Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণতন্ত্রের নিরিখে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড এবং ভারতের ভূমিকা

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর

মনে হয় তারেক রহমানকে নিয়ে মহা উদ্বেগে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। তারেক রহমান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান। জিয়াউর রহমানের আরেক সন্তান আরাফাত রহমান কিছু দিন আগে মারা যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়ার একমাত্র সন্তান হিসেবে তারেক তার ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। তারেকের মা এই দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অবাধ নির্বাচনে জয়ী হয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের কর্মকা- দেখে দেশবাসীর মনে এই আশঙ্কা দৃঢ়মূল হচ্ছে যে, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আর যাতে কিছুতেই ক্ষমতায় আসতে না পারে সে লক্ষ্যে ন্যায়-অন্যায় কোনো পন্থা অবলম্বনেই দ্বিধা করবে না সরকার।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৭৫৭ সালে পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে সা¤্রাজ্যবাদী ইংরেজদের পদানত হয় দক্ষিণ এশীয় এই উপমহাদেশ। এর পর প্রথম একশ বছর ধরে প্রধানত মুসলমানরা এদেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যায়। মজনু শাহের নেতৃত্বে ফকীর বিপ্লব, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা খ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রাম, হাজী শরীয়তুল্লাহ দুদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ফারায়েজী আন্দোলন, মহীশূর শার্দুল হায়দর আলী ও টিপু সুতলানের সংগ্রাম, বালাকোট খ্যাত শহীদ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর নেতৃত্বাধীন জিহাদ আন্দোলন এবং সর্বশেষ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত এর প্রতিটি আন্দোলনই পরাজিত হয় প্রতিবেশী বৃহৎ হিন্দু সম্প্রদায়ের অসহযোগিতার কারণে।
সর্বশেষ সিপাহী বিদ্রোহও ব্যর্থ হওয়ার পর হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সাহিত্য স¤্রাট বঙ্কিম চন্দ্র ‘সংবাদ ভাস্বর’-এ লিখলেনÑ ‘পাঠকসকল জয় জয় বলিয়া নৃত্য কর, হিন্দু প্রজাসকল দেবালয়ে সকলের পূজা দেও, আমাদের রাজ্যেশ্বর শত্রু জয়ী হইলেন।’
আর কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখলেন :
যবনের যত বংশ একেবারে হবে ধ্বংস
সাজিয়াছে কোম্পানির সেনা
গরু জরু লবে কেড়ে চাপ দেড়ে যত নেড়ে
এই বেলা সামাল সামাল।
ঈশ্বর গুপ্ত আরও লিখেন :
চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়।
ব্রিটিশের রাজলক্ষ্মী স্থির যেন রয়॥
এমন সুখের রাজ্য আর নাহি হয়।
শাস্ত্রমতে এই রাজ্য রাম রাজ্য কয়॥
সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর মুলসমানদের ওপর নতুন করে ইংরেজ সরকারের নির্যাতনের স্টিম রোলার নেমে আসে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর ভারতের স্যার সৈয়দ আহমদ বাংলার নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখ তদানীন্তন মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে হলেও ইংরেজ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে হিন্দুদের মত আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মুসলমানদের এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালান।
এই সহযোগিতা যুগের শেষ নেতা নবাব সলিমুল্লাহর আমলে প্রধানত প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে বাংলা বিহার উড়িষ্যা সমন্বয়ে গঠিত তদানীন্তন বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ভেঙে ঢাকা রাজধানীসহ ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামের একটি নতুন প্রদেশগঠন করা হলে কলকাতা প্রবাসী হিন্দু জমিদাররা পূর্ববঙ্গে অবস্থিত তাদের জমিদারিতে তাদের প্রভাব হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কায় এবং নবগঠিত প্রদেশটি মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিরাট আন্দোলন সৃষ্টি করে বসেন। যে হিন্দু নেতৃত্ব পলাশীর পর থেকে এ পর্যন্ত সব সময় ইংরেজ সরকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন তাদের আকস্মিক রুদ্র মূর্তিতে ইংরেজ সরকার ভড়কে যায় এবং বঙ্গভঙ্গের মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দিয়ে পুরাতন মিত্রদের মনোরঞ্জনের প্রয়াস পায়। এদিকে নবাব সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে দীর্ঘ অবহেলিত পূর্ববঙ্গের উন্নয়নের কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় তার প্রতি সমর্থন দান করেন। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। তার ক্ষোভ প্রশমনের লক্ষ্যে ইংরেজ সরকার তাঁর অন্যতম দাবি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।
এতেও কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরা ক্ষুব্ধ হন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তাদের যুক্তি ছিল, এর দ্বারা নাকি বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের মতো পাপ হবে। এবার তাদের যুক্তি হলো, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে নাকি বঙ্গ সংস্কৃতি দ্বিখ-িত হবে। তবে তাদের আরেকটা বক্তব্যে তাদের আসল মনোভাবটি প্রকাশ পেয়ে গেল বড় কদর্যভাবে। তারা বললেন পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষঅশিক্ষিত মুসলমান চাষাভুষা। তাই তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তারা চাষাভুষা আছে তাই থাক, তাদের শিক্ষা বা উচ্চ শিক্ষা কোনোটারই প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ হলে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের মতো পাপ হবে বলে তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে যে যুক্তি (কুযুক্তি) দেখিয়েছিলেন তাও যে ছিল ভাওতা তারও প্রমাণ মিলল কয়েক বছর পরই। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের অবসানে আমাদের প্রথম স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রাক্কালে মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম এবং কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসুর উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে বৃহত্তর সার্বভৌম বাংলা রাষ্ট্র গঠনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়, তার প্রতি মুসলিম লীগ হাইকমান্ডের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও প্রধানত গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল প্রমুখ অবাঙ্গালী হিন্দু নেতা এবং বাঙালি হিন্দু মহাসভা নেতা শ্যামপ্রসাদ মুখার্জি প্রমুখের বিরোধিতার কারণে সব বাঙালির ঐক্যবদ্ধ এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হয়নি। ১৯০৫ সালে যারা বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের মতো পাপের কথা বলে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন, তাদের উত্তর সূরিরাই ১৯৪৭ সালে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের মতো পাপ করার জন্য উম্মাদ হয়ে ওঠেন।
যাহোক ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে উপমহাদেশের বিদেশি ইংরেজ শাসনের অবসানে আমরা প্রথম স্বাধীনতা লাভ করি যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মাধ্যমে, তার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালি মুসলমানের অবদান সর্বাধিক থাকলেও সে রাষ্ট্রের রাজধানীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব হেডকোয়ার্টার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত থাকাতে প্রথম থেকেই সে রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ববঙ্গের জনগণ সব বিষয়ে বঞ্চিত হতে থাকে। সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে বাংলা ভাষীদের সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মধ্যে উর্দু ভাষীদের প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার সুবাদে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার একটা গোপন চক্রান্ত শুরু হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই শুরু হয় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন।
এই ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি গড়ে ওঠে পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তি ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মর্মবাণীর আলোকে আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসনের দাবি, যা জেনালের আইয়ুবের সামরিক শাসনের আমলে জনগণের মধ্যে গভীর স্বাধিকার চেতনা সৃষ্টি করে। জনগণের এই স্বাধিকার চেতনাকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে জেনারেল ইয়াহিয়া পশুবলে ধ্বংস করে দিতে চেষ্টা করলে জনগণ জান কবুল করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে ।
বাংলাদেশের জনগণের চরম দুর্ভাগ্য, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে জনগণের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কখনো জোরদার হতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আমলেই গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটা মাত্র সরকারি দল রেখে দেশে বাকশালী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। এর পাশাপাশি সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে দেশে মাত্র চারটি সরকারি পত্রিকা চালু রাখা হয়।
বহু দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে এ অবস্থার অবসানে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হলেও একপর্যায়ে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সামরিক ক্যুয়ের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বসলে তাকে অভিনন্দন জানান দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। এটা তিনি করেন সম্ভবত এ বিবেচনায় যে, উৎখাত হওয়া ওই নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। অর্থাৎ তাঁর বিবেচনায় নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তুলনায় সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলের শাসন অধিকতর গ্রহণযোগ্য। এটা কিন্তু তার গণতন্ত্রপ্রীতির প্রমাণ বহন করে না। অপরদিকে জেনারেল এরশাদের রাজনৈতিক জীবনের শঠতার প্রমাণ হিসেবে এটুকু পাঠকবর্গকে স্মরণ করিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে যে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রথম দিকে তিনি যখনই কোনো সাক্ষাৎকার দিতেন তার পাশে জেনারেল জিয়ার ছবি রেখে প্রমাণের চেষ্টা করতেন যে, তিনি শহীদ জিয়ার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ও সমর্থক। অথচ সেই এরশাদই সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে বলেছেন, তিনি সব সময়ই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এ কথা ভারতের জমিনে বলে ভারতীয়দের খুশি করতে পারবেন তিনি এ বিশ্বাস নিশ্চয়ই তাঁর আছে।
বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনও স্থিতিশীল ও জোরদার হয়ে উঠতে পারছে না তার কারণ একশ্রেণির রাজনীতিকের চরম ক্ষমতা লোভ ও সুবিধাবাদিতা। ক্ষমতার প্রয়োজনে তারা ইবলিসের সঙ্গেও হাত মেলাতে পারেন এবং অম্লান বদনে নিজেদের ঘোষিত নীতি থেকে পিছটান দিতে পারেন। আমরা একটি নির্বাচিত সরকারকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখলের যে ঘটনার কথা উপরে উল্লেখ করেছি তারপর এরশাদের শাসন হটানোর লক্ষ্যে অল্প দিনের মধ্যেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগও সে আন্দোলনে শামিল হয়।
এরশাদ শাসনের নিয়মতান্ত্রিক অবসানের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্ন উঠলে এ ব্যাপারে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে একমত হয়। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়। দেশের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে সুসংগঠিত দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিশ্বাস ছিল, আওয়ামী লীগই নির্বাচনে জয়ী হবে। নিজ ভোটকেন্দ্রে ভোটদানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতাকালে তিনি বলেন, আমি সব জেলার খবর নিয়েছি। নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছে। আপনারা লক্ষ রাখবেন কেউ যেন আবার নির্বাচনে হেরে গিয়ে এর মধ্যে কারচুপি আবিষ্কার না করে। পরে নির্বাচনের পূর্ণ ফলাফল বের হলে যখন দেখা গেল আওয়ামী লীগ নয়, বিজয়ী হয়েছে বিএনপি, তিনি অবলীলাক্রমে বলে ফেললেন নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ জয়ী না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনেও অলৌকিকভাবে কারচুপি হতেই হবে।
এরশাদ আমলের পর প্রথম নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে ওই সরকারের আমলে প্রধানত তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দাবিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধান সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা হয়। এই পদ্ধতিতে দেশে বেশ কটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই প্রধান দল পালাক্রমে ক্ষমতায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। পরে একপর্যায়ে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হলে আওয়ামী নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে সে নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। একটি প্রধান দল নির্বাচন বর্জন করায় সে নির্বাচন সব গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করায় জনগণও এতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিরোধী দল তো দূরের কথা সরকারি দলের অনেক নেতা-কর্মীও ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার চিন্তা বাদ দেন। কারণ তারা জানতেন ভোট কেন্দ্রে না গেলেও তাদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা ঠিকই করবে দলের নেতা-কর্মীরা। বাস্তবে ঘটেও সেটাই। ভোট কেন্দ্র ফাঁকা পেয়ে সরকারি দলের অল্পসংখ্যক নেতা-কর্মী ব্যালটপত্রে ইচ্ছামতো সিল মেরে সরকারি দলের প্রার্থীদের ভোট সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে তোলার সুযোগ গ্রহণ করেন। এভাবেই বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ভবিষ্যতে যাতে তারা পুনর্বার বিনা ক্লেশে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে সে লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দলের দুই প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মামলার মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকা- থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র সফল হলে আওয়ামী লীগ হয়তো পুনর্বার ক্ষমতাসীন হতে পারবে। তবে নির্মমভাবে বিপন্ন হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র। গণতন্ত্র হত্যার এ দায় থেকে ইতিহাসের কাছে কখনো মুক্তি পাবেন না এককালের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের বর্তমানের গণতন্ত্রঘাতী সভানেত্রী শেখ হাসিনা
শেষ করার আগে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রসঙ্গে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মনোভাব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বৃটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের কথা। বৃটেন দীর্ঘ দিন থেকেই স্বদেশে গণতন্ত্র চর্চা করেও দক্ষিণ এশিয়াসহ বহু দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করে চলে তার সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থে। বর্তমানের স্বাধীন ভারতও স্বদেশে গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত রাখলেও বাংলাদেশে এমন একটি গণতন্ত্র-বিরোধী দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে চলেছে যার কাছ থেকে তার আধিপত্যবাদী স্বার্থ আদায় করে নেয়া সহজ হয়। একদিকে গণতন্ত্র সমর্থন, আরেকদিকে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে অন্ধ পৃষ্ঠপোষকতা দান করে ভারত কি তার গণতন্ত্র-চর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে না?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণতন্ত্রের নিরিখে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড এবং ভারতের ভূমিকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ