পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রামের বাড়িতে বা অন্য কোনো স্থানে আত্মীয় বা নিকটজনকে দিয়ে পশু কিনে জবাই করে গোশত অসহায়দের ভাগ করে দিলে কোরবানি আদায় হবে
পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটিতে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু কোরবানি করেন। অত্যন্ত আনন্দ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় দিনটি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। মহামারি করোনাভাইরাসের জন্য মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং চল্লিশ থেকে পঞ্চাশজন মারা যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, এবার কিভাবে কোরবানি করবেন তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
দেশের বিশিষ্ট আলেম ওলামা বলেছেন, ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করা একটি সুনির্দিষ্ট ওয়াজিব বিধান। বিধানটি পালন করতে হয় নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে। এই বিধানটি কেবল পশু কোরবানির মাধ্যমেই পালন করতে হবে; এর বাইরে অন্য কোন উপায়ে তা পালন করা যাবে না। কোরবানির পশু কেনার টাকা গরিব অসহায়দের মধ্যে দান করে দিলে হবে কি না, এ বিষয়টিও এখন আলোচনায় উঠে এসেছে। দেশের খ্যাতিমান আলেম ওলামার স্পষ্ট বক্তব্য হলো পশু জবাই ছাড়া কোরবানি আদায় হবে না। পশু কোরবানির মাধ্যমেই এ বিধানটি পালন করতে হবে। তবে করোনার এই পরিস্থিতিতে কেউ নিজে গরুর হাটে না গিয়ে বা গোশতের সংস্পর্শে না গিয়েও কোরবানি আদায় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কাউকে দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করে সেটা নিজ গ্রামে বা অন্য যে কোন স্থানে জবাই করে গরিব-অসহায়দের মধ্যে গোশত ভাগ করে দিতে পারেন। তাহলে কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানি আদায় করা কি সম্ভব? দেশের বিভিন্ন মাঠে বা খোলা জায়গায় পশুর হাট বসিয়ে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানা কি সম্ভব হবে? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী বা অন্যান্য শহরে খোলা মাঠে কোরবানির গরুর হাট বসলে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার আরও বাড়বে। এতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেকে পশুর হাট এড়িয়ে অনলাইনে কেনার চিন্তা করছেন। তবে অনলাইনে পশু কেনার পর এটি জবাই করা এবং গোশত কাটা বা প্রসেস করার ঝামেলা থেকেই যায়। কসাই দিয়ে এ কাজ করালেও তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমিত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই কিভাবে কোরবানি আদায় করা যায় এ নিয়ে সবাই চিন্তিত।
এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, কোরবানি না করে তার অর্থ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করা একটি সুনির্দিষ্ট ওয়াজিব বিধান। বিধানটি পালন করতে হয় নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে। এটা ওয়াজিব বিধান, ইসলামের গুরুত্বপ‚র্ণ শেয়ার। গত জুমার খুতবায়ও এ বিষয়ে তিনি বিশদ আলোচনা করেন। তিনি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলোÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ, কোরবানি জিনিসটা কী? জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, এটা হচ্ছে তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এ গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধানটি অবশ্যই পালন করবো। যার ওয়াজিব তাকেই এটি পালন করতে হবে। জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার যেকোনো একটির সমপরিমাণ সম্পত্তি) তার জন্য গরু, মহিষ, উট এগুলোর একটা অংশ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানি করা ওয়াজিব।
এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান জানতে চাইলে ইসলামিক ল রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা শহীদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, কোরবানির জন্য পশু জবাই করা অপরিহার্য বিধান। এর বদলে টাকা দান করলে কোরবানি আদায় হবে না। আমাদের অনুসৃত ফিকাহ মতে কোরবানি করা ওয়াজিব।
দেশের অন্যতম সেরা স্থাপত্য নিদর্শন বেলাবো শাহী জামে মসজিদের খতিব প্রফেসর ড. মুফতি খলিলুর রহমান খান বলেন, পশু জবাই ছাড়া কোরবানি আদায় হবে না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি অনুসরণ করে কোরবানি দিতে হবে। এক্ষেত্রে যারা নিজেরা করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে চান তারা নিজের গ্রামে কোরবানির ব্যবস্থা করে সাধারণ মানুষের মধ্যে গোশত বন্টন করে দিতে পারেন। গ্রামে বা নিকটজনের মাধ্যমে যে কোন স্থানে পশু ক্রয় করে তা জবাই করে গোশত গরিব-অসহায়দের বিলিয়ে দিলে কোরবানি আদায় হবে। পশু জবাই করা ছাড়া কেবল টাকা দিয়ে দিলে এই ইবাদতটি আদায় হবে না।
ইসলামী ফিকাহ ও ফতওয়া বোর্ড ঢাকার সহকারি মুফতি মাওলানা শরিফ আবদুল্লাহ বলেন, শরিয়তের বিধান ও স্বাস্থ্য, এ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বিঘেœ আল্লাহর দেয়া প্রাণী তারই হুকুমে তারই সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করলে দেশ জাতি ও মানবতার কল্যাণ হবে। সমৃদ্ধি উন্নয়ন ও পরকালের সওয়াবের আশায় কোরবানির মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।