Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজেট বাস্তবায়নে মানুষ এগিয়ে আসবে : অর্থমন্ত্রী

বড় ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই অর্থবিল পাস : পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের শর্ত শিথিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে বড় আর কোনো পরিবর্তন ছাড়াই অর্থবিল ২০২০ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গত ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের সঙ্গে অর্থবিল ২০২০ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন।
গতকাল দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী অর্থবিল পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। আজ মঙ্গলবার পাস হবে মূল বাজেট। আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর। পরে বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ কৃষক, শ্রমিক, মজুর, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, বেদে, স্বাস্থ্যকর্মী, ভ্যান চালক, রিকশাওয়ালাসহ সকল পেশার মানুষ, পান দোকানি, চা দোকানি, মুদি দোকানি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, কুটির ও ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ী, সকল শ্রেণি ও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, যারা কষ্টে আছেন তাদের সকলের জন্য এবারের বাজেট।

তিনি বলেন, দেশের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এ বাজেট থেকে বাদ দিতে পারি নাই। কাউকে বাদ দিতে পারলে বাজেটের আকার অবশ্যই ছোট রাখা যেত, ছোট রাখা যেত বাজেট ঘাটতিও। কিন্তু সত্য যে বড় কঠিন, তাই সব জেনেশুনে আমরা এই কঠিনকেই ভালবেসেছি। এই বাজেট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে আমাদের দেশের সকল মানুষ, যারা আমাদের প্রাণশক্তি।

কয়েকজন সংসদ সদস্যের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সংসদে যে অর্থবিল পাস হয়েছে, তাতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাব ছিল না। মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব প্রত্যাহারের যে দাবি ছিল, তাতেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে ‘কালো টাকা সাদা’ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলেছিলেন। তবে শর্ত ছিল, সেই টাকা ৩ বছরে পুঁজিবাজার থেকে বের করা যাবে না। সংশোধনে তিন বছরের জায়গায় ‘লক ইন’ এর নিয়ম এক বছর করা হয়েছে। এর আগের বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব আসলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ করা হয়। অর্থবিলে সরকারি, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির কয়েকজন সদস্য সংশোধনী প্রস্তাব আনেন, এসব প্রস্তাবের মধ্যে কিছু গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, আওয়ামী লীগের আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আলী আশরাফ এবং বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গার কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পরে সেগুলো কণ্ঠভোটেও পাস হয়। অর্থবিল পাসের আগে বাজেটের ওপর নিজের সমাপনী বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তার আগে বাজেট আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথা অনুযায়ী, অর্থবিলে কোনো পরিবর্তন আনতে হলে অর্থমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য এবং অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকে সে বিষয়ে অনুরোধ করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ আমলে নিয়ে সেসব বিষয়ে পরিবর্তন এনে অর্থবিল পাসের প্রস্তাব করেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী কোনো পরিবর্তন আনতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেননি।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন, যা দেশের মোট জিডিপির ১৭.৯ শতাংশের সমান। করোনাভাইরাস সঙ্কটে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় খুব বেশি না বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ০৪৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৬.২৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, যা নিয়ম অনুযায়ী আগেই অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ।

কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ৮.৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৯.৮১ শতাংশ। টাকার ওই অংক মোট বাজেটের ৫৮ শতাংশের বেশি।

গতবারের মত এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩.৯৪ শতাংশের মত। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৫৫ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। এই বাজেটে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ শতাংশের মত। সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করে কলেন, বিদেশ থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও কোভিড-১৯ দুর্যোগের মধ্যে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। সামনে গভীর অনিশ্চয়তা রেখেই অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব।



 

Show all comments
  • Rajib Mahmood ৩০ জুন, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ সবাই মিলে চেষ্টা করলে সম্ভব। তবে দূর্নীতি দমন না করলে এর ফল পাওয়া যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mazedur Rahman ৩০ জুন, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    ছিলাম আছি থাকবো !!!! এর নাম ধারাবাহিকতা! বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রক্রিয়া! ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamil Hosen Jon ৩০ জুন, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
    2020 সালের বাজেট কে অভিনন্দন জানাই জননেত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন। জয় বাংলা আওয়ামী লীগ
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ৩০ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
    আমরা সকল প্রবাসীরা আছি সব সময় আপনার সাথে কাতার থেকে
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৩০ জুন, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় অর্থমন্ত্রী । ইনশায়াল্লাহ আমরা আপনার সাথে আছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী

১১ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ