Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সীমান্তে চলছেই হত্যাকান্ড

চীন-নেপাল-ভুটানের কাছে বিপর্যস্ত ভারত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

দিল্লির প্রতি নতজানু রাজনীতির প্রতিদান : ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা সীমান্তে চীনের হাতে পর্যুদস্ত ভারত। সেখানে দেশটির ২৩ সেনা নিহত হয়েছে। ১০ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে পরে ছেড়ে দিয়েছে চীন। বিহার রাজ্যের নেপাল সীমান্তে ভারতের নির্মাণাধীন নদীভাঙন রোধে বাঁধ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল। এমনকি ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন ওই এলাকা নিজেদের দাবি করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে নেপাল। যা মোদী সরকারের যোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ডং চ্যানেলের পানি দিয়ে আসাম রাজ্যের বাকসা জেলার ২৬টি গ্রামের কৃষক চাষাবাদ করেন। যুগের পর যুগ ধরে চলা ডংয়ের সেই পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে ভুটান। ছোট-বড় সব প্রতিবেশির সীমান্তে যখন ভারত মার খাচ্ছে; তখন সব ঝাঁঝ যেন মেটাচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তে। সীমান্তে একের পর এক হত্যাকাÐ চালিয়েই যাচ্ছে ভারতের সীমান্ত রক্ষী (বিএসএফ)। গতকালও লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সীমান্তে একজন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। সীমান্ত হত্যা নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র গতকালও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, এটা দিল্লির প্রতি নতজানু রাজনীতির প্রতিদান। সরকারের ভারত তোষণনীতির কারণে সীমান্ত হত্যা হচ্ছে। নেপাল, ভুটানের মতো দেশের সঙ্গে ভারত পেরে উঠছে না। অথচ সীমান্তে বাংলাদেশিদের একের পর এক হত্যা করেছে। রাজনৈতিক কারণেই সরকার ও বিরোধী দলগুলো ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। এ দায় সীমান্তে জীবন দিয়ে দিতে হচ্ছে নাগরিকদের।

জানা যায়, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শমসেরনগর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে গতকাল মিজানুর রহমান মিজান (২৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। নিহত মিজান পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের মুংলিবাড়ী গ্রামের ভুট্টু মিয়ার ছেলে। উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের শমসেরনগর সীমান্ত দিয়ে গরু নিয়ে ফেরার পথে বিএসএফ ১৪০ ব্যাটালিয়নের চুয়াংগারখাতা ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত মিজানকে সঙ্গীরা উদ্ধার করে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে সে মারা যায়। রংপুর ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের শমসেরনগর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার সুলতান হোসেন জানান, বিএসএফের গুলিতে মিজানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদপত্র দিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহŸান জানানো হয়েছে।

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চিরদিনের শত্রæতা। সম্পর্কটা সাপে-নেউলে। দুই দেশের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর হাতে একজন পাকিস্তানী নিহত হলে পরের দিনই পাকিস্তান সীমান্ত রক্ষীরা দুই জন ভারতীয়কে হত্যা করে বদল নেয়। কয়েকদিন আগে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সৈন্যদের হাতে ভারতের একজন সিনিয়র সেনা অফিসারসহ ২৩ জন সেনা সদস্যকে প্রাণ দিতে হয়। ১০ জন ভারতীয় সেনা সদস্যকে চীনের সেনারা ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ভারত সীমান্তে সৈন্য বৃদ্ধিসহ যুদ্ধের হম্বিতম্বি করলেও শেষমেষ সমঝোতা করতে বাধ্য হন। দীর্ঘদিন নেপাল প্রতিবেশি ভারতের আগ্রাসী নীতির শিকার হয়েছে। এখন নেপাল কঠোরভাবে ভারতকে চোখ রাঙাচ্ছে। ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং ভারতের চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে। বিহার সীমান্তে নেপাল ভারতের ভ‚মি নিজেদের দাবি করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে। নেপালের এই নতুন মানচিত্র নিয়ে নিজ দেশের বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে গেছে মোদী সরকার।
হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিবেশি সব দেশের সীমান্তে যখন বিপদে; তখন একমাত্র বাংলাদেশের সীমান্তে দাদাগিরি দেখাচ্ছে। দুই দেশ সীমান্ত হত্যা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের ঘোষণা দিলেও বিএসএফ একের পর এক বাংলাদেশিকে হত্যা করছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুতেই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ১৯ জনে পৌঁছেছে। তাদের মতে, ২০১৩ সালে মোট ২৭ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশিকে। আহত হয়েছেন ৬৮ জন। ২০১৫ সালে বিএসএফ হত্যা করেছে ৪৫, ২০১৭ সালে ২৪, ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন ও ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ এবং নির্যাতনে ছয়জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন।

মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর তথ্যানুযায়ী ২০০০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে গত ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার ৬৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পযন্ত ছয় বছরে বিএসএফ গুলি ও শারীরিক নির্যাতনে হত্যা করেছে ৪২ বাংলাদেশিকে। অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সীমান্তে ৩১২ বার হামলা চালানো হয়। এতে ১২৪ বাংলাদেশি নিহত হন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ১৩০টি হামলায় ১৩, ১৯৯৭ সালে ৩৯টি ঘটনায় ১১, ১৯৯৮ সালে ৫৬টি ঘটনায় ২৩, ১৯৯৯ সালে ৪৩টি ঘটনায় ৩৩, ২০০০ সালে ৪২টি ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হন। ভারত প্রতিনিয়তই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়ে আসছে।

 

 



 

Show all comments
  • Mka Rasel Bhuiyan ২৬ জুন, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    খালি সরকারের দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমরা নাগরিকেরা কি করছি? নেপালের একজন হত্যা করার পর সমগ্র নেপালীরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, তারপর ভারত ক্ষমা চেয়েছিল। আর আমরা কয়জন আন্দোলন করি? সরকারের চেয়ে আমাদের দোষই বেশি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথেষ্ট ভালো প্রতিবাদ করছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। সাথে যদি আপমর জনগণ ভাসানী স্টাইলে রাস্তায় নেমে আসে তাহলে ভারতের চিন্তা চেতনা ফিরে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Hoque ২৬ জুন, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
    ভারতীয়রা আবেগী বেশী তাই তার আবেগের কারনে গো মুত্র,গো গোবর পর্যন্ত খেয়ে ফেলে,যেটা পৃথিবীর কোন সভ্য জাতি খাওয়া তো দুরের কথা আশা পর্যন্ত করে না!!!
    Total Reply(0) Reply
  • M.A. Salam ২৬ জুন, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    ভারতের উচিৎ এখনি একটা বিগ বাজেটের সিনেমা বানিয়ে চায়না কে মুখের উপর জবাব দেওয়া।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Farhad Prodhan ২৬ জুন, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    চা ওয়ালাকে ক্ষমতা দায়িত্ব দিলে যা হয় আর কি।
    Total Reply(0) Reply
  • Chowdhury Ayub ২৬ জুন, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    শুনেছি ভাড়তীয়রা চীনা পন্য বর্জন এর জন্যে মাইকিংও করছে, পরে শুনলাম মাইকের গায়ে লেখা মেড ইন চায়না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ মাহবুব ২৬ জুন, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
    আমি চাই ভারত ধ্বংস হোক,,ভারত ভেংগে চুরে টুকরো টুকরো হয়ে যাক,,এই ভারতের আগের রাষ্ট্রপ্রধানরা মোটামুটি ভালো চিল,তারা সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে মিলেমিশে দেশ পরিচালনা করেছে,বিশেষ করে মুসলমানদের তারা অনেক রেসপেক্ট করেছে,কিন্তুু এই চাওয়ালা মুদি আসার পর সব উল্টেগেলো,সে নিজেকে তাদের ভাষায় ভগবান ভাবতে শুরু করলো,মুসলমানদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন করা শুরু করলো,মুসলমানদের শতশত বছরের ঐতিহ্য বাবরি মসজিদ ভেংগে এরা মন্দির বানাচ্চে,,মুসলমানদের কলিজায় আঘাত দিয়েছে এরা, প্রতিনিয়তো আমাদের বর্ডারে আমাদের ভাই বোনকে শিয়াল কুকুরের মত হত্যা করতেছে,,তাই আল্লাহর আজাব ও গজবে এই ইন্ডিয়া পৃথিবীর মানচিএ থেকে মুচে যাবে ইনশাআল্লাহ,,চীন,পাকিস্তান,নেপাল,মায়ানমার, বাংলাদেশ সবাই এখন ভারতকে ঘৃনা করে,ইনশাআল্লাহ সবাই মিলে ভারতের গলা চিপে ধরে মাথার উপর উঠিয়ে এমন জোরে আছাড় দিবে সেদিন ভারত ভেংগে চুরে খানখান হয়ে যাবে,,
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৬ জুন, ২০২০, ৩:০৯ এএম says : 0
    উৎকৃষ্ট রাস্টের নিকৃস্ট পরিচালক হইলে যাহা হইবার তাহাই হয়। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীমান্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ