Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাকদির কী ও কেন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন তাকদির-সংক্রান্ত বিষয়াদি যাতে সাধারণ মানুষ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সে নিরিখে একে দু’ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করেছেন। যথা- ক. তাকদিরে মুবরাম, অর্থাৎ চুড়ান্ত, স্থির, অপরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে কোনো রকম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয় না। লাওহে মাহফুজে একই বাণী লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং তা বাস্তবতা লাভ করবেই।

খ. তাকদিরে মুয়াল্লাক, অর্থাৎ ঝুলন্ত বা পরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে পরিবর্তন অথবা সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। এ প্রকার তাকদিরকে আল্লাহপাক অন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখেন। যেমন- অমুক কাজটি না হলে এ কাজটি বাস্তবায়ন হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লতিফ যদি পিতমাতার সেবাযত্ম করে, তবে জীবন দীর্ঘ ও সুখকর হবে। যদি সেবাযত্ম না করে, তাহলে দীর্ঘ হবে না, সুখকর হবে না।

বস্তুত তাকদিরে মুবরাম এবং তাকদিরে মুয়াল্লাক। অর্থাৎ চূড়ান্ত ও ঝুলন্ত তাকদির কেবল বান্দার ইলম ও অনুভুতি হিসেবে। কিন্তু আল্লাহপাকের ইলম ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী ঝুলন্ত বলে কিছুই নেই, বরং সবই মুবরাম। কেননা, যেকোনো কাজ বা বিষয়ের শেষ ও চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহপাক অনাদিকাল হতেই অবগত আছেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ক. আল্লাহপাক যা কিছু ইচ্ছা মিটিয়ে দেন, আর যা কিছু ইচ্ছা সুদৃঢ় করেন। তার নিকটই রয়েছে মূল কিতাব। (সূরা আর রা’দ: আয়াত ৩৯)। খ. এই আয়াতে কারিমার মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে হাফেজ মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা.-এর রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহপাক সৃষ্টির তাকদিরসমূহ লিখে রেখেছেন।

এর অর্থ হলো, আল্লাহপাক বান্দাহর তাকদির এমনভাবে নির্ধারণ করেছেন যে, আল্লাহর ইলমে কাদিমের বিপরীতে কোনো কিছু ঘটতেই পারে না। একেই বলা হয় উম্মুল কিতাব। অথবা লিখে রাখার অর্থ হলো, আল্লাহপাক তাকদির নির্ধারণ করেছেন মুয়াল্লাক হিসেবে। অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে আল্লাহপাক লিখে রেখেছেন যে, অমুকে যদি হজ করে তাহলে ২০ বছর বাঁচবে। আর যদি হজ না করে তবে ১৫ বছর।
তাকদির পরিবর্তন হওয়া ও ঠিক থাকা অর্থে এ কথাই বোঝানো হয়েছে। এরূপেই হাফেজ ইবনে আসকালানী রহ. আলোচনা করেছেন। কিন্তু তার আলোচনায় সামান্য একটু অস্পষ্টতা আছে। কেননা, মুয়াল্লাক ও মুবরাম এ দুই ধরনের তাকদিরই লাওহে মাহফুজে লিখিত এবং বাতিল হওয়ার অযোগ্য। তবে এ কথাও সত্যি যে, মুয়াল্লাক তাকদির ও আল্লাহপাকের ইলম, জ্ঞান, প্রজ্ঞা হিসেবে মুবরাম। (আল মিরকাত শরহে মিশকাত: খন্ড ১, পৃ. ১৪৫-১৪৬)।

 



 

Show all comments
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৫ জুলাই, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    এই মহাবিশ্বে ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব নির্ধারণ করে রাখাকে তাকদির বলে। পৃথিবীর সব বস্তু তথা মানব-দানবসহ যত সৃষ্টি রয়েছে, সব কিছুর উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ, উপকার-অপকার, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি কোথায়, কোন সময়, কিভাবে ঘটবে—আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাকদিরের বাইরে কোনো কিছু নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ৫ জুলাই, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    তাকদির মানুষের কাজের কারণ নয় এবং তাকদির লিপিবদ্ধ আছে বলে মানুষ ভালো-মন্দ ইত্যাদি কাজ করছে—বিষয়টি এমন নয়; বরং ভবিষ্যতে মানুষ যা করবে, আল্লাহ তাআলা তা আগে থেকেই জানেন, ফলে তিনি তা আদিতেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ৫ জুলাই, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
    একজন শিক্ষক পাঁচজন ছাত্রকে শিক্ষাদানের পর তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি যদি তাঁর ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন যে অমুক ছাত্র ‘এ প্লাস’ পাবে, অমুক ছাত্র ‘এ’ পাবে, অমুক ছাত্র ‘এ মাইনাস’ পাবে, অমুক ছাত্র ‘বি’, অমুক ছাত্র ‘সি’ পাবে। এখন পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর যদি শিক্ষকের আগের লেখা অনুযায়ী ফলাফল হয়, তাহলে কি শিক্ষকের লেখার কারণে এই ফলাফল হলো? অবশ্যই না। তাকদিরের বিষয়টিও এমনই।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৫ জুলাই, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 0
    কাজ সম্পাদন করার জন্য উপায়-উপকরণের সহযোগিতা নেওয়াকে তদবির বলে। তাকদিরের সঙ্গে তদবিরের কোনো সংঘাত নেই। কেননা তাকদিরের ওপর ঈমান আনার সঙ্গে কাজের ওপর তদবির করার কথাও লিখিত আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • রিদওয়ান বিবেক ৫ জুলাই, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 0
    ইয়াকুব (আ.) তাকদির ও তদবিরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.) মানুষকে কাজ করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, তাকদিরের ওপর ভরসা করে বসে থাকতে নিষেধ করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Emdadul Haque Badsha Badsha ৫ জুলাই, ২০২০, ৪:২২ এএম says : 0
    বিষয়টি আরো স্পষ্ট হোয়া প্রয়োজন । মানুষ তার তাকদিরের বাইরে ইচ্ছা করলেও বেশী এবাদত করতে পারবে না--
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন