পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২৩ জুন, ১৭৫৭ সাল। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তার রাজধানী প্রায় ৫০ মাইল দূরে - মুর্শিদাবাদে। সারা রাত উটের পিঠে চেপে পরের দিন ভোরেই সিরাজ পৌঁছেছিলেন রাজধানীতে। মীর জাফর আর রবার্ট ক্লাইভ তখনও পলাশীর প্রান্তরেই রয়েছেন।
পরের দিন সকালে রবার্ট ক্লাইভ একটি চিরকুট পাঠালেন মীর জাফরের কাছে। লেখা ছিল: ‘এই জয়ের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। এই জয় আমার নয়, আপনার। আশাকরি আপনাকে নবাব ঘোষণা করতে পেরে নিজে সম্মানিত হতে পারব’।
এই চিরকুট পাঠানোর আগে, যুদ্ধ জয়ের পরের দিন সকালেই মীর জাফর গিয়েছিলেন ইংরেজদের শিবিরে, রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে দেখা করতে। কিছুটা পরিশ্রান্ত, কিছুটা চিন্তিত লাগছিল তাকে।
ইংরেজ সৈনিকরা তাকে নিয়ে গিয়েছিল কর্নেল ক্লাইভের তাঁবুতে। রবার্ট ক্লাইভ তখনও লর্ড হননি, কর্নেল ক্লাইভ তিনি তখন। ক্লাইভ মীর জাফরকে বললেন, ‘আপনার এখনই রাজধানী মুর্শিদাবাদের দিকে রওনা হওয়া উচিত। শহরটা নিজের কব্জায় করে ফেলুন। আপনার সঙ্গে কর্নেল ওয়াটসও যাবেন’। ক্লাইভ তার নিজের সেনাদের নিয়ে পেছনে পেছনে চললেন।
সিরাজ যে দূরত্ব এক রাতের মধ্যে পার করেছিলেন, সেই ৫০ মাইল পেরুতে ক্লাইভ আর তার বাহিনীর লেগে গেল তিন দিন। রাস্তার নানা জায়গায় তোপ দাগার ফলে গর্ত, ভেঙে পড়া গাড়ি আর সিরাজউদ্দৌলার সৈনিক আর ঘোড়ার মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিল। স্যার প্যান্ডেরল মুন তার ‘দা ব্রিটিশ কনকোয়েস্ট অ্যান্ড ডোমিনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ বইটিতে লিখছেন, ‘ক্লাইভের ২৭ জুনই মুর্শিদাবাদে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জগৎ শেঠ তাকে বলেছিলেন যে, ক্লাইভকে হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেজন্যই আরও দু’দিন পর, ২৯ তারিখে ক্লাইভ শহরে পৌঁছান।
‘মীর জাফর শহরের প্রধান ফটকে অপেক্ষা করছিলেন ক্লাইভকে স্বাগত জানানোর জন্য। দু’জনেই একসঙ্গে শহরে ঢুকেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভই মীর জাফরকে মসনদে বসিয়ে নতুন নবাবকে স্যালুট করেছিলেন। এরপরে তিনি ঘোষণা করেন মীর জাফরের শাসনে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না কোম্পানি। শুধু নিজেদের ব্যবসার দিকেই তাদের নজর থাকবে’। তারপর থেকে ১৮০ বছর ভারতে একচ্ছত্র রাজত্ব চালিয়েছে ইংরেজরা।
যেভাবে ইউরোপের অন্যতম ধনী লর্ড ক্লাইভ
সিরাজউদ্দৌলার রাজকোষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছিলেন ক্লাইভ। তার আশা ছিল তিনি আরও বেশি পাবেন। প্রসিদ্ধ ইতিহাসকার উইলিয়াম ডালরিম্পল তার বই ‘দ্য অ্যানার্কি’তে লিখেছেন: ‘এই যুদ্ধ জয়ের জন্য ক্লাইভের পাওনা হয়েছিল দু’লাখ ৩৪ হাজার পাউন্ড। এছাড়া জমিদারীর মালিক হিসাবে প্রতিবছর ২৭ হাজার পাউন্ড পাওয়ার কথা ছিল। যদি এই বিপুল অর্থ তিনি সত্যিই পেতেন, তাহলে মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই রবার্ট ক্লাইভ হঠাৎই ইউরোপের সবথেকে ধনী ব্যক্তিদের একজন হতে পারতেন।
‘পরের কয়েকটা দিন বেশ দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছিলেন ক্লাইভ। তার ভয় ছিল মীর জাফর কথার খেলাপ করবেন না তো! তাদের দেখে মনে হত, যেন দুই ক্ষমতাবান গুন্ডা বড়সড় লুটের পরে ভাগাভাগিতে বসেছে’। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।