বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘আল খালকু ইয়ালুল্লাহ’। অর্থাৎ গোটা সৃষ্টিক‚ল আল্লাহর পরিবারস্বরূপ। হাদীসের এ চিরন্তন বাণীর মর্ম ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষভাবে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা হিসেবে মানবের ক্ষেত্রে। তাই কোরআনে মানব সেবার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে নানা স্থানে এবং নানাভাবে। উদাহরণস্বরূপ, কয়েকটি আয়াতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা দান-খয়রাত সম্পর্কে বলেছেন, ‘হে মুসলিম সমাজ! আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন, সব বিষয়ে সুবিচার করতে, সবার কল্যাণ সাধন করতে এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করতে, আর তিনি (তোমাদেরকে) নিষেধ করছেন সমস্ত অশ্লীলতা হতে, সকল প্রকারের নিষিদ্ধ ও সুরুচি বিগর্হিত (কাজ) হতে এবং সমস্ত উচ্ছৃঙ্খলতা হতে তোমাদের তিনি (এই মতে) উপদেশ দিচ্ছেন, যে মতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।’ (সূরা: নাহল)।
আল্লাহতাআলা আরো বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনবর্গকে দান করবে’। দান বলতে সকল প্রকারের দানকে বোঝায়। শিক্ষা দানও এই দানের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দুস্থ, আত্মীয়-স্বজনবর্গকে আর্থিক সাহায্য দানই আয়াতের লক্ষ্য। অনেক লোক এরূপ আছে যে, দারুণ দুর্দশায় পতিত হয়েও তারা বাইরের লোকের কাছে হাত পাততে পারে না। এই শ্রেণির লোকদের খবরগিরি করা এবং যথাসম্ভব গোপনীয়তার সাথে তাদেরকে সাহায্য পৌঁছিয়ে দেয়া, অবস্থাপন্ন আত্মীয়দের একান্ত কর্তব্য। অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরা নিজ নিজ এলাকায় আল্লাহর এই হুকুমটা পালন করতে অভ্যস্ত হলে, অভাবের মারাত্মকতা কমে আসবে।
অপর একটি আয়াতে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তার মধ্যবর্তিতার পরবর্তী আবাস সম্বন্ধে চেষ্টা কর, দুনিয়ার ব্যাপারে তোমার যে অংশ নির্ধারণ হয়েছে, তাকেও বিস্মৃত হয়ো না। আর দেশে ফেৎনা-ফাসাদ ঘটাবার চেষ্টা করো না, নিশ্চয় ফাছাদী লোকদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সূরা : কাছাছ)। এই আয়াতেও আল্লাহপাক মানুষের উপকার ও কল্যাণ করার আদেশ দান করেছেন। হাদীসে জনসেবা ও জন-কল্যাণমূলক কাজের যে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তার কিছু নমুনা প্রদত্ত হলো:
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আদমসন্তান! আমি পীড়িত হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি। বান্দা উত্তর করবে, হে প্রভু! আপনি বিশ্বের প্রতিপালক, আমি কীরূপে আপনার সেবা করতাম? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা পীড়িত হয়ে সাহায্য কামনা করেছিল, তুমি তার সেবা করনি। যদি তার সেবা করতে, আমাকে তার নিকটে পেতে।
তিনি পুনরায় বলবেন, হে আদমসন্তান! আমি তোমার নিকট ক্ষুধার্ত হয়ে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি দাওনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আপনি তো বিশে^র সকলেরই খাদ্যদাতা, আমি আপনাকে কীরূপে খাদ্য দিতাম? তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল, তুমি সঙ্গতি থাকা সত্তে¡ও তাকে খাদ্য দাওনি। যদি দিতে তবে সে খাদ্য আমার নিকট পেতে।
তিনি আবার বলেবেন, হে আদমসন্তান! আমি পিপাসার্ত হয়ে তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, তুমি দাওনি। বান্দা বলবে, বিশে^র প্রতিপালক প্রভু আমার! আমি কীরূপে আপনার পিপাসার পানি দিতে পারতাম? আল্লাহপাক বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পিপাসায় কাতর হয়ে পানি চেয়েছিল, তুমি দাওনি। যদি দিতে তবে সে পানির বদলে আজ জান্নাতের সুস্নিগ্ধ বারিধারা পান করতে।’ (মেশকাত)
হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ভ্রাতার দিকে হাসি মুখে তাকানো, তোমার জন্য একটি সদকা বা পুণ্য কাজ। কাউকেও কোনো ভালো কাজের উপদেশ দান করা একটি সদকা, মন্দ কাজের নিষেধ করা একটি সদকা, পথে-প্রান্তরে মানুষকে পথের সন্ধান দেওয়া সদকা, দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে পথ চলতে সাহায্য করা সদকা, মানুষের চলার পথ হতে কাঁটা, পাথর ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা সদকা এবং তোমার বালতি হতে অন্যের বালতিতে পানি দেওয়া সদকা।’
হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান কোনো বৃক্ষরোপণ করে অথবা শস্য হতে বুনানী করে, তৎপর তা হতে কোনো মানুষ, পাখি কিংবা পশু কিছু ভক্ষণ করে তবে এই ভক্ষিত দ্রব্যগুলোকে সদকারূপে গণ্য করা হবে।’
হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পীড়িত ব্যক্তিকে দেখতে বা সেবা করতে যায়, আকাশ হতে একজন ঘোষণাকারী তাকে সম্বোধন করে বলতে থাকে, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টের কাজ করেছ। তোমার এই কাজ সমধিক কল্যাণদায়ক হয়েছে এবং এই কাজের দ্বারা তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান সংগ্রহ করেছ।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।