Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোগ-ব্যাধি গোনাহের কাফফারা

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
তখন উম্মে সায়েব জ্বর-সর্দিতে কাঁপতেছিলেন। নবী কারিম (সা.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হলো? উম্মে সায়েব বললেন, শরীরে জ্বর অনুভব করছি। আল্লাহ যেন একে অপমান করেন। তখন হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন, থামো! এই জ্বর অসুস্থতাকে গালি দিওনা। কেননা এই জ্বর মুমিনের পাপরাশিকে এমনভাবে নিঃশেষ করে দেয় যেমনভাবে লোহার হাপড় লোহার ময়লা নিঃশেষ করে দেয়।’-(আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৫১৬)।
মহামারীতে নিহত ব্যক্তির ফজিলত: হজরত ইরবায ইবনে সারিয়া (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যুদ্ধে শহিদগণ ও ঘরে বিছানায় মৃত ব্যক্তিগণ মহামারিতে মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট দাবি পেশ করবেন। শহিদগণ বলবেন, এরা আমাদের ভাই। কারণ তারা আঘাতে নিহত হয়েছে, যেরূপ আমরা নিহত হয়েছি। আর ঘরে বিছানায় মৃতগণ বলবেন, এরা আমাদের দলভুক্ত; এরা তাদের ঘরে মরেছে যেরূপ আমরা মরেছি। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, এদের শরীরের আঘাতের দিকে দেখো। এদের আঘাত যদি শহিদদের আঘাতের অনুরূপ হয় তাহলে তারা শহিদগণের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং শহিদগণের সঙ্গেই থাকবে। পরে দেখা যাবে যে, তাদের আঘাত শহিদগণের আঘাতের অনুরূপ।’-(মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১৭১৫৯; নাসায়ি, হাদিস ৩১৬৪)। অন্য হাদিসে মহামারী সম্পর্কে হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মহামারী প্রত্যেক মুসলমানের জন্য শাহাদাতস্বরূপ।’-(সহিহ বুখারি, হাদিস ২৮৩০)।

বর্তমান বিশ্বে করোনা নামক যে ভাইরাসের ছড়াছড়ি। সেটি বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম একটি মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। একজন মুমিন বান্দার জন্য তা রহমত। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সে শহিদ বলে গণ্য হবে।

অসুস্থতাকে মন্দ বলা যাবে না: অসুস্থতাকে আমরা মন্দ বলি। গালি দেই। কিন্তু এ কথা আমরা ভুলে যায় যে, অসুস্থতা আমাদের গোনাহ থেকে আমাদেরকে পাক সাফ করে দেয়। যদি আমাদের এ বিষয়গুলো জানা থাকে তাহলে আমরা সব ধরনের রোগ বালাইকে আল্লাহর রহমত মনে করবো। হয় আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করবেন। অথবা আমাদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিবেন। যদি আমরা এটা বিশ্বাস করি। যে কোন অসুস্থতায় ধৈর্য ধারণ করি। তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আরহামুর রাহিমিন আমাদেরকে এর বিরাট প্রতিদান দান করবেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা অসুস্থ হওয়ার দোয়া করবো। আমাদের কর্তব্য হলো আমরা সুস্থতাকে নিয়ামত মনে করবো। নিজেদের শারীরিক যত্ন নিবো। সুস্থ থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকবো। যাতে ইবাদতের প্রকৃত আনন্দ লাভ করতে পারি। যেমন সুস্থ থাকলে আমরা নামাজে রুকু সিজদা ভালো মতো করতে পারি। রোজা রাখতে সক্ষম হই। হজের যাবতীয় বিধি-বিধানগুলো সহিহ-শুদ্ধভাবে সম্পন্ন করতে পারি। মোটকথা সুস্থ থাকলে যে কোনো ইবাদত আমরা পুঃঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করতে পারি। আদায় করতে সহজ হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ যদি আমাদেরকে অসুস্থ করে দেন। তাহলে আমরা নামাজে রুকু সিজদা সহিহভাবে করতে অপারগ হই। রোজা রাখতে সক্ষম হই না। মোটকথা কোনো ইবাদতই আমরা যথাযথভাবে আদায় করতে পারি না।

অসুস্থ ব্যক্তির ইবাদতের সওয়াব: যদি আমরা সুস্থ থাকাকালে ইবাদতগুলোকে সঠিকভাবে হক আদায় করে করতে পারি। তখন অসুস্থ থাকলে ইবাদত না করতে পারলেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এত দয়ালু করুণাময় যে, তিনি সুস্থকালীন ইবাদতের সওয়াব দান করে দেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন ইবাদতের বিষয়ে কোন ভালো পদ্ধতির উপর থাকে এরপর সে অসুস্থ হয়ে যায়, তখন তার দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেশতাকে বলা হয়, সে রোগমুক্ত থাকাবস্থায় যেসব আমল করতো সে পরিমাণ আমল তার জন্য লিপিব্ধ করো, যতক্ষণ না আমি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দেই, অথবা আমি তাকে আমার কাছে ডেকে আনি।’ -(মিশকাতুল মাসাসীহ, হাদীস ১৫৫৯)। এর দৃষ্টান্ত হলো ঐ ছাত্রের মতো যে কিনা পূর্ণ বছর একাগ্রতার সাথে পড়াশুনা করে। প্রত্যেক কাজ সময়মতো করে। শিক্ষকমহোদয়কে সন্তুষ্ট রাখে। তখন সে ছাত্র যদি পরীক্ষার আগ মূহুর্তে অসুস্থ হয়ে যায়। পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে সক্ষম না হয় তখন শিক্ষকমন্ডলী ঐ ছাত্রের বিগত নাম্বারগুলো দেখে তাকে পাশ করিয়ে দেয়।

বিপদগ্রস্তদের সওয়াব দেখে আক্ষেপ করা: একটি হাদিসে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন দুনিয়াতে সুখ-শান্তিভোগী ব্যক্তিরা যখন দেখবে, বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিদের বিপদে-কষ্টে ধৈর্য ধারণের কারণে প্রচুর প্রতিদান দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে- আহা! আমাদের চামড়াগুলো যদি দুনিয়াতে কাঁচি দ্বার কাটা হতো।’-(জামে তিরমিজি, হাদিস ২৪০২)।

দুঃখ-কষ্ট অসুস্থতা পেরেশানি বিপদে আপদে ধৈর্য ধারণ করা আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং সালেহিনদের আমল। ঐ মহান ব্যক্তিবর্গ অসুস্থতায় অভিযোগের পরিবর্তে আনন্দিত হতেন। আর বলতেন আল্লাহ পাক আমাদের অসুস্থতা বিপদ আপদ বা কষ্টে নিপতিত করেছেন। এখন আমরা যদি এর ওপর ধৈর্য ধারণ করি। আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকি তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর কারণে আমাদেরকে বিশাল প্রতিদান দান করবেন। আমাদের মর্যাদাকে বুলন্দ করবেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দান করুন! আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ