Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্মানজনক মানবিক সহায়তা ও ইসলাম

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

দুনিয়াতে ইসলাম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে আখ্যায়িত করেছেন রাসূলে আকরাম সা.। এ ব্যাপারে কোরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে বা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৭৪)।

শুধুমাত্র অর্থসম্পদ বিলিয়ে দেয়ার নামই দান নয়। হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক সৎকাজই একটি দান। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, ‘যখন আল্লাহপাকের ছায়া ব্যতিত আর কোনো ছায়া থাকবে না, তখন আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির লোককে তার আরশের ছায়া দান করবেন। (তাদের মধ্যে একজন হলো) যে ব্যক্তি গোপনে দান বা সদকাহ করে যে, তার ডান হাত যান দান করে বাম হাত জানে না। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)।

সমাজে এমন অনেক মানুষ থাকেন যারা দান নিতে পারেন না তার সামাজিক অবস্থানের কারণে। আবার কারও কাছে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারেন না। এমন মানুষকে দান করা বেশি সওয়াবের কাজ। এমন মানুষ যেন দান নিতে বিব্রত না হয়, তাই কোরআন হাদিসে গোপনে দান করতে অনেক বেশি উৎসাহিত করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে ভালো কথা। আর যদি গোপনে গরিব-দুঃখীকে পৌঁছে দাও তবে তা তোমাদের জন্য অতি উত্তম এবং এভাবে তোমাদের অনেক গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর তোমরা যা কিছু করে থাক, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা জানেন।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৭১)।

একলোক ফলের দোকানে গেলেন ফল কিনতে। দোকানি তাকে আপেল আঙুর মাল্টা আনার ইত্যাদির দাম বলল। তিনি দরাদরি করে কিছু ফল মেপে দিতে বললেন। একজন কর্মচারী তার জিনিস প্যাক করতে লাগল। এরই মধ্যে এক মহিলা দুটি বাচ্চাসহ ফল কিনতে এলে দোকানি তাকে সব ফলের দাম কম কম করে বলল এবং মহিলাটি কিনতে চাওয়ায় তাড়াতাড়ি নিজ হাতে কয়েক রকম ফল মেপে দিতে লাগল। প্রথম ক্রেতা ব্যাপারটি খেয়াল করে এরপর দেখলেন যে, মাপের মধ্যেও দোকানি তাকে একটু বেশি বেশি করে দিচ্ছে। গোপনে দান করার সুন্দর একটি ঘটনা পড়া যেতে পারে।

মহিলা টাকা দিয়ে চলে যাওয়ার পর প্রথম ক্রেতা এসবের কারণ জানতে চাইলেন। তখন দোকানি বলল, আপনি কিছু মনে করবেন না। এ ভদ্রমহিলা একজন আত্মমর্যাদাশালী মানুষ। আগে তাদের অবস্থা খুব ভালো ছিল। বর্তমানে তিনি স্বামীহারা। এতিম বাচ্চাদের নিয়ে কষ্টে আছেন। কিন্তু কারো দয়া নিতে চান না। আমরা সবাই তাদের একথা জানি বলে তিনি কিছু কিনতে এলে দাম কমিয়ে বলি আর মাপেও যা পারি বাড়িয়ে দেই। তিনি না বুঝতে পেরেই আমাদের সহায়তা নিয়ে আরেকটু স্বাচ্ছন্দে চলেন।

এই ক্রেতা এটি শুনে খুব খুশি হলেন। বললেন, আমার ফলগুলোর যে দাম আপনি প্রথম চেয়েছিলেন, তাই রাখুন। সামান্য যতটুকু আমি দরাদরি করে কমিয়ে ছিলাম, সেটুকু আপনার জন্য থাকুক। আপনার মতো পরোপকারী ব্যবসায়ী স্বাভাবিক লাভটুকু করতে পারলে এমন নেক কাজে লাগাতে পারবেন। দোকানি বললেন, আপনিও একজন হৃদয়বান ক্রেতা।

আসলে আমরা সবাই যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের জায়গা থেকে একটু সচেষ্ট হই, তাহলে একে অপরকে নীরবে আনন্দ দিয়ে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করতে সক্ষম হবো। নবী করীম সা. এর হাদীসের মর্মার্থ। বিধবা এতিম অসহায় ও উপার্জন হারা লোকের জন্য যে কষ্ট ও উপার্জন করে তার সওয়াব হবে দিনভর রোজা রেখে, রাতভর নামাজে দাঁড়িয়ে থেকে এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধে সময় কাটানো ব্যক্তির মতো। (বোখারী ও মুসলিম, সহীহুল জামে ৫৭৭৩)।



 

Show all comments
  • মরিয়ম বিবি ১৮ জুন, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    ইসলাম মানে শান্তি। তাই ইসলাম প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে অশান্ত, বিশৃঙ্খল ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মরুময় আরবের জেহালত সমাজে সৌহার্দ্যময় পরিবেশ, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরে আসে।
    Total Reply(0) Reply
  • প্রিন্স নুর ১৮ জুন, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    মানুষ মানুষকে মানবতা, পরমতসহিষুষ্ণতা ও ঔদার্যের দৃষ্টিকোণ থেকে চিনতে শেখে, পরস্পর পরস্পরকে সম্মান করতে শেখে এবং অজ্ঞতা-মূর্খতা ও পাষণ্ডতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসে। ইসলামের কল্যাণে বর্বর আরব সমাজ ওহির জ্ঞানে আলোকিত হয়, সব নিষ্ঠুরতা তিরোহিত হয় এবং মানবতা পূর্ণতা পায়। রাজা-প্রজার পার্থক্য, ধনী-নির্ধনের ভেদাভেদ আর সাদা-কালোর বৈষম্য দূরীভূত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ১৮ জুন, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    ইসলাম ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কার্যকর ধর্ম। ইসলাম আমাদেরকে ইহকালীন জীবনে সৌভাগ্য ও পরকালীন জীবনে চিরস্থায়ী নেয়ামতের নির্দেশ করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার ‘পুরুষ হোক কিংবা নারী’ আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেবো যা তারা করতো। -সূরা নাহল: ৯৭
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ১৮ জুন, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    মানবতার বড়ই দুর্দিনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামের প্রবর্তন হলো যার মাধ্যমে তিনি হলেন বিশ্বমানবতার পরম সুহৃদ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.); যার শুভাগমনের মধ্য দিয়েই ধরণীতে মানবিকতার সব দিক পূর্ণতা লাভ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ১৮ জুন, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা আমাদের মানবিক হওয়ার তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Zahid Hassan ১৮ জুন, ২০২০, ৮:৩৪ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন