বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআনুল কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন একশ্রেণীর সৃষ্টির নামকরণ করেছেন ‘মালাকুন’ অর্থাৎ ফিরিস্তা বলে। এই মালাকুন শব্দটি একবচনে আল কোরআনে এসেছে ১৩ বার। দ্বিবচনে ‘মালাকাইনে’রূপে এসেছে দু’বার। আর বহুবচনে ‘মালাইকাতুন’রূপে এসেছে ৭৩। একুনে ১৩+২+৭৩=৮৮ বার ফিরিস্তা প্রসঙ্গ আল কোরআনে আলোচিত হয়েছে। প্রকৃতই ফিরিস্তামন্ডলী আল্লাহপাকের সৃষ্টি। তাদের নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বংশপরম্পরা বা সন্তান-সন্ততি এবং নারী-পুরুষ নেই। তাদের দেহ এতই সূ² যে, তা দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। কোনো যন্ত্রের সাহায্যে শনাক্ত করা যায় না। তারা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম। মহান রাব্বুল আলামীন সৃষ্ট জগতের ভাঙা-গড়ার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) ফিরিস্তাগণ আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না, যা আদিষ্ট হয় তাই করে। (সূরা আত তাহরীম : আয়াত ৬)। (খ) তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের যা আদেশ দেয়া হয় তাই পালন করে। (সূরা আন নাহল : আয়াত ৫০)। (গ) ফিরিস্তাগণ আল্লাহর ইবাদতে অহঙ্কার করে না ও ক্লান্তিবোধ করে না। তারা দিবানিশি আল্লাহপাকের পবিত্রতা ঘোষণা করে, তারা শৈথিল্য করে না। (সূরা আল আম্বিয়া : আয়াত ১৯-২০)।
(ঘ) হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ফিরিস্তাগণ নূর হতে সৃষ্টি, জ্বিন জাতি অগ্নিশিখা হতে সৃষ্ট, আর আদম আ. ওই বস্তু দ্বারা সৃষ্ট, যা তোমাদের সামনে বর্ণনা করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম)। এই হাদিসে নূর বলতে অগ্নি হতে জৌতির্ময় অতি সূ² এক মৌলিক উপকরণকে বোঝানো হয়েছে। যার হাকিকত একমাত্র আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। (নিবরাস : পৃ. ২৮৭)। (ঙ) জমহুর মুসলমানদের বিশ্বাস এই যে, ফিরিস্তাগণ অতি সূ² দেহধারী। তারা আল্লাহ পাকের দাসত্ব ও আনুগত্য করে। তাদের মধ্যে নারী- পুরুষের বৈশিষ্ট্য নেই। (শরহুল মাকাসিদ : খন্ড ৩, পৃ. ৩১৯)
ইসলামে ফিরিস্তাদের প্রতি ঈমান আনয়ন বাধ্যতামূলক। কোরআনুল মাজীদ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে ও হাদিস শরীফে ফিরিস্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর প্রতি রবের পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবের ওপর ঈমান আনেন এবং মুমিনগণও। সকলেই আল্লাহ, তার ফিরিস্তামন্ডলী, তার কিতাবসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)। (খ) কেবলমাত্র পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ ফিরালেই সৎকাজ নয়, প্রকৃত সৎকাজ করল ওই ব্যক্তি যে আল্লাহর প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি, ফিরিস্তামন্ডলীর প্রতি, কিতাবসমূহের প্রতি, রাসূলগণের প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা বাকারাহ : ১৭৭)। (গ) হাদিসে জিব্রাঈলে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : ঈমান হলো : আল্লাহর প্রতি, ফিরিস্তামন্ডলীর প্রতি, কিতাবসমূহের প্রতি, রাসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১ পৃ. ১২)
এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, ফিরিস্তার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী ব্যক্তি ইসলামী দায়েরা হতে বহিষ্কৃত। তার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্কই অবশিষ্ট নেই। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) আল্লাহপাক, তার ফিরিস্তামন্ডলী, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ এবং শেষ দিবসকে যে অস্বীকার করে সে দূরতম পথ ভ্রষ্টতায় নিপতিত হলো। (সূরা আন নিসা : আয়াত ১৩৬)। (গ) হাদিসে জিব্রাঈলে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা.কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দিলেন, ঈমান হলো আল্লাহ, তাঁর ফিরিস্তাকুল, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, শেষ দিবসের প্রতি ও তাকদিরের ভালো-মন্দের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ১২ দ্রষ্টব্য)। বস্তুত এটি এমন একটি নীতিমালা যার ওপর নবী ও রাসূলগণ ঐকমত্য পোষণ করছেন। আর একথা সত্যি যে, রাসূলগণের অনুসরণ ছাড়া কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না। (আকীদায়ে তাহাবিয়্যাহ মায়াস শরহে : পৃ. ৩৩২-৩৩৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।