রতিরোধ করার পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী, যেমনটি সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বারা পরিচালিত বাণিজ্য যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান করছে। এদিকে, চুক্তির খসড়া সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র লিখেছেন, ‘যেসব চীনা সংস্থাগুলি বিশ্বের বৃহত্তম সন্ত্রাসবাদের সর্বাধিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক ইরানকে সহায়তা করে, তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় আরোপ করতে থাকবে।
চীনা কোম্পানিগুলিকে ইরান সরকারের সাথে অনুমোদনযোগ্য কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি বা উৎসাহিত করার মাধ্যমে চীন সরকার স্থিতিশীলতা এবং শান্তি প্রচারের নিজস্ব নির্ধারিত লক্ষ্যকে ক্ষুণœ করছে।’ চীনের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের পারমাণবিক চুক্তি পরিত্যাগের পর ইরানে একটি বিস্তৃত বিনিয়োগ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বেইজিংয়ের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান অধৈর্যতার ইঙ্গিত দেয়। চীন বারবার এই চুক্তিটি সংরক্ষণের জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছে এবং একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করেছে। বেইজিংয়ের চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি জ্বালানি গবেষক আলী ঘোলিজাদেহ্ বলেছেন, ‘ইরান ও চীন উভয়ই এই চুক্তিটিকে কেবলমাত্র তাদের নিজস্ব স্বার্থ সম্প্রসারণই নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলার কৌশলগত অংশীদারিত্ব হিসাবে দেখছে।’ এভাবে মিত্র হিসাবে অন্যতম বিশ্ব পরাশক্তিকে পাশে পাওয়া ইরানের পক্ষে এই প্রথম। কৌশলগত অংশীদারিত্বের ইরানি সমর্থকরা বলছেন যে, ইরানের সীমিত অর্থনৈতিক বিকল্পের কারণে পতনশীল মুদ্রামান এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি অপসারণের অস্পষ্ট সম্ভাবনার কারণে চীনের সাথে এই চুক্তি দেশটির জন্য সঞ্জিবনী হিসেবে কাজ করবে।
তবে, ইরানের রাজনৈতিক ক্ষেত্রজুড়ে সমালোচকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলিতে পূর্ববর্তী চীনা বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি বেইজিং কর্তৃপক্ষের কাছে দেশগুলিকে ঋণী এবং দায়বদ্ধ করে রেখেছে। বিশেষ করে ওমান সাগরের উপক‚লে ইরানের দুটি পাশাপাশি প্রস্তাবিত বন্দর সুবিধাগুলি সমালোকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। সেগুলির একটি হ’ল জাস্ক। বিশ্বের বেশিরভাগ তেল পরিবহন করা পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথে হরমুজ প্রণালীর ঠিক বাইরে ইরানের বন্দর শহর জাস্কে চীনের বিচরণ চীনকে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্র আধিপত্যে একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার দেবে। এই প্রণালীটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উপসাগরীয় অঞ্চলের বাহরাইনে ৫ম মার্কিন নৌবহরের ঘাঁটি রয়েছে।
চীন ইতোমধ্যে ভারত মহাসাগরে একাধারে বিভিন্ন বন্দর নির্মাণ করেছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে সুয়েজ খাল পর্যন্ত পুনরায় জ্বালানির এবং রসদ সরবরাহের জন্য হারের মতো করে ঘেরাটোপ কৌশলে স্টেশনগুলি তৈরি করেছে দেশটি। বাহ্যত বাণিজ্যিক প্রকৃতির হলেও বন্দরগুলির সম্ভাব্য সামরিক মূল্যও রয়েছে, যা চীনের দ্রæত বর্ধমান নৌবাহিনীকে তার লক্ষ্যের নাগালে পৌছে দেবে। এগুলির মধ্যে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা এবং পাকিস্তানের গাদার বন্দর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলি চীনের সম্ভাব্য সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত, যদিও সেগুলিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও চীনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি।
চীন ইরানের সাথে সামরিক সহযোগিতাও বাড়িয়েছে। দেশটির পিপলস লিবারেশন আর্মি নৌবাহিনী ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে এপর্যন্ত কমপক্ষে ৩ বার ইরানের সাথে সামরিক অনুশীলনে অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে চীন তার একটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী অস্ত্র জিনিং সহ উপসাগরীয় অঞ্চলে রাশিয়ান এবং ইরানি নৌবাহিনীর সাথে এক নৌ মহড়ায় যোগ দেয়। এপ্রেক্ষিতে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল হোসেইন খানজাদিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এই মহড়াটি দেখিয়ে দিয়েছে, এই অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসনের যুগ শেষ হয়ে গেছে।’ (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।