Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর পথে দান

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

আল্লাহর পথে দান ও ব্যয় করাকে আরবিতে ‘ইনফাক কী সাবিলিল্লাহ’ বলে। আরবি ইনফাক শব্দটি ‘নাফক’ মূলধাতু হতে উৎপন্ন হয়। আরবি নাফক শব্দের অর্থ সুড়ঙ্গ। যার উভয় মুখ খোলা। অর্থাৎ যার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বের হওয়া যায়।

এই পৃথিবীতে মুসলমানদের জান, মাল সম্পদ পুঞ্জিভ‚ত ও স্ত‚পিকৃত হয়ে থাকার জন্য নয়। বরং একদিক থেকে আয় হবে, অন্য দিক দিয়ে তা ব্যয় হতে থাকবে। ইসলামী আন্দোলন অথবা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর জন্য ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর পথে জান-মাল খরচের প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কোরআনুল কারীমে যেখানেই জিহাদের কথা উল্লেখ করেছেন, সেখানেই জান-মালের দানের কথা বলেছেন। জান-মালের কোরবানি ও উৎসর্গ ছাড়া এই পৃথিবীতে আল্লাহর দীন বা জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে জিহাদের পূর্বশর্ত হিসেবে জানের পূর্বে মালের কথা উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া আল কোরআনে গরিবদের দান-খয়রাতের প্রতিও যথেষ্ট তাকিদ প্রদান করা হয়েছে। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলে থাকেন আল্লাহর রাস্তায় জান-মাল দ্বারা জিহাদ করা আবশ্যক। এই কথাটির সহজতর বিশ্লেষণ হবে এই যে, মুমিন মুসলমানগণ যখন সর্বাগ্রে মাল দৌলত ও সহায় সম্পদের মায়া-মহব্বত ত্যাগ করতে সমর্থ হবে, কেবল তখনই তারা আল্লাহর পথে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারবে।

বস্তুত, মুমিন মুসলমানগণের উচিত কঠিন মসিবতের দিন আসার পূর্বেই আল্লাহর পথে ব্যয় করা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদের যে রিজক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করো সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো ক্রয়-বিক্রয়, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর অবিশ্বাসী কাফিররাই জালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫৪)। বাস্তব জীবনে সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা পাশাপাশি অবস্থান করে।

এ জন্য উভয় অবস্থায়ই দানের হস্তকে স¤প্রসারিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। অবশ্যই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৩৪)।
নিজের যা প্রিয় বস্তু তা দান করাই শ্রেয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কখনো পুন্য অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা হতে যা তোমরা ভালোবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৯২)। আসলে দান একটি শস্যবীজ দানার মতো।

এ বিশেষত্বটি আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজ দানার মতো, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করল, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত দানা, অবশ্যই আল্লাহপাক যাকে চান তার জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহপাক প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও যদি আমার নিকট থাকে তাহলে তিন রাত অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য কিছু আমার অবশিষ্ট থাকুক, তা আমি পছন্দ করি না। তবে হ্যাঁ, দেনা পরিশোধের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু রেখে বাকিটুকু আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেবে।’ (সহীহ বুখারী : ৮/৬৪৪৫)।

মোট কথা, দান না করা নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার শামিল। মহান রাব্বুল আলামীন সতর্ক করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান করো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৫)।

তবে, পরিবার-পরিজনদের জন্য খরচ করাটাও দানতুল্য। হযরত সাওবান রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সর্বোত্তম দান হলো ওই দিনার, যা নিজের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনদের জন্য ব্যয় করা হয়। আর সে দিনারও উত্তম, যে দিনার জিহাদের উদ্দেশ্যে প্রতিপালিত পশুর জন্য ব্যয় করা হয়। আর সে দিনারও উত্তম, যে দিনার জিহাদে অশংগ্রহণকারী স্বীয় সঙ্গী-সাথীগণের জন্য খরচ করে থাকে। (সহীহ মুসলিম : ২/৯৯৪)।
আর আল্লাহর পথে দান করলে তিনি তার প্রতিদান প্রদান করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব।’ (সহীহ বুখারী : ৭/৫৩৫২)।



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ২ জুলাই, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তার রাস্তায় ধন-সম্পদ ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঈমান গ্রহণের পর একজন ঈমানদারকে আল্লাহ এভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তারা তার রাস্তায় ধন-সম্পদ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাক।
    Total Reply(0) Reply
  • মরিয়ম বিবি ২ জুলাই, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দানে রয়েছে ফজিলত। দান যত গোপনে হবে ততই কল্যাণ। আর দানের ফজিলত লাভের নিয়তের পরিশুদ্ধতা অত্যাধিক
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ২ জুলাই, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
    শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার রাজি-খুশির জন্য যে দান করা হয় তাতে রয়েছে মহা ফজিলত।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২ জুলাই, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
    যখন কোনো মানুষ ইখলাস বা আন্তরিকতা নিয়ে তথা এক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দান করে তবে কেয়ামতের দিন অবশ্যই সে তার ফল ভোগ করবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অন্য আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন যে ‘নিশ্চয় আল্লাহ নেককারদের বিনিময় বিনষ্ট করেন না।’
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ২ জুলাই, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘আমি আর এতীমের লালন পালনকারী জান্নাতে এ রকম এক সাথে থাকবো, রাসূলুল্লাহ(স) নিজের শাহাদাত আঙ্গুল ও মধ্যমা এক সাথে মিলিয়ে বললেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের আহমেদ ২ জুলাই, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
    আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ(স)বলেছেন,যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্থের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় সহজ করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন