Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ বন্যার পদধ্বনি

চীন-নেপাল-ভারতে অতিবৃষ্টি : উজান থেকে নামছে ঢল যমুনায় পানি বৃদ্ধি গত ৩২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ : প্রধান নদ-নদী কয়েক দফা ফুঁসে ওঠার শঙ্কা : মারাত্মক হতে পারে নদী ভাঙন : পাহাড়ধস দুর্যো

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

ধেয়ে আসছে ভয়াবহ বন্যা। টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের প্রধান নদ নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি ইতোমধ্যে গত ৩২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় জুন মাসে যমুনায় যে পরিমাণ পানি ছিল এবার তার চেয়েও বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সেই ’৮৮ সালের চেয়েও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ছাড়াও তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, কংসসহ আরও অন্যান্য নদ নদীর পানিও বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। ঘর-বাড়ি, জমি জমা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম, সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম সিরাজী, নেত্রকোণা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ, কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবুর পাঠানো রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তাদের তথ্যের আলোকে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।

করোনা মহামারী দুর্যোগের ভেতরেই বন্যায় কবলিত হতে পারে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এমনটাই মনে করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে মারাত্মক নদীভাঙনের করাল গ্রাসে পড়বে বিভিন্ন নদ-নদী সংলগ্ন শহর-গ্রাম-জনপদ। এ বছর মৌসুমী বায়ু আগাম সক্রিয় হওয়ার ফলে উজানে ভারতে আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে বর্ষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এতে সেখানে বন্যার আলামত ফুটে উঠছে।

ভারতের ওই সব অঞ্চলের পানি ভাটির দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশে নেমে আসায় এবং বৃষ্টিúাতও বেশি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। গত মে মাসে দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুন-জুলাই-আগস্টেও সম্ভাবনা অতিবৃষ্টির। তাছাড়া পরপর এই তিন মাসেই বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী নিম্নচাপের আভাস রয়েছে। এরফলে দেশে অধিক বৃষ্টিপাত হবে। এ মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ঘনঘোর মেঘমালা।

পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, এ সময়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদনদীর পানি বৃদ্ধি এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবিরাম ভারি বর্ষণ হলে গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা অববাহিকায় একযোগে পানি বৃদ্ধি ঘটে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। এবারও সে রকম বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ জন্য সার্বিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো যথাযথ মেরামত করতে হবে। যে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে তা মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবশ্যই আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে।

চলতি জুন মাস থেকে আগস্ট এমনকি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে দুই থেকে তিন দফায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক মতিগতি ভয়াল বন্যার অশনি সঙ্কেতই দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ু সংস্থা-নেটওয়ার্ক সূত্রগুলো জানায়, এবার বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ু আগাম জেঁকে বসেছে বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ এশিয়ার বিশাল অঞ্চলজুড়ে। বিরাজ করছে দীর্ঘ বর্ষা-বলয়। চীন, নেপাল, ভারতে অতিবৃষ্টিতে প্রচন্ড ঢল-বানের পানি ধেয়ে আসতে পারে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকেই। আবার যোগ হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ ভারী বর্ষণের পানিপ্রবাহ। এতে করে আষাঢ় থেকে ভাদ্র (জুন-আগস্ট) এমনকি সেপ্টেম্বরেও দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহ দুই তিন দফা ফুঁসে উঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বর্ষার ভিন্ন আচরণে হঠাৎ নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলওয়ারি অতিভারী বর্ষণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছর যাবৎ। এ কারণে পাহাড়ধস দুর্যোগের মুখোমুখি পড়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল। এ মাসে পাহাড়ি ঢলে পার্বত্য চট্টগাম, চট্টগ্রাম, ফেনী অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা। একই কারণে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতার শঙ্কা প্রকট।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল আগামী ১০ দিনের অন্তবর্তী সম্ভাব্য পূর্বাভাস প্রদান করেছে। এতে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল আজ থেকে বাড়তে পারে। আগামী ১০ দিন এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে নদ-নদীর পানির সমতল কোন কোন জায়গায় এক মিটারের মধ্যে চলে আসতে পারে। আপাতত আগামী ১০ দিনে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর অববাহিকায় বন্যা হওয়ার (বিপদসীমা অতিক্রমের) আশঙ্কা নেই। এ সময়ে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়তে পারে। আপাতত এই অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই।

ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানির সমতল কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও আপাতত বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া জানান, দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা বজায় থাকতে পারে।

প্রমত্তা যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে ফুলে ফেপে উঠেছে। ক্রমেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদী যৌবন প্রাপ্ত হচ্ছে। হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। যমুনার তর্জন-গর্জনে নদী পাড়ের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, কখন নদী ভাঙনে সব বিলীন হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে এলাকাবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল লতিফ জানান, যমুনা নদীতে পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৫ জুনের পর যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই এলাকার বিভিন্ন বাঁধ হুমকির মুখে। এলাকাবাসীর মতে, এ যাবৎ বাঁধ নির্মাণে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা কাঁচাটাকায় বা কয়েন করে বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেললে যমুনা নদীই ভরে যেত।

ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার প্রধান প্রধান নদ-নদী কংশ, মগড়া, সুমেশ্বরী, উব্দাখালী ও ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কংশ নদীর জারিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমা হচ্ছে ১০.৫৫ মিটার। এর মধ্যে গতকাল দুপুর ১২টায় ৮.৬৫ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারতের উজানে টানা বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে হাতিয়া গ্রাম, নীরকন্ঠ, পালের ঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে অর্ধশতাধিক বাড়িঘরসহ চলতি মাসেই গৃহহীন হয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে চাতালপাড় চকবাজার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে ওই গ্রামের প্রায় ১০০ বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।



 

Show all comments
  • Md Manik ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাদেরকে বন্যা থেকে রক্ষা করেন আল্লাহ আমাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করো আল্লাহ আল্লাহ ছাড়া নাই কোন আর মাবুদ একমাত্র আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করতে সবাই আপনার কাছে দোয়া করেন আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করো আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Shamsul Haque ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    O Allah, forgive us all, protect us all from the all kinds of natural disasters
    Total Reply(0) Reply
  • রিয়াদ হাসান ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    সবাই আল্লাহর কাছে দুয়া প্রার্থনা করেন। ইবাদত করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mashud Rana ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করবেন
    Total Reply(0) Reply
  • Bodrul Islam ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ আমাদের সবাই কে হেফাজত করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • আশেক এলাহী ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    আমিন মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sojib ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    বেশি বেশি করে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন। তিনি যেন আমাদেরকে হেফাজত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Amin ১৬ জুন, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
    লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাল জোয়ালিমিন
    Total Reply(0) Reply
  • ash ১৬ জুন, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
    AKTU COMMONSENSE USE KORLLE E AI TIR VAGGA BORTOMAN KHOROCHER CHEA ( I MEAN BLOCK BALU MATI R CHEA) ORDHEK KHOROCHE ONTOTO 30 BOSORER JONNY ROKHA KORA SHOMVOB ! KINTU SHETA BANGLADESH E KORCHE NA, BANGLADESHER MOGOJE OI BLOCK JE DUKESE BASSSS , PROTIBOSOR VAGGE ABAR BLOCK BOSHAY ABAR VAGGE ABAR BLOCK BOSAHY BASSS
    Total Reply(0) Reply
  • Syeed md Imran Hossain ১৬ জুন, ২০২০, ৫:১৪ এএম says : 0
    Moha durvikkho ashtey choleyche eker por ek durjog imam mahdi(a) ashar alamot.Allah tala Amader Hefajot koruk.mahdi a er doley chine sekhane shorik houar toufik dan koruk amin
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Hossain ১৬ জুন, ২০২০, ২:০৪ পিএম says : 0
    আমরা প্রত্যেকে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ফরিয়াদ করি,যেন আমাদের কে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করে। দোয়া করি ও এস্তেগফার করি বেশি বেশি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াবহ

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ