Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া মুসলমানেরাই টার্গেট

প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেহেদী হাসান পলাশ
আকবর উদ্দীন সাহেব একটি সরকারি ব্যাংকের চাকুরে। ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। প্রতিদিন সকালে বের হয় ও ফেরে রাতে। সারাদিন ছেলে কোথায় থাকে, কি করে, কাদের সাথে মেশে এ নিয়ে আকবর উদ্দীন সাহেব ও তার স্ত্রীর চিন্তার অন্ত ছিল না। একদিন ছেলের সাথে বাজার থেকে ফেরার সময় গলির মাথায় একদল তাবলিগি লোক দেখতে পান। তারা সালাম দিয়ে আকবর উদ্দীন সাহেব ও তার ছেলেকে নিকটবর্তী মসজিদের পরবর্তী জামায়াত শেষে তাদের বয়ান শুনতে আমন্ত্রণ জানান। আকবর উদ্দীন সাহেব সপুত্রক মসজিদে গিয়ে জামায়াত শেষে তাবলিগি বয়ান শোনেন। বয়ান শেষে তাবলিগি দলের আমীর আকবর উদ্দীন সাহেবের ছেলেকে ৩ দিনের জন্য তাদের সাথে তাবলিগে পাঠানোর অনুরোধ করেন। এমনিতেই ধর্মভীরু মানুষ, তার উপর তাবলিগি বয়ান শুনে মনটা আরো নরম হয়েছিল। আকবর উদ্দীন আর না করতে পারেননি। আকবর উদ্দীনের ছেলে আরিফ তাবলিগের সাথে চিল্লা দিয়ে আসার পর তার চালচলন দ্রুত বদলে যেতে থাকে। দাড়ি কাটা থেকে শুরু করে শার্ট প্যান্ট পর্যন্ত পরতে অস্বীকার করে। তার স্থলে পাঞ্জাবী পরতে শুরু করে। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে। আগের মতো গলির মুখে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে সময় মতো বাড়িতে ফেরে। ইন্টারনেট, ফেসবুকে সময় কমিয়ে ধর্মীয় বই পুস্তক পড়ে। আকবর উদ্দীন সাহেব বিস্ময়ের সাথে যখন দেখলেন, এতো কিছুর পরও তার ছেলের সেমিস্টার রেজাল্ট আগের থেকে অনেক ভাল হতে শুরু করেছে তখন আর খুশী তাদের ধরে না। তারা কেউই ছেলের এই পরিবর্তনে বাধা দেন না। বরং মনের মধ্যে জেঁকে বসা ছেলে বখাটে মাদকাসক্ত কিংবা জঙ্গীবাদী হয়ে যাওয়ার দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা একেবারে দূর হয়ে যাওয়ায় ইদানিং শরীর-মনও ভাল থাকছে। ধীরে ধীরে ছেলেটি আরো বেশি তাবলিগের সাথে জড়িয়ে পড়ায় দিনের অনেক সময়ই কাটায়। মাঝে মাঝেই তাবলিগি সফরে বেশ কয়েকদিনের জন্য বাড়ির বাইরে থাকে। এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না তাদের। গলির সকলে, আশেপাশের প্রতিবেশীরা আরিফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যুগ জামানা চিন্তা করে নিজের ছেলের প্রতি আকবর সাহেবও খুশী ছিলেন। কিন্তু গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে বোমা হামলা পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ ও সরকারি নানা বয়ান, গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরাখবর আকবর উদ্দীনের মত অভিভাবকদের খুবই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তিনি জানেন যে, তার ছেলে সন্ত্রাসবাদের ঘোর বিরোধী। তবু আকবর উদ্দীনের সংশয় কাটে না। ছেলে ঘরের বাইরে কোথায় কার খপ্পরে পড়ে বা সন্দেহের শিকার হয়। এই দুঃশ্চিন্তায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর ঘুম হারাম হবার উপক্রম। এক সময় যে পরিবর্তন তাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করেছিল আজ তাই তার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
গত ১ জুলাই ২০১৬ তারিখের পর থেকে বাংলাদেশে আরিফের মতো ধর্মপ্রাণ ছেলের আকবর উদ্দীনের মতো পিতার এই এক নতুন দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। ইসলামের নাম ব্যবহার করে কিছু যুবককে সন্ত্রাসবাদী কাজে ব্যবহার করে ইসলাম বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের ধর্মকর্মকে বাধাগ্রস্ত ও অভিভাবকদের সন্ত্রস্ত করে তুলতে সক্ষম হয়েছে সফলভাবে। ধর্মীয় রীতিনীতি পালন, ধর্মীয় প্রচার কাজে ভীতি ছড়িয়ে তা সীমিত করতে সক্ষম হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে মুসলমানরা এখন অধিকারের প্রশ্নে সংখ্যালঘিষ্ঠে পরিণত হয়েছে। তাদের জোরালো কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদ, দাবি ও অধিকারের শ্লোগান এখন ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। অথচ এই সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো হচ্ছে খিলাফতের নামে। খিলাফত মুসলমানদের কাছে সুগন্ধ পুষ্পের মতো যার আকর্ষণে মুসলমানরা অনেকেই ছুটে যেতে চায়। কিন্তু সেই খেলাফতের সুগন্ধ পুষ্পকে ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিগুলো অন্ধকার কূপে নিক্ষেপ করেছে যা তুলতে গিয়ে মুসলমান সন্তানেরা বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে।
বাংলাদেশে ধর্মের নামে পরিচালিত বিগত এক যুগের সন্ত্রাসবাদ কী দিয়েছে? ইসলামী শাসন, খিলাফত, মুসলমানদের অগ্রগতি-কিছুই না। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, ঘটনা ঘটেছে তার বিপরীত। বাংলাদেশের ইসলামী শক্তি কোন দিনই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। জেএমবি থেকে শুরু করে আনসারুলাহ বাংলাটিম কোন শক্তিই বাংলাদেশের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার কাছে প্রশ্রয় পায়নি। জেএমবিকে হীনবল করতে পারার মূল কারণ এখানেই। বাংলাদেশের সমাজে ঠাঁই না পেয়ে জেএমবি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এ দৃষ্টান্ত সকলের জানা থাকা সত্ত্বেও গুলশান হামলার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের দিকেই। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের সাথে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার সম্পর্ক ক্ষীণ। জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তার ভাই আতাউর রহমান সানী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন। তারপরও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশেষক ও সন্ত্রাসবাদ গবেষকরা সন্ত্রাসবাদ দমনে মাদ্রাসা শিক্ষাকেই টার্গেট করেছে। প্রায় এক দশক ধরে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সন্ত্রাসবাদ গবেষকরা মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের জন্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। সরকার মাদ্রাসা বন্ধ না করলেও তাদের পরামর্শে ধর্মীয় শিক্ষা হ্রাস করে সেখানে জড়বাদী শিক্ষা ও সেক্যুলার শিক্ষার নামে পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। কিন্তু এখন যখন প্রমাণিত হলো সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসা নয় বরং ব্যাপকহারে দেশের নামকরা ও ব্যয়বহুল সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তখন কেউ সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের আর্জি জানায় না। বরং বলছে, সন্ত্রাসবাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হলে বিশ্বে বহু নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। ইতালীয় গবেষক ডিয়াগো গামবেটা ও জার্মান গবেষক স্টিভেন হারটোগ গবেষণা করে দেখিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদীদের শতকরা ৪৪ শতাংশই প্রকৌশলী। বাকিরা অন্য শিক্ষায় শিক্ষিত। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষাপট গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশের কোনো মাদ্রাসায় প্রকৌশল বিদ্যা পড়ানো হয় না। বাংলাদেশের কোনো মসজিদেও সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় এমন কোনো তথ্য আজো কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। কিম্বা জুম্মার খুতবা থেকে কেউ সন্ত্রাসী হয়েছে এমন তথ্য জীবিত, মৃত বা ধৃত কোনো সন্ত্রাসী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেনি। তারপরও সরকার জুম্মার খুতবার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। মসজিদের গেটে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। জুম্মার দিন মুসল্লিদের আর্চ ওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করে মসজিদে ঢোকানো হয়। ভেতরেও থাকে বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা। গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুর কা-ের পর বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের অন্যতম ঘাঁটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পরিবর্তন, কিম্বা তার গেইটে গেইটে পুলিশী তল্লাশি দেখতে পাইনি। সরকারের মন্ত্রীরা মাদ্রাসা শিক্ষকদের ডেকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সম্মেলন করছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেলায় এমনটা করতে দেখা যায়নি। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বললেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, একই বিবেচনায় ইতোপূর্বে আরো একোধিকবার প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছে। এসকল শুদ্ধি অভিযানে সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই আনা হচ্ছে, ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্তদের। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে সন্ত্রাসী ধরার নামে অভিযান চালিয়ে নামাজি, পর্দানসীন মেয়েদের ধরা হচ্ছে। তারা আতঙ্কিত। বইয়ের দোকান থেকে ইসলামী বই সরিয়ে ফেলছে বিক্রেতাগণ। কালো পাঞ্জাবি পরে রাস্তায় বেরুতে ভয় পাচ্ছে লোকজন। বাড়িওয়ালারা এখন ব্যাচেলর ভাড়া দিতে চাইছে না। বিশেষ করে দাড়ি টুপিধারী ব্যাচেলরদের অবস্থা খুব করুণ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বলেছেন, গুলশান হামলার সাথে পিস টিভির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবুও জনপ্রিয় চ্যানেল পিস টিভি বন্ধ করা হলো অথচ প্রশ্নবিদ্ধ ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের দাবী উপক্ষিত হচ্ছে।
গুলশানের হামলায় ৭ জাপানী ও ৯ ইতালীয় নাগরিক নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে আগেও জাপানী ও ইতালীয় নাগরিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছে। দুইটি দেশই প্রশ্ন তুলেছে, বারবার কেন তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হতে হবে? জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশ। জাপানই সবচেয়ে বেশি নিঃশর্ত বা সহজশর্তে ঋণ অনুদান দিয়ে থাকে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে ইতালী বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্টস পণ্যের অন্যতম বায়ার। ইউরোপীয় মার্কেটের গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার ইতালীয় বায়াররা বাংলাদেশে নিয়ে আসে। গুলশানে হামলার পর এই দুটি দেশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ সঙ্কুচিত করেছে। ব্যবসা সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। গুলশানের হামলা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক রেমিট্যান্স আয়ের জনশক্তি খাতেও প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশী জনশক্তি প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে জনশক্তি মার্কেটেও। শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় সেক্টর হিসাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিপুল সংখ্যান ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে। যাদের অনেকেই হয়তো বিদেশের মাটিতে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এতে শুধু মেধা পাচার রোধ বা দেশীয় মুদ্রাই সাশ্রয় হয়নি এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে যার মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় সংখ্যক। গুলশান হামলা সরাসরি বাংলাদেশে অর্থনীতির এই সেক্টরগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এর ফায়দা লুটবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো। বছরখানেক আগেও স্টেডিয়াম মার্কেটে বেশ কিছু ক্যামেরার দোকান ছিল। সেসব দোকানে অসংখ্য ক্যামেরার মাঝখানে দুয়েকটি সিসি ক্যামেরা দেখা যেতো। এখন এসব ক্যামেরার দোকানের বেশিরভাগই সিসি ক্যামেরাসহ সিকিউরিটি যন্ত্রপাতির দোকানে পরিণত হয়েছে। ব্যবসার ঊর্ধ্বগতি দেখে অন্য অনেক ব্যবসায়ীও ব্যবসা পরিবর্তন করে নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবসা খুলে বসেছে সেখানে। দুয়েকটি দোকানে ক্যামেরা দেখা গেলেও তা সিসি ক্যামেরারা ফাঁকে ফাঁকে অগুরুত্বপূর্ণভাবে ঠাঁই পেয়েছে। উল্লেখ্য, এসব নিরাপত্তা সরঞ্জাম শতভাগ বিদেশে তৈরি।
ভারত কর্তৃক উজানে এ বাঁধ খুলে দেওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ডুবছে দেশের উত্তরাঞ্চল। ৩ হাজার ভারতীয় ¯্রােতে ভেসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের ফিরিয়ে দেয়া ও বন্যার্তদের পুনর্বাসন বাংলাদেশের মিডিয়াতে নেই। সন্ত্রাসবাদের খবরে ডুবে আছে তার পৃষ্ঠাগুলো, আগেও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ যখনই বড় ধরণের সঙ্কটে পড়ে তার সুযোগ নিয়ে বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো নানা ফায়দা তোলে। বিশেষ করেছ গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর এই প্রবণতা বেড়েছে। গুলশান হামলার পর বাংলাদেশের জনগণের প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ভারতের সঙ্গে সরকার সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন চুক্তি করেছে, আমেরিকার সাথে এনএলজি টার্মিনাল চুক্তি করেছে, রাশিয়ার সাথে রূপপুর পারমাণবিক চুক্তি করেছে। এছাড়াও এ সময়ের মধ্যে আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তির অনেকগুলো বহু বছর ধরে ঝুলে ছিল। এসকল চুক্তির ব্যাপারে জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি এসকল চুক্তি যখন সম্পাদিত হয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলমান ছিল। সরকারী দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোটিয় পার্লামেন্টেও এসব চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি সরকার। দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে এইসব চুক্তি করা হলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এ ব্যাপারে তার মুখ একেবারেই বন্ধ রেখেছে। বরং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ভারতে গিয়ে সার্টিফাই করে আসলেন বর্তমান সরকার যা কিছু দিয়েছে ও দিচ্ছে তার সবকিছুতেই বিএনপির সম্মতি আছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকার চুক্তির বিষয়গুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে সাহস পায়নি। সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে এতোটা নাজুক অবস্থানে নিয়ে গেছে যে বিদেশী রাষ্ট্রদূতেরা দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলতে সক্ষম হয়েছে, বাংলাদেশ দখলের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। বিদেশী গণমাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ হয়েছে, ‘বাংলাদেশে সে দেশের সেনাবাহিনী পাঠানো হচ্ছে’। সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়তার নামে বিদেশী সেনাবাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবের কথা সরকারী দলের এক নেতা নেতাই বলেছেন। কাজেই এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, ইসলামের নাম দিয়ে পরিচালিত বর্তমান সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশে এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা বলে এ লেখা শেষ করবো।
মতিঝিল থেকে রিক্সায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলাম একটি কাজে। পল্টনের বামে বায়তুল মোকাররমের সামনে রিক্সা আটকে গেলো। কিছুক্ষণ বিরতির পর সিগন্যাল ছাড়লে আমার বসা রিক্সাটির চালক দ্রুত চালাতে গিয়ে পাশের রিক্সার চাকার মধ্যে গুতা দিয়ে আটকে দিলো এবং পাশের রিক্সাচালককে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিতে শুরু করলো। রিক্সা চালকটির গালাগাল বর্ণণাযোগ্য নয়। পাশের রিক্সা চালকটির বয়স ৫০ এর কাছাকাছি, মাথায় টুপি, মুখে লম্বা কাঁচা-পাকা দাড়ি ও পরনে পাঞ্জাবী। রিক্সাচালকটি বোঝাতে চেষ্টা করল, এতে তার কোনো দোষ নেই। বরং অন্য রিক্সাটি পেছন থেকে গিয়ে আটকে দিয়েছে। চালকটি কথা শেষ করতে না করতেই আমার বসা রিক্সার চালক তাকে আরো একবার বেশ কিছু গালি দিয়ে বললো, ‘এই জঙ্গি, পুলিশ দেখছোস, বেশি কথা বললে, পুলিশ ডেকে ধরায়ে দেবো’। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম ‘জঙ্গি’ বলায় নিরীহ রিক্সা চালকের মুখে কিছুটা বিব্রত ও ভীতির ছায়া। সে একবার বায়তুল মোকারম মসজিদের গেইটের সামনে বসা পুলিশ ও আশেপাশের লোকজনদের দিকে তাকালো যেন কেউ ‘জঙ্গি’ গালিটা শুনতে পেয়েছে কিনা। তারপর রিক্সা থেকে নেমে চাকা ছাড়িয়ে দিল। বাকি পথটুকু রিক্সায় বসে আমি ভাবতে শুরু করলাম, ১ জুলাইয়ের পর থেকে বাংলাদেশে দাড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবী পরিহিতদের, ইসলামী চেতনাধারীদের অবস্থা এই রিক্সাওয়ালার মতোই। তারা কোথাও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবরা বাধ্য হচ্ছেন, সরকারি খুতবা পড়তে। চাকরির ভয়ে নয়, না পড়লে কেউ যদি জঙ্গি বলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়, এই ভয়ে। দাড়ি ভীতি এতোটাই প্রবল হয়েছে যে, বিধর্মী ছেলেরাও, যারা ফ্যাশনের জন্য দাড়ি রাখতো, ভয়ে দাড়ি কেটে ফেলছে (সৈয়দ আবুল মকসুদ)। শুধু লেবাসের কারণে সত্য কথা, উচিত কথা, সঠিক কথা, অধিকারের কথা কেউ সজোরে বলতে পারছে না। নিজে থেকেই নিজের মধ্যে নিজেকে অনেকখানি গুটিয়ে নিয়েছে। নিজে থেকেই নিজেকে বঞ্চিত করছে অনেক কিছু থেকে। মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ছে, তাদের পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।
email:[email protected]



 

Show all comments
  • Golam Sarwar ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১১:১২ এএম says : 0
    ধর্মীয় স্বাধীনতার দিক থেকে মুসলমানরা আজ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kasem ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১১:১২ এএম says : 0
    এখন মুসলমানরাই মুসলমানের বড় শত্রু,তার মূল কারণ সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার অভাব।
    Total Reply(1) Reply
    • junaid ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১১:৪১ এএম says : 4
      আসলে ভাই আমাদের দেশে এখন এত সংখ্যক মাদ্রাসা এত উস্তাদ আছেন যে রাসুল (সাঃ) এর জামানায় ও ছিল না। কিন্তু তারা ভোগবাদি ছিলেন না।তারা এক মাত্র আল্লাহ্‌ কে ভয় করতেন। তাদের ঈমানী জোর ছিল। ঈমানী জোর তো শিক্ষা থেকে আসে না। জ্ঞান এক জিনিস ঈমান একিন আরেক জিনিস। কোন কোন কাফিরও অনেক জানে । কিন্তু তাদের জ্ঞান মুসলমানের ঊপর হামলায় কাজে লাগাচ্ছে।
  • বিপ্লব ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৬ এএম says : 0
    এই লেখাটির মাধ্যমে বেশ কিছু তিক্ত সত্য কথা উঠে এসেছে। লেখককে অসংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • junaid_habib ৩১ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৮ এএম says : 1
    আসলে আজ মুসলমান মুসলমানের বিরুদ্ধে,কাফির ও সুযোগ পাচ্ছে ।এর কারন মুসলমান আল্লাহর গুলামী করে না, করে বস্তুবাদ,ভোগবাদের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া মুসলমানেরাই টার্গেট
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ