পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত আড়াই মাসে ভাইরাসজনিত এ রোগে আড়াই লাখ গরু-ছাড়ল-আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যার বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলায় প্রায় দেড় লাখ এবং মৌলভীবাজার ও লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় এক লাখ গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এতে ৫ লাখ ৭৭ হাজার খামারিসহ কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এ রোগের নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় দ্রুত এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় কয়েক হাজার গরু মারা গেছে বলে জানা গেছে। এদিকে এ ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য বাজারে পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধের সঙ্কট থাকায় তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও চিকিৎসা চলছে ধীরগতিতে। এতে আগামী কোরবানীর ঈদের আগে বড় ধাকায় পড়লো খামারীরা।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত প্রতিটি গবাদিপশু সরেজমিনে পরিদর্শন করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশনা দিলে ও তা গতকাল পর্যন্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (স¤প্রসারণ) এ কে এম আরিফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এ রোগটি সাধারণত মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসজনিত রোগ। লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত গরুর শরীর প্রথমে ফুলে গুটি গুটি হয়। সারা দেশে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ গবাদিপশু আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি। আগামী ঈদের আগে হয়তো ভালো হতে পারে। তিনি বলেন, গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়েছে। আগামী রোববার থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হবে।
অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) মো. নজরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এখন গবাদিপশুর খামার করছেন। দেশে এমনি করোনা মহামারি চলছে তার মধ্যে এ রোগ দেখা দেয়ায় বেকার যুবক ও খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রæত চিকিৎস দেয়া শুরু করেছি। দ্রুতই ভাল হবে।
প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে দেশে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ছে। কয়েক বছরে গোশতের দাম বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশু পালনে আগ্রহী হয়েছেন দেশের খামারিরা। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে পশুর খামার করার বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, প্রতিবছরই খামার নিবন্ধনের আওতায় খামারিদের সংখ্যা হিসাব করা হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে খামারির সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল চার লাখ ৪২ হাজার। সে হিসাবে এক বছরেই খামারির সংখ্যা এক লাখের উপরে বেড়েছে। তবে এই খামারিদের মধ্যে ডেইরি খামারও রয়েছে।
গত অক্টোবরে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষিশুমারি ২০১৯-এর প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে গরু আছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫টি। আর ছাগলের সংখ্যা এক কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৩টি। এর বাইরে সারা দেশে মহিষ আছে সাত লাখ ১৮ হাজার ৪১১টি। ভেড়ার সংখ্যা আট লাখ ৯২ হাজার ৬২৮টি।
গত ২০১৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, দেশে ছাগল ছিল দুই কোটি ৫৯ লাখ। আর গরুর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৩৯ লাখ। দেশে ছাগলের সংখ্যা ৬৬ লাখ কমলেও গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৬ লাখ।
গত আড়াই মাসে ল²ীপুরের কমলনগরে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগে (এলএসডি) প্রায় ১০ হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। এতে খামারিসহ কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সর্বত্রই গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শতাধিক গরু মারা গেছে। রামদাস ধনিরাম গ্রামের কৃষক রোস্তম আলী জানান, তার একটি গাভী ও ৩ টি বকনা বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি বাছুর মারা গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন তানভীক জাহান ইনকিলাবকে বলেন, গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ যেহেতু মশা-মাছি থেকে ছড়ায় সেজন্য আক্রান্ত গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
নওগাঁয় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকটি গরু মারাও গেছে। এতে চরম আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষক। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার গুয়াতা গ্রামের নাজিদুল হকের একটি, বাবলু হোসেনের একটি, আবদুর রাজ্জাকের একটিসহ ১০-১২টি গরু মারা গেছে।
কলারোয়া উপজেলায় ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে শত শত গরু। উপজেলার পিছলাপোল গ্রামের গরু পালনকারী আশরাফুল ইসলাম জানান, তার চারটি গরুর গায়ে গুঁটি গুঁটি বসন্তের মতো বের হয়েছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে গবাদিপশুর মাঝে ব্যাপক হারে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, এই ভাইরাসটি গতবছর থেকে দেখা যাচ্ছে। এবছর রোগটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর জেলার সদর, খানসামা ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্দেশে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রণিসম্পদ অধিদফতরকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।