পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ ধারা বজায় থাকলে খুব শিগগিরই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে : প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত
দীর্ঘদিন থেকেই অস্থিরতা পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের দাবি ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের। তবে অনেক পরে হলেও পরিবর্তন হয়েছে। গত ১৪ মে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়। আর তার স্থলাভিষিক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডীন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। করোনা মহামারির মধ্যে যোগদান করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকারীদের আস্থা ফেরাতে গতিশীলতা আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আগের ধারা পরিবর্তন করতে পারছিলেন না বর্তমান চেয়ারম্যান। তবে তার গতিশীল নেতৃত্বে ও নানামুখী পদক্ষেপে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় পরিণত হচ্ছে পুঁজিবাজার। মহামারি প্রকোপ চললেও আতঙ্ক দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। দেখা মিলছে বড় উত্থানের। একই সঙ্গে গতি বাড়ছে লেনদেনেও। বাজেটে বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় পুঁজিবাজার সামনে আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে খারাপ আইপিও তালিকাভুক্ত হবে না বলেও বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো যেন কয়েক ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারে সে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এর মাধ্যমে একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরির কথা বলেছেন। এছাড়া শৃঙ্খলা ফেরাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২২টি কোম্পানির ৬১ পরিচালককে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ নিয়ে ৪৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে এসব পরিচালককে পদ অপসারণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আইন অনুযায়ী নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্বের মতো নির্ধারিত সময়ে কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের (পিএসই) সকল কার্যক্রম এবং এজিএম ও ইজিএম করার নির্দেশ দিয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। নতুন কমিশনাররা বিনিয়োগকারীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে নিয়ম-কানুন মানায় গুরুত্ব দিয়েছেন। করপোরেট গভরন্যান্সে জোর দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং অর্থ রক্ষায় দ্রæত পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাজারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরেছে। আগামী ১ সপ্তাহ থাকলে বাজার উঠে যাবে। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ৮০ ভাগ স্থানীয় বিনিয়োগ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। তিনি বলেন, গতকাল সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। আশাকরি দু’এক দিনের মধ্যে ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়াবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতোদিন যে আস্থার যে ফাটল ছিল, তা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত।
সূত্র মতে, করোনার প্রকোপ সামাল দিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলেও অফিস, দোকান, শপিংমল, রেঁস্তোরা সব কিছুই খুলছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষেরও বাহিরে বের হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন মাস পর গত বুধবার স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে দেশের শেয়ারবাজার। স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেই মূল্য সূচকের বড় উত্থানের দেখা মিলে। একই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনও। ওই দিনের উত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে গতকালও। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেন।
গতকাল লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেনের শেষ দিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাড়ে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৯৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে যে হারে লেনদেন হচ্ছিল তা খুবই হতাশাজনক। অবশ্য বুধবার থেকে বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন চালুর পর দুই দিন তুলনামূলক ভালো লেনদেন হয়েছে। আশাকরি আস্তে আস্তে বাজারে গতি ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই সব ধরনের অফিস খুলছে। কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে। যদিও আগের অবস্থা নেই এরপরও অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলছে। এর ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাছাড়া অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম অনেক দিন ধরেই ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম চললেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরও অনেক সময় লাগবে। এর মধ্যে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হবে। শেয়ারবাজার এখন যেমন বাড়ছে, হুট করে পতনও হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের এখন ধৈর্য্য সহকারে সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিনিয়োগকারী এহতেশামুল হক বলেন, অনেক দিন পর শেয়ারবাজারে পর পর দুই দিন মোটামুটি বড় উত্থান দেখলাম। এতে কিছুটা ভালো লাগছে।
সূচকের বড় উত্থান হলেও এদিনও লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য ডিএসইতে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে তার থেকে দ্বিগুণের বেশি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া ১০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এর মাধ্যমে পর পর দুই দিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ল। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার দিনে দরপতন হয়েছে ৪৫টির। আর ২০১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৩১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৭ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ১৯৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৯টির, কমেছে ২৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১৮টির।
এদিকে পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি। বিএসইসি থেকে জানা গেছে, যে ২২ কোম্পানির ৬১ পরিচালককে নোটিশ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগই বিমা খাতের কোম্পানি। ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে হলে ওই কোম্পানির ন্য‚নতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ওই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন পরিচালক পদে থাকতে হলে এসব পরিচালককে হয় নতুন করে শেয়ার কিনতে হবে নয়তো পদ ছাড়তে হবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীন বলেছেন, পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে স্থানীয় ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য বিএসইসিকে একটি উপায় খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগে নজর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।