বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দুনিয়াতে ইসলাম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে আখ্যায়িত করেছেন রাসূলে আকরাম সা.। এ ব্যাপারে কোরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে বা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৭৪)।
শুধুমাত্র অর্থসম্পদ বিলিয়ে দেয়ার নামই দান নয়। হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক সৎকাজই একটি দান। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, ‘যখন আল্লাহপাকের ছায়া ব্যতিত আর কোনো ছায়া থাকবে না, তখন আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির লোককে তার আরশের ছায়া দান করবেন। (তাদের মধ্যে একজন হলো) যে ব্যক্তি গোপনে দান বা সদকাহ করে যে, তার ডান হাত যান দান করে বাম হাত জানে না। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)।
সমাজে এমন অনেক মানুষ থাকেন যারা দান নিতে পারেন না তার সামাজিক অবস্থানের কারণে। আবার কারও কাছে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারেন না। এমন মানুষকে দান করা বেশি সওয়াবের কাজ। এমন মানুষ যেন দান নিতে বিব্রত না হয়, তাই কোরআন হাদিসে গোপনে দান করতে অনেক বেশি উৎসাহিত করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে ভালো কথা। আর যদি গোপনে গরিব-দুঃখীকে পৌঁছে দাও তবে তা তোমাদের জন্য অতি উত্তম এবং এভাবে তোমাদের অনেক গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর তোমরা যা কিছু করে থাক, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা জানেন।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২৭১)।
একলোক ফলের দোকানে গেলেন ফল কিনতে। দোকানি তাকে আপেল আঙুর মাল্টা আনার ইত্যাদির দাম বলল। তিনি দরাদরি করে কিছু ফল মেপে দিতে বললেন। একজন কর্মচারী তার জিনিস প্যাক করতে লাগল। এরই মধ্যে এক মহিলা দুটি বাচ্চাসহ ফল কিনতে এলে দোকানি তাকে সব ফলের দাম কম কম করে বলল এবং মহিলাটি কিনতে চাওয়ায় তাড়াতাড়ি নিজ হাতে কয়েক রকম ফল মেপে দিতে লাগল। প্রথম ক্রেতা ব্যাপারটি খেয়াল করে এরপর দেখলেন যে, মাপের মধ্যেও দোকানি তাকে একটু বেশি বেশি করে দিচ্ছে। গোপনে দান করার সুন্দর একটি ঘটনা পড়া যেতে পারে।
মহিলা টাকা দিয়ে চলে যাওয়ার পর প্রথম ক্রেতা এসবের কারণ জানতে চাইলেন। তখন দোকানি বলল, আপনি কিছু মনে করবেন না। এ ভদ্রমহিলা একজন আত্মমর্যাদাশালী মানুষ। আগে তাদের অবস্থা খুব ভালো ছিল। বর্তমানে তিনি স্বামীহারা। এতিম বাচ্চাদের নিয়ে কষ্টে আছেন। কিন্তু কারো দয়া নিতে চান না। আমরা সবাই তাদের একথা জানি বলে তিনি কিছু কিনতে এলে দাম কমিয়ে বলি আর মাপেও যা পারি বাড়িয়ে দেই। তিনি না বুঝতে পেরেই আমাদের সহায়তা নিয়ে আরেকটু স্বাচ্ছন্দে চলেন।
এই ক্রেতা এটি শুনে খুব খুশি হলেন। বললেন, আমার ফলগুলোর যে দাম আপনি প্রথম চেয়েছিলেন, তাই রাখুন। সামান্য যতটুকু আমি দরাদরি করে কমিয়ে ছিলাম, সেটুকু আপনার জন্য থাকুক। আপনার মতো পরোপকারী ব্যবসায়ী স্বাভাবিক লাভটুকু করতে পারলে এমন নেক কাজে লাগাতে পারবেন। দোকানি বললেন, আপনিও একজন হৃদয়বান ক্রেতা।
আসলে আমরা সবাই যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের জায়গা থেকে একটু সচেষ্ট হই, তাহলে একে অপরকে নীরবে আনন্দ দিয়ে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করতে সক্ষম হবো। নবী করীম সা. এর হাদীসের মর্মার্থ। বিধবা এতিম অসহায় ও উপার্জন হারা লোকের জন্য যে কষ্ট ও উপার্জন করে তার সওয়াব হবে দিনভর রোজা রেখে, রাতভর নামাজে দাঁড়িয়ে থেকে এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধে সময় কাটানো ব্যক্তির মতো। (বোখারী ও মুসলিম, সহীহুল জামে ৫৭৭৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।