পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা। সচেতন মানুষ এখন ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই দৈনন্দিন কাজকর্ম করছেন। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মানুষ যখন অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিত্যপণ্য কেনাকাটা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবকিছুতেই ব্যবহার করছে অনলাইন প্লাটফর্ম। তখনই সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। এই ঈদে পশু কেনা, পশু পছন্দ করতে হাটে যাওয়াসহ নানা কারণেই প্রচন্ড ভিড় ও ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটে হাটগুলোতে। ভিড় ঠেলে, রোদে পুড়ে, ঘেমে-নেয়ে একাকার হতে হয় পশু কিনতে আসা মানুষগুলোকে।
করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে যারা হাটে যাবেন তারা করোনার জন্য সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ করবেন বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। অন্যদিকে গরু-ছাগল নিয়ে করোনা সংক্রমণের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কয়েকদিন হাটে অবস্থান করা, বিক্রির টাকার নিরাপত্তাসহ নানা রয়েছে নানা সমস্যা রয়েছে বিক্রেতাদের। করোনাপরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সংক্রমণের প্রবল ঝুঁকি এড়াতে এবার কোরবানির হাট মাঠে নয়, অনলাইনে করার আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
তারা বলছেন, বাংলাদেশে মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানানো অসম্ভব। খোলা মাঠে গরুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করেন তারা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি ও কোরাবানির পশু বিক্রি বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু হাট বসিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সোনার পাথর বাটি। এটা যদি করা হয় তাহলে আমি এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করছি।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পরিকল্পনা করে করোনায় অর্থনীতি সচল রাখা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে হাট বাজার খুলে দিলে শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিও বাঁচবে না, মানুষও বাঁচবে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এখনও সময় আছে। পরিকল্পনা করে কোরবানির পশুর অনলাইন বাজার শক্তিশালি করতে হবে। কৃষক এবং ব্যাপারীদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহের চেইন গড়ে তুলতে হবে। যেভাবে এবার শাক-সবজি, খাদ্য শস্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে ইতোমধ্যেই গরু-ছাগলসহ কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে অসংখ্য কৃষক, খামারি, ব্যবসায়ী। অপেক্ষা এখন ক্রেতাদের। বিভিন্ন খামারির ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে ই-হাট, কোরবানির গরুর মেলা। আবার ই-কমার্স সাইটগুলো তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডিজিটাল হাট করার। যদিও বিগত কয়েকবছর ধরেই অন্যান্য পণ্যের পাশপাশি কোরবানির পশু কেনা-বেচা হচ্ছে। বিক্রির সংখ্যা ও পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে আগের বছরের তুলনায়। তবে এবার এই চিত্র ব্যাপক পরিবর্তণ আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আশা যোগাচ্ছে কৃষক, খামারি, অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে।
দেশে করোনা আক্রান্ত দেড় লাখ ও মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ উর্ধ্বোমুখী থাকায় খামারি, কৃষক, ব্যবসায়ীরাও এবার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। বরং ভার্চুয়াল প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে ঘরে বসেই বিক্রি করতে যান নিজের পশু। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আইলচড়া ইউনিয়নের বাগডাঙা গ্রাম থেকে প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে তিন শতাধিক গরু নিয়ে খামারিরা রাজধানীতে আসেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে খামারিরা এবার ঢাকার পশুর হাটে এসে সেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। গ্রামে থেকে গরু বিক্রির চেষ্টায় আছেন বাগডাঙার খামারি মো. সোহেল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেকেই নিজের খামারের নামে ফেসবুকে পেজ খুলে সেখানে পশুর ছবি, ভিডিও, বিবরণ, দামসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তুলে ধরেছেন। সাথে থাকছে ফ্রি হোম ডেলিভারি। শুধু তাই নয়, কোন কোন খামারি ও অনলাইন প্লাটফর্ম পশু কোরবানি ও মাংস প্রক্রিয়াত করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেয়ারও অফার দিচ্ছেন। বিক্রয় ডট কম গরু-ছাগলের অনলাইন হাট বসিয়েছে, এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যেমন- ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, কুমিল্লা এভাবে ওই এলাকার খামারের গরু-ছাগলের ছবি, তার বিবরণ, মূল্য সবই তুলে দেয়া হয়েছে। ক্রেতারা চাইলে এসব পশুর মধ্য থেকে পছন্দ করে অর্ডার করলেই তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে সেই পশু। এছাড়া খামারি বা কৃষকদের আহ্বান জানানো হচ্ছে হাটে না হেঁটে গরু বেচুন নেটে।
একইভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিক্রেতারা তাদের পশুর ছবি আজকের ডিল ডট কমে আপলোড করছেন। ক্রেতারা পছন্দমত পশু কেনার জন্য তার মালিকের সাথে যোগাযোগ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, আমরা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করি। কৃষক বা খামারিরা তাদের গরু/ছাগলের ছবি আমাদের ওয়েব সাইটে আপলোড করে তার বর্ণনা এবং মূল্য তুলে ধরেন এবং ক্রেতারা পশু পছন্দ করে বিক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন। এজন্য কোন ফি নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের কোন ফি দিতে হয় না, এটি সম্পূর্ণ ফ্রি। কেনাবেচা কতটা নিরাপদ জানতে চাইলে ফাহিম মাশরুর বলেন, আমরা কিছু নির্দেশনাবলী দিয়েছি কিভাবে নিরাপদ লেনদেন করবে।
এই কোরবানির ঈদে ৫ হাজারেরও বেশি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে কাউহাট ডট কম। এখানে গরুর ছবি এবং ভিডিও’র পাশাপাশি তাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে প্রতিটি গরুর বয়স, ওজন ও দাম। ক্রেতারা পছন্দমতো দেখে গরু কিনতে পারবেন এখান থেকেই। গরু বিক্রির পাশাপাশি করোনায় ঝুঁকিমুক্ত থাকতে কাউহাট দিচ্ছে গরু বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে হালাল ও নিরাপদ কোরবানির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে কাউহাটের উদ্যোক্তা মোঃ জুয়েল রানা বলেন, আমরা নিজেদের কসাই দিয়ে সম্পূর্ণ হালাল এবং নিরাপদ উপায়ে জবাই করে মাংস প্যাকেজিং করে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে দিব।
ফরিদপুরের একটি গ্রামের ৫০জন কৃষক তাদের ২০০ গরু নিয়ে ফেসবুকে একটি পেজ খুলেছেন। এই পেজে তারা গরুর ছবি, বর্ণনা ও দাম উল্লেখ করেছেন। যোগাযোগের জন্য দেয়া হয়েছে বিক্রেতার ফোন নাম্বার। মানিকগঞ্জের আনহাদ এগ্রো গরুর হাট নামে ফেসবুক পেজে গরুর ছবি এবং তার বর্ণনা তুলে দেয়া হয়েছে। আনহাদ এগ্রোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সর্বোৎকৃষ্ট মানের কোরবানির গরু দিচ্ছেন, তাদের গরু স্বাস্থ্যবান, সঠিক বয়স ও প্রাকৃতিকভাবে পালন করা। কেউ চাইলে গরু তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে অথবা খামারের ভেতরেই নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অভিজ্ঞ কসাই দিয়ে গরুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করে হোম ডেলিভারি দেয়া হবে। এছাড়া পেমেন্টও ডিজিটাল উপায়ে করার সুযোগ রয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিংয়ের মনোয়ারার ডেইরি এন্ড এগ্রো করোনার কথা মাথায় রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, সম্পুর্ণ নিরাপদ পরিবেশে, স্বপরিবারে কোরবানীর গরু বিক্রয় ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে। সেখানে দেশাল, ফ্রিজিয়ান ৩০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি ওজনের ষাঁড় গরুর সমাহার। মনোয়ারা ডেইরির দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে সরাসরি এসে দেখে, ওজন করে কেনার সুযোগ রয়েছে, কেউ চাইলে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কিনতে পারেন। ফ্রি হোম ডেলিভারীর সুবিধাও আছে। নারায়ণগঞ্জে ফ্রেস সদাই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গরু কেনা এবং কেউ চাইলে সরাসরি খামারে গিয়ে দেখার পর কেনার সুযোগ করে দিয়েছে। একইভাবে গ্রিন এগ্রো পার্ক, ই-গরুর হাট, কেরাণীগঞ্জে এসআর নেচারাল এগ্রোসহ অসংখ্য কৃষক, খামারি, অনলাইন প্লাটফর্ম ভার্চুয়াল হাটে গরু-ছাগল বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। সাদেক এগ্রোর অপারেশনাল ইনচার্জ তারেক হাসান বলেন, আমাদের প্রচুর বুকিংয়ের জন্য কল আসছে। কাস্টমার গরু দেখছে। আশা করি খুব ভালো করতে পারব।
কেনা-বেচার পদ্ধতি : ভার্চুয়াল পশুর হাট একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম, যেখানে অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোরবানির পশুর ক্রেতা ও বিক্রেতারা একসঙ্গে মিলিত হবেন। বিক্রেতা গরু, ছাগল বা কোরবানির উপযুক্ত পশুর স্থিরচিত্র বা ভিডিও দেখাবেন। গরুর দাম, বয়স, ওজন, কয়টা দাঁত রয়েছে, কোথা থেকে আনা হয়েছে, এমন সব তথ্য থাকবে। কোরবানির হাটে গিয়ে ক্রেতা যেভাবে গরু যাচাই-বাছাই করে থাকেন, ঠিক সেভাবেই দেখা যাবে। পছন্দ হলে ক্রেতা গরু কিনবেন। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, রকেট, নগদ) মাধ্যমে দাম পরিশোধ করা যাবে। ক্রেতা যেখানে চাইবেন, সেখানেই গরু পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ই-ক্যাবের সদস্যভুক্ত একশরও বেশি অনালাইন প্লাটফর্ম কোরবানির পশু বিক্রি করছে। আমরা তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাথে কথা বলেছি, একটি ডিজিটাল হাট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া কোরাবানির পশু জবাই যেন যত্রতত্র না হয় তার ব্যবস্থা করতেও চেষ্টা চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।