Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আখেরাত আছে বলেই পৃথিবীর এত মূল্য

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

পবিত্র কোরআন আখেরাতের অপরিহার্যতার ব্যাপারে কয়েকটি আঙ্গিকে আলোকপাত করেছে। তার নিজস্ব ভঙ্গিতে কোরআন মানুষের সুষ্ঠু ও সুস্থ বিবেককে উদ্দেশ্য করে বলেছে, তোমরা দেখতে পাচ্ছ, এ জগতে সৎ ও অসৎ কর্ম রয়েছে। কিন্তু এর প্রতিদান ও শাস্তি যা আল্লাহ তায়ালার ন্যায়পরায়ণতার তাগাদা তা এখানে পাওয়া যায় না।
সেজন্য এ বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় যে, এই পার্থিব জীবনের পর আরও কোনো জীবন থাকবে, যেখানে সৎকর্মীদেরকে তাদের সৎকর্মের প্রতিদান আর অপরাধীদেরকে তাদের অসৎ কর্মের শাস্তি দেয়া হবে। যদি তা না হয়, তাহলে এ জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার ওপর এক বিরাট অপবাদ আরোপিত হয়ে পড়বে।

বিষয়টিকে আরও কিছুটা বিস্তারিত এভাবে বুঝতে পারেন যে, এ জগতে সবই দেখে বহু পেশাদার জালেম, দুষ্কৃতকারি জীবনভর বড় বড় পাপ করে, মানুষের জান-মালের ওপর ডাকাতি চালায়, দুর্বলদের ওপর অত্যাচার করে, মানুষের অধিকার হরণ করে, গরিব-দুঃখীদের ওপর উৎপীড়ন চালায়, ঘুষ ও আত্মসাতের পথ অবলম্বন করে অথচ জীবনভর আরাম-আয়েশে কাটায়। বংশধরদের জন্যও বিত্ত-বৈভব ও বিলাস সামগ্রী রেখে এ জগৎ থেকে বিদায় নেয়।

পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালার অনেক বান্দাকে এমন অবস্থায়ও দেখা যায় যে, তারা অত্যন্ত সততা ও পবিত্রতার জীবন অতিবাহিত করে। কারও প্রতি অত্যাচার করে না, কাউকে ধোঁকা দেয় না, কারও সাথে প্রতারণা করে না, কারও অধিকার হরণ করে না। আল্লাহর ইবাদতও যথারীতি সম্পন্ন করে এবং তার সৃষ্টির সেবাও করে। কিন্তু তা সত্তে¡ও তাদের জীবন অভাব-অনটন ও কষ্টে কাটে। কখনও রোগ-শোক, কখনও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আর এ বেচারারা এমনি অবস্থায় এক সময় পৃথিবী থেকেও চলে যায়। দেখা যায়, তাদের এসব সততা-পবিত্রতার কোনো প্রতিদানই তারা পেল না।

সুতরাং পার্থিব এ জীবনের পরেও যদি এমন কোনো জীবন না থাকে, যেখানে এসব অসৎকর্মী ও সৎকর্মীরা নিজ নিজ কৃতকর্মের শাস্তি বা প্রতিদান পাবে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর ওপর অপবাদ আসবে যে, তার রাজ্যে পৃথিবীর বে-ইনসাফ সরকারগুলোর চাইতেও বেশি অনাচার চলেছে। না সৎকর্মশীলদের সৎকর্মের কোনো মূল্য আছে, না অসৎকর্মী জালেমদের অন্যায়-অনাচারের কোনো শাস্তি আছে। বরং সমস্ত সাধু-পরহেজগার এবং চোর-ডাকাতের সাথে অন্ধপুরী তথা নৈরাজ্যময় দেশের মতো এই আচরণ চলে। বলাবাহুল্য, সুস্থ কোনো বিবেক এটাকে গ্রহণ করতে পারে না।

আল্লাহ তায়ালার সত্তা তো অনেক বড়, এ ধরনের আচরণ কোনো সাধারণ ভালো মানুষের পক্ষেও মানানসই হতে পারে না যে, সে শিষ্ট-সম্ভ্রান্ত ও দুষ্ট-অভদ্র এবং সাধু-পরহেজগার ও পেশাদার দুষ্কৃতকারির সাথে একই ধরনের আচরণ করবে। কোরআন এ বিষয়টিকেই নিজের অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, সালঙ্কার ও অনন্য ভাষায় এভাবে ব্যক্ত করেছে, ‘আমি কি অনুগত ও অবাধ্যদেরকে একই সমান করে দেব? (অর্থাৎ, এমনটি কস্মিনকালেও হতে পারে না)।’ (সূরা কলম: আয়াত ৩৫)।

অন্য আরেক জায়গায় এরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি সেসব লোককে-যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, সেসমস্ত লোকের সমান করে দেব যারা পৃথিবীতে দাঙ্গা-অনাচার বিস্তার করে বেড়ায়? আমি কি পরহেজগারদের আর দুষ্কৃতকারিদের সাথে একই ধরনের আচরণ করব? (এমনটি কক্ষণও হতে পারে না)।’ (সূরা সোয়াদ: আয়াত ২৮)।

আরও এক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘এসব লোক-যারা অপরাধ ও অসৎকর্ম অবলম্বন করে নিয়েছে তাদের কি ধারণা, আমি এসব অপরাধীকে আমার সৎকর্মশীল মু’মিন বান্দাদের সাথে রাখব, যাতে করে তাদের জীবন ও মৃত্যু একই রকম হবে? তাদের এ সিদ্ধান্ত একান্তই মন্দ এবং তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।’ (সূরা জাসিয়াহ: আয়াত ২১)।

কোরআন মাজীদের দ্বিতীয় এ যুক্তিটিকে অন্য শব্দে এভাবেও বলা যেতে পারে যে, এ জগতে আমরা দেখি, প্রতিটি বস্তু গঠিত সামগ্রীরও কিছু বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ রয়েছে। যেমন, আগুনের ভেতর উত্তাপ ও দহনের বৈশিষ্ট্য। পানিতে শৈত্য ও নির্বাপণের বৈশিষ্ট্য। ভূমি থেকে অঙ্কুরিত প্রতিটি উদ্ভিদে রয়েছে কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্য। এমন কি মাটির কীট পুঙ্গেরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।

তেমনিভাবে মানুষের প্রত্যেকটি বস্তুগত ও জৈবিক কর্মেরও লক্ষণ ও পরিণতি থাকে। যেমন, আহার গ্রহণ করলে পেট ভরে, ক্ষুধার উপশম হয়। পানি পান করলে তৃপ্তি লাভ হয়, তৃষ্ণা নিবারিত হয়। দৌড়ঝাঁপ করলে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে; শরীরে ঘাম বেরোয়। শক্ত বস্তু খেলে পেটে ব্যথা হয়। বিরেচক খেলে দাস্ত হয়। সুতরাং মানুষের ভালো কিংবা মন্দ চারিত্রিক কর্ম (যা বস্তুগত ক্রিয়া-কর্ম থেকে নিশ্চয়ই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূর প্রসারী), সেগুলোরও কিছু প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি অবশ্যই থাকবে।



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ২৮ জুন, ২০২০, ১:৫৯ এএম says : 0
    দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন একই সঙ্গে মানুষের পরীক্ষার কালও। এ জীবনে যারা আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পথে চলবে তাদের আখেরাতের অফুরন্ত জীবনে জান্নাতদ্বারা পুরস্কৃত করা হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ২৮ জুন, ২০২০, ১:৫৯ এএম says : 0
    আখেরাত বা মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনের ওপর বিশ্বাস ইসলামী ইমান আকিদার অংশ। দুনিয়ার দৃশ্যমান জীবন যেমন এক বাস্তব সত্য, তেমন ইমানদারদের কাছে আখেরাতের জীবনও মহাসত্য হিসেবে বিবেচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ২৮ জুন, ২০২০, ২:০০ এএম says : 0
    আখেরাতের জীবন অনন্ত। ফলে দুনিয়ার জীবনকে পরম পাওয়া এবং এ জীবন নিয়ে মগ্ন থাকা মুমিনদের কাজ হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ২৮ জুন, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
    দুনিয়া অভিলাষী মানুষ দুনিয়াকে যখন তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ভাবে তখন আখেরাতের জীবন সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে। এই অসচেতনতা তাকে বেসামাল করে তোলে। সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার জীবনে যদি আখেরাতের কথা মনে রাখে তবে সে সর্বদাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ২৮ জুন, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
    আখেরাতের জীবনে প্রতিটি বান্দাকে তার স্রষ্টা আল্লাহর কাছে দুনিয়ার জীবনের জন্য জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। এ জবাবদিহিতে তারাই উতরে যাবে যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করেছে। যারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পথে চলে আখেরাতের জীবনের মূলধন সঞ্চয় করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ২৮ জুন, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে আখেরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • salman ২৮ জুন, ২০২০, ৫:১২ এএম says : 0
    Sub han Allah, Allah hu Akbar
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Mustfa ২৯ জুন, ২০২০, ৯:১৫ এএম says : 0
    মাশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন