Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামনে বিদ্যুৎ সেক্টরে আর্থিক বিপর্যয়

আইইইএফএ এর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

আরো বেশ কয়েকটি কয়লা ও এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের, তার কারণে দেশটিতে প্রচুর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। কিন্তু এর ফলে আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে ব্যাপক। অর্থাৎ অতিবিদ্যুতায়ন থেকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি এখন বাংলাদেশ। গতকাল ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)-এর এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাপীই এই অবস্থা বিরাজমান। এর ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক বোঝা বেড়েছে অনেক। এতে সংস্থাটির লাভ কমছে। তাদের আবার অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকেও ক্যাপাসিটি বাবদ অর্থ দিতে হচ্ছে।

অপরদিকে, এই মহামারীর কারণে চীনের অর্থায়নে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মিতব্য কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পিছিয়ে পড়ছে। আইইএফএ’র জ্বালানি আর্থিক বিশ্লেষক ও গবেষক সাইমন নিকোলাস বলেছেন, করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির প্রভাবের কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ চাহিদা যত বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, ততটা হবে না। তিনি বলেন, নতুন করে আরো কয়লা ও এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বর্তমান যেই পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের, তার ভিত্তিতে আমরা হিসাব করে দেখেছি যে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রয়োজন বা চাহিদার চেয়েও অতিরিক্ত ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস ও কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে আমরা এই অনুসিদ্ধান্তে এসেছি। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যমান বিদুৎকেন্দ্রগুলোর সামর্থ্যের মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে অলস বসে থাকছে অনেক বিদ্যুৎকেদ্র। এসব অলস কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি বাবদ প্রচুর অর্থ দিতে হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সরকারের দেয়া ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৮০০০ কোটি টাকা। আগের বছর এই পরিমাণ ছিল প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৫০০ কোটি টাকা।

নিকোলাস বলেন, স্থানীয় গ্যাস থেকে দীর্ঘমেয়াদে ব্যয়বহুল ও আমদানিকৃত কয়লা ও এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ অতিসক্ষমতা (ওভারক্যাপাসিটি)। এর ফলে যেই ক্ষতি হবে, তা পুষিয়ে নিতে সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে- এমন সম্ভাবনাই বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভর্তুকির পাশাপাশি গ্রাহকের ওপর বিদ্যুতের দামও বাড়বে। এ ছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে ক্রমবর্ধমান ভর্তুকি বজায় রাখা সরকারের জন্য আরো কঠিন হবে এখন, কারণ সরকারকে ইতিমধ্যেই ক্ষতির মুখে পড়া শিল্পকে অর্থ দিতে হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়। কয়লা বিদ্যুতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা থেকে উদ্ভূত আর্থিক ক্ষতি থেকে এখনো ভুগছে দেশটি। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিভাগ পিএলএন কয়লা বিদ্যুৎ থেকে অতিসক্ষমতার কারণে সরকারি ভর্তুকি বেড়ে ২০১৮ সালে ৫০০ কোটি ডলার (৪০০০০ কোটি টাকা)-এ পৌঁছেছে। ইন্দোনেশিয়ায়ও যতটা বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে ভেবেছিল, ততটা হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ