রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে
ওষুধবিহীন হাসপাতাল কয়রার জায়গীরমহল। নামমাত্র চিকিৎসাসেবা, গরিব ও অসহায় রুগীদের ভোগান্তীর অন্ত নেই। লাভবান হচ্ছে হাসপাতালের সামনে ওষুধ বিক্রেতারা। একই ভোগান্তীর শিকার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের। গত ২০ জুলাই সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে কয়রা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিঃ মিঃ উত্তরে জায়গীরমহল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। সেখানের করুণ অবস্থার দৃশ্য এবং রোগীদের আর্তনাদ ও নোংরা পরিবেশ। ঘড়িতে তখন বাজে দুপুর ১.৩০ মিনিট। রোগীদের ভাত ও ছোট ছোট রুই মাছের পটল দিয়ে রান্না করা তরকারী চোখে পড়ে। জিজ্ঞাসা করা হলো এতো ছোট মাছ কি করে খাবে? উত্তরে ভাত ও তরকারী বহনকারী ব্যক্তিটি জানান, আমি বন্টনকারী মাত্র- এর বেশি কিছু বলতে পারব না। তবে নিম্নমানের চালের ভাতের গন্ধে যে কারো পেটের সমস্যা তো হবেই- তবুও তাদের জীবন বাঁচাতে খেতে হবে। অনেকে ভাত-তরকারী না নিয়ে পার্শ্ববর্তী হোটেল থেকে ভাত ও তরকারী কিনে খাওয়ার কথা জানা গেছে। তবে গরিব ও অসহায় রোগীরা চোখ কান বন্ধ করে হাসপাতালের দেওয়া ভাত-তরকারী খেলেও চিকিৎসার স্বার্থে মুখ খুলছেন না। নিরবে, নিবৃত্তে ও ধৈর্যের মাধ্যমে অতি কষ্টে চিকিৎসাসেবা পেলেও সকল ওষুধ কিনতে হচ্ছে হাসপাতালের গেটের সামনের দোকান থেকে। জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন ওষুধ কি হাসপাতাল দেয় না? উত্তরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক রোগী এ সংবাদদাতাকে বলেন, জানতাম সরকারী হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়া যায়- কিন্তু এখানে এসে দেখি উল্টোটা। তিনি বলেন, এখানে ডাক্তার সুজাত আহম্মেদ ছাড়া আর কোন ডাক্তারকে দেখিনি। তিনি আরও বলেন, এখানে শ্যামলী নামের একজন বয়স্ক নার্স আছেন- তার দেমাক দেখলে মনে হয় এখুনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাই। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, একেতো চোখে দ্যাখে না তার উপর বেশি কথা বলে- তবে ২/১শ টাকা ধরিয়ে দিলে ঐ নার্স ঠিক হয়ে যায়। উল্লেখ্য, এই হাসপাতালে নার্স সংকটের কারণে বহিরাগত ২/১ জন মহিলাকে নার্সের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ সময় জিজ্ঞাসা করা হলো ঐ অপরিচিতা মহিলাকে- টি এইচ এ ডাক্তার সুজাত আহম্মেদ কোথায়? উত্তরে মহিলাটি জানান, ডাক্তার সাহেবসহ নার্স শ্যামলী এবং টেকনিশিয়ান ছবুর সাহেবসহ সকল আয়ারা অপারেশন থিয়েটারে, এ ছাড়া আরও দুই একজনকে অপরেশন থিয়েটারের আশপাশ দিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে গর্ভবতীদের সিজার, হারনিয়া, এ্যাপেনডিস সাইটিস রোগীদের যখনি অপারেশন করা হয় তখনি নগদ অর্থের লোভে সকলকে অপারেশন রুমে দেখা যায়। এছাড়া রোগী ভর্তি হওয়ার পর কোন রকমে নার্স শ্যামলীকে দেখা গেলেও দিনে ডাক্তার আসে একবার, এরপর ডাক্তার ও নার্স দেড় হাত লম্বা এক প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে নার্স শ্যামলী জানায়, এখনি এই ওষুধ গুলি নিয়ে এসো? এভাবেই চলছে খুলনার কয়রা উপজেলার তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসাসেবার প্রাণকেন্দ্র জায়গীরমহল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক রোগীর অভিভাবক বলেন, ভাই আমরা গরিব মানুষ-হাসপাতালে আইছি চিকিৎসা নেয়ার জন্য-কিন্তু ডাক্তাররা যেসব ওষুধ লিখে দেছে তার একটাও এই হাসপাতালে নেই-এমনকি স্যালাইনও কিনকে হয়েছে। তা ছাড়া অনেক টাকার দরকার-কোথায় পাবো এত টাকা। তিনি করুণ কণ্ঠে বলেন, মাথাব্যাথা আর গ্যাসের বড়ি ছাড়া এ হাসপাতালে আর কিছু নেই বলে শ্যামলী নার্স জানায়। অথচ আমি মাত্র ২শ টাকা নিয়ে আইছি এখানে- এখন কি করি? তিনি বলেন, আমি জানতাম সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা ও ওষুধ ফ্রি পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহকারী দীপংকরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাথাব্যথ্যা ও গ্যাসের ট্যাবলেট ছাড়া এ হাসপাতালে দীর্ঘ ৪/৫ মাস কোন ওষুধ আসে না। তাছাড়া মেট্রনিডাজল, ক্যালসিয়াম, সেটিজিনসহ ২০/২৫ রকমের ওষুধ সাপ্লাই বন্ধ রয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, জায়গীরমহল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনচার্জ টিএইচএ ডাক্তার সুজাত আহম্মেদ বর্তমানে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট্য কমপ্লেক্সটি হাসপাতাল হিসাবে পরিচালনা করছেন। তার আওতাধীন ৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও মাত্র ২ জন ডাক্তারের মাধ্যমে চলছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামক হাসপাতালটি। এছাড়া ৭/৮ জন নার্সের নাম খাতা কলমে থাকলেও শ্যামলী নামক এক বৃদ্ধ নার্স ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। তবে একাধিক রোগীর অভিযোগ, নার্স শ্যামলী নাকি বহিরাগত বিভিন্ন রোগের রুগীদের ভর্তির আগে চুক্তি করে টাকা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এই হাসপাতালে উক্ত শ্যামলী নার্স প্রায় ৮/৯ বছর কর্মরত থাকায় রোগীদের নিকট থেকে ইচ্ছা মত অর্থ আদায় করে থাকে। তাছাড়া শ্যামলী নার্সের চাহিদা মোতাবেক টাকা না দিলে রোগীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ অব্যাহত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শ্যামলী নার্সের সাথে। তিনি বলেন, পয়সা নিচ্ছি তার প্রমাণ কি? তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অপরদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনচার্জ (হাসপাতাল) ডাক্তার সুজাত আহম্মেদের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, যে সমস্ত রোগী হাসপাতালে আসে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয় তাদের প্রয়োজন মোতাবেক ওষুধ দেওয়া হয়, যেসব ওষুধ নেই সে ওষুধ রোগীরা বাইরে থেকে সংগ্রহ করে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এ হাসপাতালে চাহিদা মোতাবেক ওষুধ না থাকায় আমরাও সমস্যায় পড়েছি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় এসব কথা উঠে আসা স্বাভাবিক। তিনি দাবি করেন, খুলনা জেলার সর্ব দক্ষিণে কয়রা উপজেলার এই হাসপাতালটি ৫০ শয্যা হওয়ায় একদিকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে- অপরদিকে জনবল সংকটের ফলে ওষুধ সেবা থেকে সাধারণ রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে। ডাক্তার সুজাত বলেন, চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ করা হলে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব, তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জনবল পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া হাসপাতালের নাইট গার্ড, সুইপার, আয়া এমনটি টেকনিশিয়ান ও মেডিকেল অফিসার খাতা কলমে পূরণ থাকলেও কার্যক্রমে দেখা যায় না। ফলে জরাজীর্ণ হাসপাতালটি মুখ থুবড়ে পড়েছে বললে ভুল হবে না। তবে স্থানীয়রা জানায়, হাসপাতালের মধ্যে ফ্যামিলি প্লানিং সদর দপ্তর থাকলেও দীর্ঘ ৪/৫ বছর ইনচার্জ না থাকায় ডেপুটেশনে কর্মরত রয়েছেন এম কবির হোসেন। তিনি পাইকগাছা ও কয়রা এ দুটি স্থানে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় মাঠপর্যায়ের কর্মীরা অনিয়মিত। এখানের এমসিএইচ দিপালী রায় বলেন, আমরা খুব বিপদে আছি। দীর্ঘদিন প্রয়োজন মোতাবেক ওষুধ সাপ্লাই পাচ্ছি না। ওষুধ অভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া অসুবিধা হচ্ছে। তিনি বলেন, গরিব রোগীরা পয়সা অভাবে ওষুধ কিনতে পারে না। সে কারণে আমরাও কষ্ট পাই বলে মন্তব্য করেন। ফ্যামিলি প্লানিং এর এমপিআই কাঞ্চন বলেন, কর্মকর্তা পদে ১৬ জনের স্থলে রয়েছে ১০ জন। নার্স ১১ জনের স্থলে রয়েছে ৫ জন। ৩য় শ্রেণির পদের ৮৬ জনের স্থলে রয়েছে ৩১ জন। ৪র্থ শ্রেণি পদে ২০ জনের স্থলে রয়েছে ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর। কাঞ্চন আরো বলেন, উপজেলা ইনচার্জ চৌধুরী হাসমত আলী সাহেব দায়িত্ব পালনকালে এ রিপোর্ট তৈরী করেন। তিনি আরো বলেন, ভার প্রাপ্ত ইনচার্জের কারণে আমরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছি। তবে অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ১৫ জনের স্থলে ১২ জন আর ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭০ জনের স্থলে ৫০ জন দিয়ে চলছে সমগ্র উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এ ব্যাপারে দুটি দপ্তরের যাবতীয় বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।