বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ধৈর্যশীলদের নিয়ে কোরাআনের অনেক আয়াতে ধৈর্যধারণের নির্দেশ ও তার উপদেশ দানের সাথে সাথে তার প্রতিদান ও শুভ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত বিদ্যমান, তথাপি বিশেষভাবে সবরের প্রতিদান ও পরিণতি সংক্রান্ত দু-চারটি আয়াত আরো উদ্ধৃত করা হলো।
সূরা রা’দের এক স্থানে সেসমস্ত বান্দার বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার সবিশেষ আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। এ প্রসঙ্গে সেসব বান্দার একটি বিশেষ অবস্থা এ-ও বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষায় যেসব লোক (সর্বপ্রকার অমনোপূত ও কঠোরতায়) ধৈর্যধারণ করেছে।’ (সূরা রা’দ : আয়াত ২২)
ধৈর্যশীলদের পারলৌকিক পরিণতি বর্ণনা প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর হ্যাঁ, (জান্নাতে) তাদের ঘরের প্রত্যেক দরজা দিয়ে ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবং বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। কারণ, পৃথিবীতে তোমরা সবরকে নিজেদের আদর্শ করে নিয়েছিলে। কতই না উত্তম আখেরাতের এ ঠিকানা।’ (সূরা রা’দ : আয়াত ২৩-২৪)।
সূরা আল ইমরানে জান্নাতবাসী বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম তাদের সবর গুণেরই উল্লেখ করা হয়েছে, বলা হচ্ছে, ‘আর ধৈর্যশীল, সত্যভাষী এবং আল্লাহ তায়ালার অনুগত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৭)।
কেউ যদি সবরের মাধ্যমে নিজেদের অন্তরকে সুদৃঢ় করে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তা সাথে সাথে কবুল করেন। এ ব্যাপারে সূরা বাকারায় পূর্ববর্তী যুগের একদল মুজাহিদের উল্লেখ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, বিরাট ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর অধিকারী এক শত্রু (জালূত)-এর সাথে তাদের মোকাবিলা হলে তাদের মধ্যে কিছু দুর্বলচিত্ত ও দুর্বল ঈমানের লোক জালূত ও তার বাহিনী দেখে সাহস হারিয়ে বসল। তারা বলল, এদের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
কিন্তু যাদের অন্তরে ঈমানি শক্তি বিদ্যমান ছিল তারা বলল, জয়-পরাজয় সম্পর্ক শুধু অল্প-অধিকের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়; ইতিহাসেও এর দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। বলা হয়েছে, ‘অল্প সংখ্যার অধিকারী কত দলই তাদের প্রতিপক্ষ অধিক সংখ্যক দলের ওপর আল্লাহ তায়ালার হুকুম ও সাহায্যে বিজয় অর্জন করেছে। আর আল্লাহ ও তার সাহায্য রয়েছে ধৈর্যশীলদের সাথে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৪৯)।
যাহোক, কোরআন বলছে, আল্লাহর সেসব বান্দা নিজেদের অন্তরকে সুদৃঢ় করেছে এবং অতঃপর আল্লাহ তায়ালার কাছে ধৈর্য ও দৃঢ়তা এবং বিজয় ও কৃতকার্যতার জন্য দোয়া প্রার্থনা জানিয়েছে। তারা নিবেদন করল, ‘হে আমাদের পরওয়ারদেগার, আমাদের সবর দ্বারা সমৃদ্ধ করো, আমাদের দৃঢ়পদ করো এবং কাফের দলের ওপর আমাদের বিজয় অর্জনে সহায়তা করো।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫০)।
এ সবরের পরিণতি উল্লিখিত দোয়ার পরেই পাশাপাশি বলা হয়েছে, ‘অতঃপর ঘটল এই যে, আল্লাহর সাহায্য ও তার হুকুমে ঈমানদারদের অল্প সংখ্যক দল শত্রæদের অধিক সংখ্যক সৈন্যদের পরাজিত করে দিলো।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫১)।
দুনিয়াতে সরাসরি সাহায্যের পাশাপাশি আখেরাতেও বিশাল পুরস্কারের ঘোষণা আল কোরআনে করা হয়েছে। যেমন- সূরা আহযাবের যেখানে মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান মহিলাদের তাদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের দরুন ক্ষমা ও রহমতের সুসংবাদ শোনানো হয়েছে, সেখানেও ধৈর্যগুণের উল্লেখ বিশেষভাবে করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর ধৈর্যধারণকারী পুরুষ ও ধৈর্যধারণকারী মহিলা।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৩৫)।
এমনি ধরনের তাদের আরো কতিপয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পর বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তার এসব বান্দার জন্য মাগফেরাত (তথা ক্ষমার ফায়সালা করেছেন) এবং মহাপ্রতিদান নির্ধারণ করেছেন।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৩৫)।
এই কয়েকটি আয়াতের দ্বারাই প্রতীয়মান হয়, কোরআনি দাওয়াত ও শিক্ষার মাঝে সবর তথা ধৈর্যের মর্যাদা কতখানি এবং ধৈর্যশীলদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কি ধরনের শুভ পরিণামের জামানত স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।