Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিন বছরে দস্যুদের হাতে প্রাণ হারাল ২শ’ জেলে

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রবিউল ইসলাম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা

তিন বছরে সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে ডাকাতদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত দুইশ’ জেলে। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৭৯ জন ডাকাত। একাধিক সূত্র জানায়, সুন্দরবনের বাঘেরহাট চাঁদপাই ও শরণখোলা, পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৬টি বন ডাকাত বাহিনী। এসব বাহিনীর টোকেন ছাড়া জেলেদের মৎস্যসম্পদ আহরণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছর বনডাকাতরা প্রায় ২ লাখ জেলে ও বাওয়ালীদের কাছ থেকে মুক্তিপণের দাবিতে আদায় করছে ৫০ কোটি টাকা। আর টোকেনবিহীন জেলেদের চাঁদার দাবিতে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে ডাকাত বাহিনীর এমন বেপরোয়া কর্মকা-ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলে পরিবারগুলো। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও গৌন হিসাবে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ডাকাতদের সরবরাহকৃত এ টোকেন নিতে হচ্ছে জেলেদের। তাছাড়া জাল, নৌকা, ডিজেল, চাল, ডাল ও অন্যন্য প্রয়োজনীয় মালামালও নিয়ে যাচ্ছে। এ বনডাকাত দলগুলোর হাতে মুক্তিপণের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই অপহরণ হচ্ছে হাজার হাজার জেলে বাওয়ালী। গত ৩ বছরে র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এসব বাহিনীর অন্তত ৯ জন ডাকাত বাহিনীর প্রধানসহ ৭৯ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা গেলেও থামেনি তাদের দাপট। পরে ওইসব বাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ডাররা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজ নামে জেলে অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যেতে থাকে। এ কারণে কমছে না সুন্দরবনের এ ডাকাতির ঘটনা। ৩ বছরে বিভিন্ন বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে প্রায় ২শ’ জেলে। আর এসব বাহিনীর হাতে প্রতি বছর অপহরণ হয় প্রায় ১ হাজার জেলেবনজীবী। অপহরণদের বেশির ভাগই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মুক্তি পান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুন্দরবন বিভাগ ও জেলে বাওয়ালীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে বর্তমানে ১৬টি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। বাহিনীগুলো হলোÑ আমজাদ বাহিনী, ফরহাদ বাহিনী, শহিদুল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, জাকির বাহিনী, রুবেল বাহিনী, বাকিবিল্লাহ বাহিনী, মোর্তজা বাহিনী, আনোয়ার বাহিনী, তছলিম বাহিনী, দুইভাই বাহিনী। সুন্দরবনের ডাকাতদের মধ্যে বর্তমানে ৬টি বাহিনী বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে সূত্রে জানায়। এদের চাঁদা না দিলে সুন্দরবনের জেলেদের মাছ ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে দেয়া হয় না বলে বনজীবীদের অভিযোগ। সুন্দরবনের বাঘ উপকূলবাসীর কাছে বনাঞ্চলের রক্ষাকবজ হিসাবে পরিচিতি থাকলেও বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে বাঘ আতঙ্ক এখন গৌন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে বাহিনীগুলো। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় মূর্তিমান হয়ে ওঠা ডাকাতদের হামলা লুটপাট অপহরণে অতিষ্ঠ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা। পূর্ব সুন্দরবনের একজন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) জানান, সুন্দরবনের বনরক্ষীদের চেয়ে বনডাকাতদের রয়েছে অত্যাধুনিক দেশি- বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। সাতক্ষীরা শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জ এলাকার কয়েকজন বনজীবী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকাকেন্দ্রিক ডাকাতদের চাঁদা দিয়ে মাছ, কাঁকড়া, মধু সংগ্রহ করতে যেতে হচ্ছে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের সুন্দরবনে। আর চাঁদা দিতে অপারগ হলে মুক্তিপণের জন্য তাদের অপহরণ করা হচ্ছে। তারা আরো জানান, ডাকাতদের পণ আর মহাজনের ঋণের জালে জড়িয়ে বনজীবীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিন বছরে দস্যুদের হাতে প্রাণ হারাল ২শ’ জেলে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ