পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী (কামাল লোহানী) আর নেই। কামাল লোহানী নামে সবার কাছে পরিচিত এই বিশিষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গতকাল রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বরেণ্য এই ব্যাক্তিত্বের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
কামাল লোহানীর মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন দলের নেতা, সাংস্কৃতির সংগঠন পৃথক পৃথক ভাবে শোক জানিয়েছেন।
দেশের সাংস্কৃতি অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বুধবার তাকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কাভিড টেস্ট করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ ধরা পড়ে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তিনি চিকিসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
শোকাবার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, কামাল লোহানীর মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল লোহানী বাঙালির ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি একজন আদর্শবান ও গুণী মানুষ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের আর্দশ ও অসা¤প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সংস্কৃতি বিকাশের আন্দোলনে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কামাল লোহানীর লাশ হাসপাতাল থেকে উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান সহকর্মী ও দেশের সাংস্কৃতির ব্যক্তিত্বরা। এরপর লাশ সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার সনাতলা গ্রামে নেয়া হয়। সেখানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
কামাল লোহানী হচ্ছেন প্রখ্যাত টিভি ব্যক্তিত্ব মরহুম ফজলে লোহানীর ভাই। তিনি ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার খান মনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি পাবনা জেলা স্কুলে ছাত্র হিসেবে আন্দোলনে যুক্ত হন। এটাই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে দুইবার গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।
১৯৫৮ সালে যুক্ত হন নৃত্যশিল্পের সঙ্গে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবর্ষ পালনের দাবির আন্দোলনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে নেতৃতে দেন। ১৯৬২ সালে তিনি ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক হন। ভাসানী ন্যাপের নেতা হিসেবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান। সাংবাদিকতার শুরু করেন দৈনিক মিল্লাতে। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ,দৈনিক বার্তায় চাকরি করেন।
তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুই দফায় মহাপরিচালক ও পাঁচ বছর ছায়ানটের সম্পাদক ছিলেন। তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা পদেও ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।