যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবল হলো ক্রীড়াপ্রেমিক মনের জন্য বিনোদনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। তবুও কখনো সে নির্মম। আবেগ আর ভালোবাসার চরম মূল্য কখনো দিতে হয় অশ্রুজলে। ক্লাব ফুটবলের দিকেই তাকিয়ে দেখুনÑ শুধু অর্থের কারণে আর বাণিজ্যিক স্বার্থে অনেক সময় প্রাণের দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় খেলোয়াড়দের। কোনো আবেগই সেই সম্পর্ককে আটকে রাখতে পারে না। পেশাদারিত্বের কারণে খেলোয়াড়দেরও সেটা মেনে নিতে হয়। এই যেমন গঞ্জালো হিগুয়েনের কথাই ধরুন; নাপোলি সমর্থকদের ক্ষোভ আর স্বদেশী ডিয়েগো ম্যারাডোনার ‘অভিমান’, কোনো বাধাই আটকাতে পারেনি গঞ্জালো হিগুয়েনকে। অর্থের ঝনঝনানি ঠিকই ইতালিয়ান ক্লাব ফুটবলের রেকর্ড গড়ে নাপোলি থেকে জুভেন্টাসে টেনে এনেছে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে। ৯০ মিলিয়ন ইউরোর দলবদলের এই রেকর্ডটি সর্বকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড়ও বানিয়েছে হিগুয়েনকে। মাঠে খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য তাদেরকে বানায় বাণিজ্যের বিশাল মূলধন হিসেবে। বিশ্বের সব নামকরা খেলোয়াড়ই পড়েছেন এই চক্রে। ২০০৯ সালে সে সময়ের রেকর্ড ৯৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দলে ভিড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এরও চার বছর পর সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ে ইউরোপের সফলতম দলটি। টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে গ্যারেথ বেলকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোয় কিনে নেয় বার্নাব্যুর দল। এখন পর্যন্ত এটিই ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফির রেকর্ড। আজকের গল্প এমনি সব নামী-দামি ফুটবলারদের নিয়ে... বলছি -ইমামুল হাবীব বাপ্পি
হিসাবটা পাউন্ডের বিচারেই করা যাক। চার বছরের চুক্তিতে জুভেন্টাসে নাকি বছরে ৬.৩ মিলিয়ন পাউন্ড বেতন পাবেন হিগুয়েন। হিগুয়েনের দলবদলের এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বকালের সবচেয়ে খরুচে খেলোয়াড়দের নিয়ে এগারো জনের একটি দল নির্বাচন করে স্কাই স্পোর্টস নামের স্বনামধন্য খেলাধুলা বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল। এই দল সাজানো হয়েছে শুধু দামের অঙ্কে নয়, বরং সাজানো হয়েছে প্রতিটা পজিশনের জন্য এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে। অর্থাৎ প্রতিটি স্ব-স্ব পজিশনের সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় নিয়েই গড়া হয়েছে এই একাদশ। আসুন দেখে নিই এই দলে কে কে আছেনÑ
গোলপোস্ট থেকেই শুরু করা যাক। একজন গোলরক্ষকের জন্য একটা দল কতই বা খরচ করতে পারে। যেমনÑ ক্লাদিওর ব্রাভোকে বার্সেলোনা দলে টেনেছিল মাত্র ৯.৭ মিলিয়ন পাউন্ডে, অর্থাৎ প্রায় ১০০ কোটি টাকায়। ২০১৪ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানো কেইলর নাভাসকে রিয়াল কিনেছিল মাত্র ৮.৩৮ মিলিয়ন পাউন্ডে। সেই হিসাবে একটি তথ্য যে কাউকে বিস্মিত করতে পারে। ২০০১ সালে পালের্মো থেকে ৩২.১ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা খরচায় জুয়ানলুইজি বুফনকে দলে টেনেছিল জুভেন্টাস, এখন পর্যন্ত যা কোনো গোলরক্ষকের জন্য সর্বোচ্চ দামে দলবদলের রেকর্ড হয়ে আছে। তবে খরচাটা যে যথার্থই ছিল তার প্রমাণ কিন্তু ১৫ বছর ধরে ঠিকই দিয়ে চলেছেন ‘চিরসবুজ’ বুফন। ফলে তিনিই এই তালিকার একমাত্র গোলরক্ষক।
৪০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচায় চেলসি থেকে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ডেভিড লুইসকে কিনে নেয় লিগ ওয়ানের ক্লাব পিএসজি। কোনো ডিফেন্ডারের জন্য দলবদলের রেকর্ড এটি। তারপরই আছেন ইংলিশ ডিফেন্ডার রিও ফার্নান্ড। আজ থেকে ১৪ বছর আগে লিডস ইউনাইটেড থেকে দলে টানতে ২৯.১ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সবচেয়ে খরুচে একাদশের সেন্ট্রাল ডিফেন্সে আছেন এই দুই খেলোয়াড়।
দলের রাইট ও লেফট ব্যাক হিসেবে আছেন লিলিয়ান থুরান ও লুক শ। বুফন আর থুরাম একই সাথে পালের্মো ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছিলেন। এজন্য ২২ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করতে হয়েছিল জুভেন্টাসকে। এরও দুই বছর আগে ২৮ মিলিয়ন পাউন্ডের খরচায় সাউদাম্পটন থেকে শ’কে দলে টেনেছিল ম্যানইউ।
এখন পর্যন্ত মধ্যমাঠের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হয়ে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের দুই তারকা হামেস রড্রিগুয়েজ ও জিনেদিন জিদান। ২০০১ সালে তৎকালীন দলবদলের রেকর্ড ৪৭.২ মিলিয়ন পাউন্ডের খরচায় জুভেন্টাস থেকে ফরাসি গ্রেটকে দলে ভিড়িয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল রিয়াল। এই রিয়ালই আবার ১৩ বছর পর আরেক মিডফিল্ডার কলম্বিয়ান তারকা রড্রিগুয়েজকে পেতে খরচ করে ৬৩ মিলিয়ন পাউন্ড। সেটা শুধুই জাতীয় দলের হয়ে আলো ছড়ানোর জন্য। গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন রড্রিগুয়েজ। রিয়ালের ইতিহাসে তিনি হলেন তৃতীয় দামি খেলোয়াড়। ফলে এই দু’জন খেলোয়াড় জায়গা পেয়েছেন স্কাই স্পোর্টস নির্বাচিত এই ব্যয়বহুল একাদশে।
৪-২-৩-১ ফরমেশনের এই দলে ফরোয়ার্ড সামনে থাকবেন তিনজন। তাদের সামনে থাকবেন একজন আসল স্ট্রাইকার। গ্যারেথ বেল গ্রহের সবচেয়ে দামি ফুটবলার হিসেবে এই দলে তার থাকাটা তো নিশ্চিতই। পাউন্ডের হিসেবে তার ট্রান্সফার ফি ছিল ৮৫.৩ মিলিয়ন। এটা ২০১৩ সালের ঘটনা। এরও চার বছর আগে তৎকালীন খেলোয়াড় দলবদলের রেকর্ড গড়ে বার্নাব্যুতে আসেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এজন্য রিয়ালকে গুনতে হয় ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই দলের অপর ফরোয়ার্ড হলেন বার্সা তারকা নেইমার জুনিয়র। সান্তোস থেকে ২০১৩ সালে ৭৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ডে বার্সেলোনায় যোগ দেন ব্রাজিল তারকা।
বাকি থাকল, বলকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব যার ঘাড়ে, সেই তিনি। গত সপ্তার সোমবার পর্যন্তও এই তালিকায় ছিলেন বার্সা তারকা লুইস সুয়ারেজ। দুই বছর আগে লিভারপুল থেকে ৬৫ মিলিয়ন পাউন্ডে উরুগুয়ান তারকাকে দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা। কিন্তু এখন আর তিনি গ্রহের সবচেয়ে দামি স্ট্রাইকার নন। নিশ্চয়ই বুঝেছেন, তকমাটি এখন গঞ্জালো হিগুয়েনের দখলে। সুয়ারেজের চেয়ে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বেশি দামে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে কিনে নেয় জুভেন্টাস। এজন্য বাই আউট ক্লজের পুরোটাই গুনতে হয়েছে তুরিনের ক্লাবকে। নেপলসের ক্লাব নাপোলিকে পকেটে পুরেছে ৭৫.৩ মিলিয়ন পাউন্ড।
ও হ্যাঁ, এই দলে কিন্তু নেই ফুটবল জাদুকর খেতাবধারী সময়ের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। যার জন্য বিশ্বের নামকরা সব ক্লাবগুলোর মালিক ব্ল্যাংক চেক নিয়ে অপেক্ষা করেও তাকে পান না সেই তিনি কেনাবেচার এই তালিকায় থাকবেনই বা কেন।
শীর্ষ ১০ ব্যয়বহুল ফুটবলার
ফুটবলার দেশ বর্তমানক্লাব পূর্বের ক্লাব মূল্য
গ্যারেথ বেল ওয়েলস রিয়াল মাদ্রিদ টটেনহ্যাম ৮৫.৩
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানইউ ৮০
গঞ্জালো হিগুইন আর্জেন্টিনা জুভেন্টাস নাপোলি ৭৫.৩
নেইমার ব্রাজিল বার্সেলোনা সান্তোস ৭৩.৭
লুইস সুয়ারেজ উরুগুয়ে বার্সেলোনা লিভারপুল ৬৫
হামেস রদ্রিগেজ কলম্বিয়া রিয়াল মাদ্রিদ মোনাকো ৬৩
এঞ্জেল ডি মারিয়া আর্জেন্টিনা পিএসজি ম্যানইউ ৫৯.৭
রিকার্ডো কাকা ব্রাজিল এসি মিলান রিয়াল মাদ্রিদ ৫৯
এডিনসন কাভানি উরুগুয়ে পিএসজি নাপোলি ৫৫
কেভিন ডি ব্রুইন বেলজিয়াম ম্যানসিটি ভল্ফসবুর্গ ৫৪.৫
*মূল্য মিলিয়ন পাউন্ডে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।